জনকণ্ঠ : আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম কমানো হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তা না হলে দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই জানিয়ে ট্যারিফ কমিশনে আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েই ইতোমধ্যে ভোজ্যতেলের দাম লিটারপ্রতি ৯ থেকে ১১ টাকা এবং চিনির দাম প্রতিকেজিতে প্রায় ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রতিবছর বাড়ছে। বেড়েছে চিনির ব্যবহার। কয়েকটি নির্ভরযোগ্য তথ্যমতে, প্রতিবছর দেশে ভোজ্যতেলের ৩০ লাখ টন এবং চিনির ২৪ লাখ টন চাহিদা রয়েছে। যদিও ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেল ও সাড়ে ১৭ লাখ টন চিনির চাহিদার কথা বলা হয়। চাহিদা মেটাতে ৯০ শতাংশ ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানি করা হয়। ভোজ্যতেল ও চিনির একটি বড় অংশ ব্যবহার হয় রমজানে। ইফতার সামগ্রী তৈরিতে ভোজ্যতেল ও চিনির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ওইসময় অতিরিক্ত ২ লাখ টন করে ভোজ্যতেল ও চিনির চাহিদা তৈরি হয়।
পুরোপুরি আমদানি নির্ভর হওয়ায় রাজস্ব আয় বাড়াতে চলতি বাজেটে ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ছে, অন্যদিকে দেশীয় শিল্প সুরক্ষা হচ্ছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু সরকারের চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন আখ থেকে যে চিনি উৎপাদন করছে তা ভর্তুকি দিয়ে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিবছর এখাতে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এ কারণে চিনি উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন বলেন, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আর যাতে না বাড়ে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। সামনে রমজান মাস ওই সময় বাজার স্বাভাবিক রাখতে সবরকম উদ্যোগ সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের এই দাবি কতটুকু যৌক্তিক সে বিষয়ে সমীক্ষা করছে ট্যারিফ কমিশন। শুল্ক আরোপের কারণে যদি দাম বাড়ে সেক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তা প্রত্যাহার কিংবা সমন্বয়ের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করা হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বাজেটে অপরিশোধিত চিনির টনপ্রতি আমদানি শুল্ক ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়। আবার নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ৩০ শতাংশ। পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক দেড়হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্টে চিনি আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য (ট্যারিফ ভ্যালু) টনপ্রতি ৩২০ ডলার নির্ধারণ করে এর ওপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরে ডিসেম্বরে ট্যারিফ ভ্যালু বাড়িয়ে টনপ্রতি ৩৫০ ডলার করা হয়। আগে থেকে প্রতিটন চিনিতে আমদানি শুল্ক ২ হাজার টাকা ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক-ভ্যাট) ছিল ১৫ শতাংশ। আমদানিকারকদের দাবি, এর বাইরেও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এটি) আরোপ করা হয়েছে নতুন বাজেটে। অনুলিখন : মাজহারুল ইসলাম, সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব
আপনার মতামত লিখুন :