শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১১ জানুয়ারী, ২০২০, ০৪:৫৯ সকাল
আপডেট : ১১ জানুয়ারী, ২০২০, ০৪:৫৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আধুনিক নিউরো সায়েন্টিস্টরা গবেষণায় দেখেছেন যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিকটিম প্রতিরোধ করা তো দূরের কথা, এমনকি চিৎকারও করতে পারেন না, মজনু যতোই লো আই-কিউ সম্পন্ন মানুষ হোক না কেন, সে তার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ভিকটিমদের ‘অবশ’, ‘বিবশ’ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভালোমতই অবগত ছিলো, এজন্যই নির্দ্বিধায় ফুটপাথে আক্রমণ করেছিলো

একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের লেখা, সুকন্যা আমিরের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত

একজন বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অসংখ্য রেপিস্ট এবং ভিক্টিমের জবানবন্দি আমি গ্রহণ করেছি। তাছাড়া আমার একাডেমিক পড়াশোনাও ঈৎরসরহড়ষড়মু এবং ঈৎরসরহধষ চংুপযড়ষড়মু নিয়ে। পেশাগত এবং একাডেমিক অভিজ্ঞতা থেকে আমি জধঢ়ব, জধঢ়রংঃ, ঠরপঃরস এবং এই সম্পর্কে গণমনস্তত্ত্ব বিষয়ে কিছু লেখা প্রয়োজন মনে করেছি বলেই এই দীর্ঘ লেখা। কুর্মিটোলা রেপ মামলার রেপিস্ট ধরা পড়েছে। তার নাম মজনু, সে একজন ভবঘুরে, মাদকাসক্ত, অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন (ষড়ি ওছ, ওফরড়ঃরপ), রেললাইনের পাশের খুপড়িতে থাকা, শীর্ণকায় যুবক। এই আসামি ধরা পড়ার আগে থেকেই বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে ভিক্টিম বলেছিলো অপরাধীটার বয়স ২৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে, অপরাধীটার গায়ের রং শ্যামলা, অপরাধীটার উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, চুল ছোট করে কাটা, অপরাধীটার পরনে ময়লা প্যান্ট এবং পুরনো জ্যাকেট ছিলো, ভিক্টিম আরও বলেছে অপরাধীটার সামনের দুইটা দাত নেই। এই সবই ধরা পড়া অপরাধীটার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। ভিকটিম আরও বলেছিলেন যে অপরাধীটা তার মোবাইল এবং ২০০০ টাকা নিয়ে গেছে। তার পোশাকের বিবরণ এবং মোবাইল ও ২০০০ টাকা নিয়ে যাওয়া ইঙ্গিত করে যে সে ছ্যাচ্ছর স্বভাবের, দরিদ্র এবং ছিনতাইকারীও বটে। সে যে রকম রসঢ়ঁষংরাব বা প্রবৃত্তিতাড়িত এবং যে রকম এলোমেলোভাবে ক্রাইম সিনটি (ঈৎরসব ংপবহব) রেখে গেছে এবং যে রকম চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজটা করেছে তাতেও অনুমান করা যায় যে সে অশিক্ষিত, লো আইকিউসম্পন্ন এবং অগোছালো প্রকৃতির কোনো অপরাধী হবে। এসবও ধরা পড়া মজনুর সঙ্গে মিলে যায়। তাছাড়া অপরাধীটার কাছ থেকে ভিক্টিমের মোবাইল ও চার্জার ও উদ্ধার হয়েছে। ভিক্টিম বলেছিলো অপরাধীটি খুব দাম্ভিক ছিলো। দাম্ভিক মানে সে খুব পাওয়ার/কন্ট্রোল/ডমিনেশান শো করেছিলো। সব রেপিস্টরাই এটা করে। বলতে গেলে সব অপরাধীরাই এটা করে, এমনকি একজন ছিঁচকে ছিনতাইকারীও যখন ছিনতাই করে তখন সেও খুব পাওয়ার এবং ডমিনেশন প্রদর্শন করে। এই পাওয়ারফুল ফিল করা হচ্ছে অপরাধীর আনন্দের একটা উৎস। ভিক্টিম বলেছিলো অপরাধীটি অনেক শক্তিশালী ছিলো, ভিক্টিম এ রকম বলেছে, কারণ অপরাধীটি শক্তি প্রয়োগ করেছিলো। ক্লান্ত, নার্ভাস এবং আক্রান্ত যেকোনো ভিক্টিমের কাছেই মনে হয় যে আক্রমণকারী ছিলো অনেক শক্তিশালী- এটাও স্বাভাবিক। এমনকি ভিক্টিম নিজেও দৃঢ় নিশ্চয়তার সঙ্গে অপরাধীকে দেখেই চিনেছে এবং শনাক্ত করেছে। তো সব কিছু মিলে যাওয়ার পরও এবং ভিক্টিম নিজে আইডেন্টিফাই করার পরও ফেসবুকবাসী কেন তার ছবি দেখে এতো অবাক/আশ্চর্য? কেন এতো অবিশ্বাস? এটা তো কোনো রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক অপরাধ নয় যে প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ষড়যন্ত্র হবে। তাহলে কেন এতো অবিশ্বাস? অপরাধীর ছবি প্রকাশ হওয়ার পর সারাদিন প্রকাশিত সংবাদের নিচে ফেসবুক গোয়েন্দাদের কমেন্ট পড়ে যা বুঝতে পারলাম তাহলো মোটামুটি দুটি কারণে ফেবুবাসী বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে এই সেই আসল অপরাধী। কারণ দুটি হলো : ১. ধরা পড়া মজনু-ফেসবুকবাসী যেমনটি আশা করেছিলেন সে রকম বলিষ্ঠ, ম্যাসকুলিন, ম্যানলি বা দেখতে দুর্ধর্ষ নয়। ২. এ রকম একজন শীর্ণকায় ব্যক্তি কি করে ভিক্টিমকে একা একা ফুটপাথ থেকে টেনে হিঁচড়ে/পাজাকোলা করে ঝোপে নিয়ে গেলো এবং ভিক্টিম কেন তাকে বাধা দিতে পারলো না সেইটাও ফেসবুকবাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছে না। ভাইয়েরা আমার। প্রথমেই বলে রাখি, সিনেমায় যে রকম দেখেন যে নায়িকাকে রেপিস্ট আক্রমণ করলে নায়িকা তারস্বরে চিৎকার শুরু করে ‘বাঁচাও বাঁচাও, ছেড়ে দে শয়তান’। বাস্তবে এমন ঘটে না। বাস্তবে কাউকে ংঁফফবহ/আচমকা আক্রমণ করা হলে আক্রান্ত ব্যক্তি স্থানু বা স্থবির হয়ে যায়, তার স্নায়ুতন্ত্র কাজ করে না, মাথা কাজ করে না, কি করা উচিত বুঝে উঠতে পারে না। ভিক্টিম প্রায় ‘বিবশ’/‘অবশ’ হয়ে যায়। মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় এটাকে বলে ঞড়হরপ রসসড়নরষরঃু বা খড়পধষ ঢ়ধৎধষুংরং। যারা ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন তারা হয়তো কেউ কেউ এই অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত আছেন। আধুনিক নিউরো সায়েন্টিস্টরা গবেষণা করে দেখেছেন যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিক্টিম প্রতিরোধ করা তো দূরের কথাÑ এমনকি চিৎকারও করতে পারেন না। ধরা পড়া মজনু যতোই লো আইকিউসম্পন্ন লোক হোক না কেন, সে তার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ভিক্টিমদের এই ‘অবশ’/ ‘বিবশ’ প্রতিক্রিয়া (ঞড়হরপ রসসড়নরষরঃু) সম্পর্কে ভালোমতোই অবগত ছিলো, এ জন্যই সে নিদ্বির্ধায় ফুটপাথে আক্রমণ করেছিলো। কুর্মিটোলা ভিক্টিমকে অপরাধীটি পেছন থেকে আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গেই ভিক্টিম অবশ হয়ে যায়, সে সম্ভবত ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো। এবারে আসি অপরাধীটি দেখতে এ রকম চোরের মতো কেন বা শৌর্যেবীর্যে বলীয়ান, মহাম্যাসকুলিন, বলশালী ও সেই রকম শক্তপোক্ত ‘আসল পুরুষের’ মতো দেখতে নয় বলে যারা সন্দেহ করছেন তাদের ব্যাপারে। রেপিস্টদের নিয়ে ঋইও দীর্ঘদিন গবেষণা করে রেপিস্টদের একটা টাইপোলজি/প্রোফাইলিং (প্রকারভেদ) করেছে। রেপিস্টদের ঃবংঃড়ংঃবৎড়হব বা সধষব যড়ৎসড়হব বেশি বা রেপিস্টরা অতিমাত্রায় সেক্সি এ রকম কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বরং উল্টোটারই প্রমাণ পাওয়া গেছে বেশি। বেশিরভাগ রেপিস্টরাই আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে, অনেকেই ধ্বজভঙ্গ বা বৎবপঃরষব ফুংভঁহপঃরড়হ এ ভোগে, বেশিরভাগ রেপিস্টরাই নিজের যৌন জীবন নিয়ে হতাশ। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত বলা দরকার। রেপিস্ট আছে চার রকমের যথা : ১. ঝধফরংঃরপ ২. অহমবৎ জবঃধষরধঃড়ৎু ৩. চড়বিৎ অংংবৎঃরাব ৪. চড়বিৎ জবধংংঁৎধহপব। ঝধফরংঃরপ রেপিস্টরা যৌন আনন্দ লাভ করার জন্য রেপ করে না। সে রেপ করে ভিক্টিমকে টর্চার করার জন্য। সে মূলত ভিক্টিমের সাফারিং/যন্ত্রণা/হিউমিলিয়েশান উপভোগ করে। এই ধরনের রেপিস্টরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের ভিক্টিমকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ফেলে বা চরম যন্ত্রণা যেমন সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়া বা হাত পা, স্তন, যোনিপথ কেটে ফেলা এসব করে আনন্দ লাভ করে। তবে এ রকম ঝধফরংঃরপ রেপিস্টের সংখ্যা পৃথিবীর মোট রেপিস্টদের মাত্র ৪ বা ৫ শতাংশ। হরর মুভিতে বা রিভেঞ্জ মুভিতে এই ধরনের রেপিস্টদের বেশি দেখানো হয় বলে সাধারণভাবে মানুষ মনে করে রেপিস্ট মাত্রই স্যাডিস্টিক রেপিস্ট। দ্বিতীয় টাইপটি হচ্ছে অহমবৎ জবঃধষরধঃড়ৎু রেপিস্ট। তারাও যৌন আনন্দের আশায় রেপ করে না। এই টাইপের রেপিস্টদের বেশিরভাগেরই নিজেদেরই শৈশবে নির্যাতিত হওয়ার ইতিহাস আছে। তারা বেশিরভাগই ছোটবেলায় মায়ের হাতে বা দাদীর হাতে বা চাচি বা বড় বোনের হাতে প্রচ- মারধরের বা এবিউজের শিকার হয়েছিলো (পযরষফযড়ড়ফ ধনঁংব নু সড়ঃযবৎ ড়ৎ সড়ঃযবৎ ভরমঁৎব ড়িসবহ)। সেই থেকে তারা নিজের অবচেতন মনে পৃথিবীর সব নারীর প্রতি তীব্র ঘৃণা এবং বিদ্বেষ লালন করে। এদের অনেকেই হয়তো নিজেই জানে না যে সে নিজের অবচেতনে পৃথিবীর সব নারীর প্রতি এ রকম যড়ংঃরষরঃু ( ঘৃণা/বিদ্বেষ) বহন করে বেড়াচ্ছে। তারা রেপ করে নিজের এই রাগ/বিদ্বেষ চরিতার্থ করার জন্য। প্রতিশোধ নেবার মতো একটা বিকৃত আনন্দ তারা পায় ধর্ষণ করে। এই প্রকারের রেপিস্টরাও তাদের ভিক্টিমের সাফারিং/অপমান/যন্ত্রণা উপভোগ করে প্রতিশোধের আনন্দ পায়। তাদের সংখ্যাও ১০ থেকে ১৫ পারসেন্ট। তৃতীয় প্রকারটি হচ্ছে চড়বিৎ অংংবৎঃরাব রেপিস্ট। তারা মূলত রেপ করে নিজেকে ক্ষমতাবান ফিল করার জন্য। নিজেকে ক্ষমতাবান ফিল করার বিকৃততম ও সহজতম উপায় হচ্ছে অন্যকে অপমান করা। তাদের কাছে এই ক্ষমতাবান ফিল করার অংশ হচ্ছে রেপ করা। ঞযবু ৎধঢ়ব নবপধঁংব ঃযধঃং যড়ি ঃযবু ভববষ ঃযধঃ ঃযবু ধৎব ঢ়ড়বিৎভঁষ, ঃযধঃ ঃযবু পধহ ৎধঢ়ব ড়ৎ ফড় যিধঃবাবৎ ঃযবু ধিহঃ ঃড়। তাদের চলাফেরায় দেখবেন একটা অতিরিক্ত গাজোয়ারি ভাব আছে, অতিরিক্ত ব্যাটাগিরি দেখানোর প্রবণতা আছে, নিজেকে ম্যাচো গাই (সধপযড় মুঁ) বা টাফ গাই দেখানোর একটা প্রবণতা আছে তাদের মধ্যে। প্রকৃতপক্ষে তারাও ভিতরে ভিতরে ইনসিকিউরড বলেই এ রকম ওভার পাওয়ারফুল ভাব নেয়ার চেষ্টায় থাকে। এই প্রজাতির পুরুষেরা বন্ধুর সঙ্গে হ্যান্ডশেইক করার সময়ও প্রয়োজনের চেয়ে জোরে হাতে চাপ দেবে। ‘কি দোস্ত কেমন আছিস’ বলে বন্ধুর পিঠে চাপড় দেয়ার সময়ও তারা অন্যদের চেয়ে জোরে চাপড় দেবে। তারা সাধারণত স্কুলে বা কলেজে বা ভার্সিটিতে বুলি/ নঁষষু টাইপের হয়। তবে তাদের সংখ্যাও ১০ পারসেন্টে র বেশি নয়।
সব শেষে, বেশিরভাগ প্রায় ৭৫ শতাংশ রেপিস্টরাই হচ্ছে চড়বিৎ জবধংংঁৎধহপব টাইপের। তারা মূলত নিজের ম্যাসকুলিনিটি বা পৌরুষ নিয়ে আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ংড়পরধষষু ধধিশধিৎফ হয়, চার্মিং পারসোনালিটির অভাবে বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক তারা বন্ধুমহলেও তেমন একটা জনপ্রিয় নয়। হয়তো ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ও সহপাঠী মেয়েরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। সব মিলিয়ে সে মূলত একজন ইনসিকিউরড এবং আত্মবিশ্বাসহীন ব্যক্তি। তার ধারণা সে নারীদের কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয় এবং চিত্তাকর্ষক নয়, মেয়েরা কেন তাকে পছন্দ করে না এই নিয়ে সে পৃথিবীর সব নারীর উপর কিছুটা ক্ষিপ্ত এবং নিজের প্রতি কিছুটা হতাশও বটে, তার সন্দেহ হয় যে ‘ও সধু হড়ঃ নব সধহ বহড়ঁময ঃড় পড়হয়ঁবৎ ড়িসবহ ঃযধঃ ও ফবংবৎাব’, এই রুঢ় বাস্তবতাটা সে আবার মেনেও নিতে পারে না। এই বিপরীতমুখী আবেগের অত্যাচারে সে নিজের সঙ্গেই নিজে দগ্ধ হতে থাকে। মোটাদাগে দুইটা ভ্রান্ত ধারণায় (রষষঁংরড়হ) সে ভুগতে থাকে, যথা : ১. আমি আসলে যোগ্য এবং ম্যানলি তবে মাঝে মাঝে মনে হয় আমি হয়তো যথেষ্ট ম্যানলি বা আকর্ষণীয় নই, তবে সুযোগ পেলে একদিন দেখিয়ে দিতাম ২. মেয়েরা মুখে যতোই না বলুক আসলে একবার মেয়েদের কাবু করতে পারলে নারীরা আসলে রেপ উপভোগই করবে (ইভটিজিং করলে মনে মনে মেয়েরা খুশি হয় এ রকম একটা বাংলা ফেসবুক পেজে প্রায় ২ লাখ লাইক/ফলোয়ার ছিলোÑ পেজটা এখন আর নেই)। যা হোক, নিজের পৌরুষ নিয়ে অনিশ্চয়তা / ইনসিকিউরিটি থেকে সে কোনো নারীকে রেপ করে নিজের পৌরুষ জাহির করতে চায়। কার কাছে সে এই পৌরুষ জাহির করে? নিজের কাছেই। সে ৎবধংংঁৎব হতে চায় নিজের কাছে। এ জন্য এই টাইপের রেপিস্টদের নাম ঢ়ড়বিৎ ৎবধংংঁৎধহপব. প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবেই এই ধরনের রেপিস্টরা আক্রমণ করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভিক্টিম যথা বাসার কাজের মেয়ে, গার্মেন্ট কর্মী, দুর্বল পথচারী, প্রতিবন্ধী নারী, নিজের বাসার ভাড়াটিয়া, প্রবাসীর স্ত্রী, নিজের ছাত্রী, ভিখেরি বা ভাসমান নারী এবং কম বয়সী শিশু বা ভালনারেবল ভিক্টিমদের। এই প্রজাতির রেপিস্টদের সংখ্যা মোট রেপিস্টদের প্রায় ৭৫ শতাংশ।
কুর্মিটোলা রেপ কেসের ধৃত মজনু হচ্ছে এই প্রজাতির (চড়বিৎ জবধংংঁৎধহপব) রেপিস্ট। নিজের পৌরুষ সম্পর্কে অনিশ্চিত, ইনসিকিউরড এবং আত্মবিশ্বাসহীন রেপিস্টদের সংখ্যা যদিও মোট রেপিস্টদের ৭৫ শতাংশ তবুও কোনো এক অজানা কারণে আমাদের দেশের অনেকের ধারণা রেপিস্ট মানেই বাহুবলি টাইপের দুর্ধর্ষ, বলশালীÑ সেই রকম ম্যাসকুলিন কোনো পুরুষ। কি অদ্ভুত বৈপরিত্য। হাজার হাজার, লাখ লাখ বাংলাদেশি ফেসবুক ইউজারের চিন্তাভাবনা চড়বিৎ জবধংংঁৎধহপব রেপিস্টের চিন্তাধারার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়Ñ এটা যে কতো বড় দুঃসংবাদ তা কি আমরা অনুধাবন করতে পারছি? এখন মিলিওন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে রেপিস্ট কেন ভাবা শুরু করলো যে কাউকে রেপ করতে পারলে নিজেকে ‘আসল পুরুষ’ / ৎবধষ সধহ বা পাওয়ারফুল পুরুষ হিসেবে জাহির করা যাবে? কেনইবা সে তার ম্যাসকুলিনিটি ৎবধংংঁৎব করার জন্য রেপ করা আবশ্যক মর্মে ভেবে নিলো? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে সম্প্রতি সারাদিনের সংবাদের নিচে আমাদের বঙ্গীয় ফেসবুকবাসীর কমেন্ট পড়লে। হাজারে হাজারে, লাখে লাখে কমেন্ট দেখলাম যারা কমেন্টে তাদের বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছেন রেপিস্ট মজনুর ছবি দেখে। এই কমেন্টকারীদের মাথার ভিতর রেপিস্টের ছবি আঁকা আছে বলশালী, বলিষ্ঠ, তেজী, সেই রকম ম্যাসকুলিন কে নো পুরুষ হিসেবে। এই কমেন্টকারীরা বেশিরভাগই নিজেরাই নিজেদের পৌরুষ নিয়ে ইনসিকিওরিটিতে ভুগছেন এবং অনুকূল পরিবেশ এবং সুযোগ পেলে নিজের গার্লফ্রেন্ড বা স্ত্রী বা পাশের বাসার মেয়েটির উপর চড়াও হয়ে নিজের ম্যাসকুলিনিটি রিএশিওর করে নেবেন। আফটার অল, কে না চায় নিজেকে বলশালী, ডিজার্ভিং, তেজী এবং ম্যানলি হিসেবে নিজের কাছে জাহির করতে। প্রিয় ফেসবুকবাসীরা, ধরা পড়া মজনু যে আসলেই অপরাধী তা ভিক্টিম নিজেই নিশ্চিত করেছেন। বেশিরভাগ (অন্তত ঢ়ড়বিৎ ৎবধংংঁৎধহপব টাইপের ৭৫ শতাংশ) রেপিস্টরাই এ রকম দুর্বল চরিত্রের, আত্মবিশ্বাসহীন এবং লো আইকিউসম্পন্ন হয়ে থাকে। মজনু যে আসলেই অপরাধী তা নিয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই, তবে মজনুকে দেখে যারা হতাশ হয়েছেন তাদের নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে, যথাসময়ে এবং যথাযথ সুযোগ পেলে নিজেকে ৎবধংংঁৎব করার জন্য আপনারাও তেজী ও বলশালী এবং ম্যানলি হয়ে উঠার ট্রাই করবেন বলে আমার সন্দেহ হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়