স্বপন দেব, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় পরিবেশ রক্ষা আইন অমান্য করে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানার টিলা কাটার যেনো মহোৎসব চলছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একটি প্রভাবশালী চক্র নির্বিচারে টিলা ও গাছপালা কেটে অবাধে বিক্রি করছে।

সরকারি অবকাঠামো তৈরির কাজে বিট বালু ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ ঠিকাদাররা প্রশাসনের নাকের ডগায় রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন কাজে প্রাকৃতিক টিলার মাটি ব্যবহার করছে। আর অবাধে পাহাড়-টিলা ও গাছ কাটার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, জেলার বড়লেখা উপজেলার পূর্বদিকের পাথারিয়া পাহাড় ঘেঁষা জনপদে অসংখ্য প্রাকৃতিক টিলা ভুমি রয়েছে। আর এ টিলায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বসবাস করে। পাহাড়ি মাটি বিক্রি করে অল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে প্রভাবশালী মহলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে এসব প্রাকৃতিক টিলার ওপর। তাই তারা নির্বিচারে টিলা কেটে চলছে। পরিবেশ রক্ষা আইনে উল্লেখ রয়েছে সরকারি কিংবা বেসরকারি মালিকানাধীন কোন ধরনেরই টিলা কাটা যাবে না।

কিন্তু প্রভাবশালী মহলটি অবাধে পাহাড় টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে অল্প দিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না। মাঝে মাধ্যে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ২-৪টি জন ট্রাক্টর চালক ও মাটি শ্রমিককে আটক করে জরিমানা আদায় করেই দায় সারছেন। অথচ টিলাখেকো মুল হোতারা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির মোহাম্মদ নগর, পূর্ব চন্ডিনগর, ইসলাম নগর, লেচুবাগানের আব্দুস সবুরের বাড়ি, রহমানিয়া চা বাগানের টিলা, উত্তর শাহবাজপুর ইউপির আতুয়া, কুমারশাইল, পুর্বদৌলতপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে অবাধে টিলা কাটা চলছে। একেকটি টিলায় প্রতিদিন ৪-৫টি ট্রাক্টর লাগিয়ে মাটি পাচার করা হচ্ছে।

আতুয়া গ্রামের মৃত তরিক আলীর ছেলে বাহার মিয়ার বিশাল টিলায় ৪টি ট্রাক্টর ও ১০-১৫ জন মাটি শ্রমিককে নির্বিচারে টিলা কাটতে দেখা গেছে। ট্রাক্টর চালক সারুক আহমদ, বছন মিয়া, আব্দুস সত্তার, ফজলু মিয়া জানান, সাবেক ইউপি মেম্বার আব্দুস সহিদ ছানু টিলার মালিক বাহার মিয়ার নিকট থেকে টিলা কাটার ঠিকাদারী নিয়েছেন।

তিনি বিভিন্ন জায়গায় মাটি বিক্রি করছেন। গত ৪-৫ মাস ধরে এ টিলা কাটা চলছে বলে স্থানীয়রা জানান। বড়লেখার ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান জানান, টিলা কাটা রোধে তিনি প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তা অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই জড়িতরা সটকে পড়ে।

সরকারি রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন কাজে টিলার মাটি ব্যবহার না করতে ঠিকাদারদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছেন। এছাড়া টিলা কাটা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে তিনি অনুরোধ করেছেন। সম্পাদনা:জেরিন