নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বনানী স্টেশন পর্যন্ত কলাম স্থাপন হয়ে গেছে। এ প্রকল্পের বেশিরভাগ অংশে পিলার স্থাপন হচ্ছে রেললাইন ঘিরে। রেলপথের ওপর চলবে সড়কযান। দৈনিক আমাদের সময়
প্রকল্প বাস্তবায়নের এ পর্যায়ে বলা হচ্ছে, উচ্চতা বাড়াতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে এ রেলপথ ঘিরে উঁচু ট্রেন চলতে পারে এবং দুর্ঘটনা ঘটলে রিলিফ ট্রেনের জন্য অধিক উচ্চতা দরকার। তবে উচ্চতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হলে নির্মাণাধীন অংশ ভাঙতে হবে। তা মানতে নারাজ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই কোম্পানি লিমিটেড। ফলে বেশ জটিলতা তৈরি হয়েছে এ উড়াল সড়ককে কেন্দ্র করে।
এ ছাড়া প্রকল্পে সময়মতো জমি বুঝিয়ে দেওয়া নিয়েও সমস্যা তৈরি হতে পারে। এতে চুক্তি অনুযায়ী দিনে ১০ হাজার ডলার ঠিকাদারকে দিতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে। বিষয়টি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সেখানে রেলের পক্ষ থেকে ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ৮ মিটারের বেশি রাখার যুক্তি দেখানো হয়। আর সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, ৭.২ মিটার করা হয়েছে আলোচনার ভিত্তিতেই। উচ্চতা বাড়ানোর ব্যাপারে নতুন দাবি না করে আগে জানালে সমস্যা হতো না।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএম আকতার আমাদের সময়কে বলেন, উড়াল সড়কের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে অনেক কাজ হয়ে গেছে। তাই ভাঙার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর সমাধান হয়েছে।
তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ভবিষ্যতে ওই রেলপথে দ্বিতল ট্রেন চলতে পারে। তাই উচ্চতা বাড়াতে বলা হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর সেতু কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় ক্রসিং এলাকায় ন্যূনতম ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ৭.২ মিটার রাখা হবে। সে অনুযায়ী ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। এর পর গত বছরের ১৪ অক্টোবর এ সংক্রান্ত বৈঠকে বলা হয়, উড়াল সড়কের ১ম ধাপে ৮.৫ মিটারের কম হলে আলোচনা করতে হবে। এ নিয়ে প্রকল্পকর্তারা বলছেন, অন্য ফ্লাইওভারের ন্যূনতম ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স
যেমন, কুড়িল ফ্লাইওভার ৭.৪ মিটার, বনানী ওভারপাস ৬.৯ মিটার, মহাখালী ফ্লাইওভার ৭.৫ মিটার এবং র্যাংগস ফ্লাইওভার ৭.৬ মিটার রয়েছে। অথচ উড়াল সড়কের ন্যূনতম ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ৭.৫৩ মিটার এবং সর্বোচ্চ ৮.১৩ মিটার আছে। তবে ন্যূনতম ৮.৫ মিটার রাখতে হলে র্যাম্পের দৈর্ঘ্য বাড়বে।
উড়াল সড়ক প্রকল্পটি পিপিপির ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। র্যাম্প বাড়াতে হলে এ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে নতুন করে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বাড়বে প্রকল্প ব্যয়। ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স তির্যকভাবে ৮.৫ মিটার রাখার পক্ষে মত দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। কারণ দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধার কাজের জন্য এ ক্লিয়ারেন্স দরকার। এ নিয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হচ্ছে, নতুন করে ভাঙার পরিবর্তে ভবিষ্যতে ক্লিয়ারেন্স বাড়িয়ে নির্মাণকাজ করতে হবে।
তিন ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে উড়াল সড়ক প্রকল্পটি। ১ম ধাপে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বনানী স্টেশন পর্যন্ত, দ্বিতীয় ধাপ বনানী থেকে মগবাজার রেলক্রসিং এবং তৃতীয় ধাপ হচ্ছে মগবাজার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।
এ প্রকল্পের বেশিরভাগ অংশ রেলওয়ে, সওজ, সেনাবাহিনী, রাজউক, বেবিচক, সিটি করপোরেশল এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১ম ধাপের জমি হস্তান্তর হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের জমি ২০২০ সালের (চলতি বছর) ৩১ মার্চের মধ্যে বাধামুক্ত অবস্থায় হস্তান্তর করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী জমি বুঝিয়ে দিতে দেরি হলে সরকারের পক্ষ থেকে দৈনিক ১০ হাজার ডলার হিসেবে জরিমানা দিতে হবে বিনিয়োগকারীকে।
আপনার মতামত লিখুন :