শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ০৪ জানুয়ারী, ২০২০, ০৪:১৪ সকাল
আপডেট : ০৪ জানুয়ারী, ২০২০, ০৪:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খুনের মামলার চার্জশিটের ৫৫.৮৭ শতাংশ অভিযুক্তেরই নিম্ন আদালতে সাজা হয় না

নিউজ ডেস্ক : মাত্র ৪৪ দশমিক ১৩ শতাংশের সাজা নিশ্চিত হয়। বাকিরা নিম্ন আদালত থেকেই রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এমন উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে। সমকাল

সাধারণত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্তের পর অনেক বিচার-বিশ্নেষণ করেই যে কোনো মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। খুনের মামলার ক্ষেত্রে তদন্তের ব্যাপকতা আরও অনেক বেশি। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, চার্জশিটভুক্ত অধিকাংশ অভিযুক্তের সাজা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন? এ ক্ষেত্রে প্রথমেই সামনে এসেছে পুলিশি তদন্তের দুর্বলতার দিক। খুনের মতো ঘটনায় তদন্তের মান বাড়িয়ে অভিযুক্তদের সাজার হার আরও বাড়ানো না হলে সব ধরনের ঘটনাতেই ভিকটিম ও তার পরিবারের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। খুনের মামলায় সাজার হার বাড়াতে সাক্ষী নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রযুক্তিনির্ভর তদন্তের ওপর আরও জোর দিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।

এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সাক্ষীরা যেন তদন্তের সময় যে সাক্ষ্য দিয়েছেন সেটা বিচারের সময়ও দেন, এটা নিশ্চিত করা গেলেই সাজার হার বাড়বে। এটাও খেয়াল রাখতে হবে, নামকাওয়াস্তে কাউকে যাতে আসামি করা না হয়। নামকাওয়াস্তে আসামি হলে তো খালাস পাবেনই।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, মামলায় সাজা নিশ্চিত করার জন্য শুরুতেই তদন্ত সঠিকভাবে করতে হবে। এরপর বিচারের সময় সাক্ষ্য-প্রমাণ যথাযথভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। দেখা যায়, সাক্ষী আসে না বলে বারবার বিচার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়। খুব জরুরি না হলে বিচার কার্যক্রম মুলতবি করা ঠিক হবে না।

দেশে সাক্ষী সুরক্ষার তেমন কোনো আইন নেই। এ আইন থাকলে সাক্ষীদের উপস্থিতির হার বাড়বে, তাদের সাক্ষ্য প্রদানও সহজতর হবে। দেশে সার্বিকভাবে খুনের মামলার সাজার হার কম থাকলেও এরই মধ্যে তদন্তের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য দেখিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিছু ক্ষেত্রে তাদের ইউনিটের তদন্তাধীন মামলার সাজার হার শতভাগ। সম্প্রতি বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলার তদন্তভার পিবিআইর ওপর ন্যস্ত করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিবিআইর প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মামলায় সাজার হার নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে সাক্ষী নির্বাচনে পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে। শক্তিশালী সাক্ষী নির্বাচন না করলে যে কোনো সময় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারে। সাক্ষী নির্বাচনে দুর্বলতা থাকলে সাজার হার কম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটা ঠিক, তদন্তের পর্যায়ে সাক্ষী নির্বাচনের ক্ষেত্রে পুলিশের দুর্বলতা রয়েছে। যত চাপ ও ভয় আসুক না কেন, সঠিকভাবে তারা যাতে সাক্ষ্য দিতে পারেন, এটা নিশ্চিত করা দরকার। এ ছাড়া সাক্ষীর সঙ্গে প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়ে তার অপরাধ ও সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ তদন্ত কর্মকর্তা কাঙ্খিত মান নিশ্চিত করতে পারছেন না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তদন্তকাজে এ ধরনের দুর্বলতা দূর করা যায়। এ ছাড়া ভিকটিম পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে তাদের মানসিক যন্ত্রণাও উপলব্ধি করতে হবে।

মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, যে কোনো অপরাধী তার আলামত রেখে যাবেই। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে অপরাধ প্রমাণের অনেক পথ খোলা থাকে। কোনোভাবেই তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করা যাবে না। এটা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি সুবিধা পায়। আর ভিকটিমের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। অনেক সময় তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় ভিকটিম শেষ পর্যন্ত মামলা চালানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

খুনের মামলায় ত্রুটি, খুনের মামলায় তদন্তে পুলিশের পর্যালোচনায় বেশ কিছু ত্রুটির বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো- পর্যাপ্ত নিরপেক্ষ সাক্ষীর অভাব, ত্রুটিপূর্ণ জব্দ তালিকা, ক্রাইম সিন সঠিকভাবে সংরক্ষণে অদক্ষতা, ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণে অনীহা, আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে প্রেরণের বিষয়ে অজ্ঞতার অভাব, গৎবাঁধা সুপারভিশন নোট, মামলার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক আলামত সংগ্রহে অদক্ষতা, সিডিআর প্রাপ্তি এবং সেল বিশ্নেষণে বিলম্ব ও অদক্ষতা, ১৬১ ধারায় একই ধরনের জবানবন্দি রেকর্ড, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব ও সুপারভাইজিং কর্মকর্তার নিবিড় তদাকির অভাব।

তিন কারণে খুনের ঘটনা বেশি, পুলিশ সদরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সারাদেশে তিন কারণে খুনের ঘটনা বেশি ঘটছে। এসবের মধ্যে পারিবারিক কলহে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ, সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিরোধে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, পূর্বশত্রুতায় ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ খুন হয়ে থাকে। এ ছাড়া 'বন্দুকযুদ্ধে' ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ, এলাকায় আধিপত্য নিয়ে ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ, অপমৃত্যুতে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ, পরকীয়ার জেরে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ছিনতাইকারীর হাতে ৩ দশমিক ০৭ শতাংশ, পূর্বপরিকল্পিতভাবে ১ দশমিক ৮০ শতাংশ, গণপিটুনিতে ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, কথা কাটাকাটিতে ২ দশমিক ৪৪, পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ, অজ্ঞাত কারণে ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, অন্যান্য কারণে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ হত্যার ঘটনা ঘটছে। খুনের মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার হার ৭৪ দশমিক ০৫ শতাংশ।

খুনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে দেশে যত খুন হয়েছে, তার ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করা হয়। খুনের ঘটনায় ব্যবহূত মাত্র ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ৪৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ ঘটনায় দেশি অস্ত্র ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে হত্যা করা হয়েছে।

তদন্তে পুলিশের গাফিলতি, খুনের মামলার তদন্তে অনেক ক্ষেত্রে প্রায়ই গাফিলতির পরিচয় দেয় পুলিশ। অনেক সময় ভিকটিমের এজাহারও তারা বদলে দেয়। আবার খুনের অভিযোগ থাকলেও সেটিকে 'সড়ক দুর্ঘটনা' বা অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে সাজায়। তদন্ত সঠিকভাবে করতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেন আদালত। অনুলিখন : জহুরুল হক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়