শিরোনাম
◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলার নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ.লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা (ভিডিও) ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ফসফরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের

প্রকাশিত : ০৪ জানুয়ারী, ২০২০, ০৭:১০ সকাল
আপডেট : ০৪ জানুয়ারী, ২০২০, ০৭:১০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জিপিএ-৫ অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মত্ত আমরা আসলে কী করছি?

 

রাশেদা রওনক খান : আমেরিকায় পিএইচডির কোর্সওয়ার্ক সময়ে প্রথম বছর টিএ (টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট) শিপ শুরু করি। প্রথম ক্লাসের আগে আমার টিএ প্রফেসর আমার সঙ্গে এক ঘণ্টার জন্য মিটিং করলেন, যেখানে তিনি বলে দিয়েছেন আমাকে ক্লাসে কি কি করতে হবে, কীভাবে গ্রেডিং করতে হবে, কীভাবে তাদের সঙ্গে প্রেজেন্টেশন বা অ্যাসাইনমেন্ট ও রিসার্চ কাজে সাহায্য করতে হবে। তিনি কোনো কারণে ছুটি নিলে আমাকে কীভাবে ক্লাস নিতে হবে, তাদের সঙ্গে আমার আচরণ কি হবে, কীভাবে ক্লাসের নাজুক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে বা পরীক্ষার খাতায় কীভাবে কমেন্টস লিখতে হবে ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে বিষয়টিতে তাহলো আমি যখন তাদের পরীক্ষার খাতা বা অ্যাসাইনমেন্ট খাতা ফেরত দেবো তখন যেন ‘প্রাইভেসি রক্ষা’ করি। তাছাড়া এও জানালেন, ‘যেকোনো স্টুডেন্টের যেকোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আসবে, তোমার অফিস আওয়ারে। যাই বলবে শেয়ার করবে না, তা অতি গোপনীয় রাখবে, এমনকি প্রয়োজন না হলে আমাকেও জানাবে না। এটা একান্তই তোমার এবং স্টুডেন্টের মাঝে ক্লাস/পড়ালেখা/পরীক্ষা সংক্রান্ত আলোচনা’। আজকের বিষয়টা মূলত এই ‘প্রাইভেসি রক্ষা’ নিয়ে।

যা হোক, আমি আমার প্রথম টিএ ক্লাসে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টের খাতা দেখে যখন ক্লাসে একেক শিক্ষার্থীর কাছে গিয়ে খাতা ফেরত দিচ্ছিলাম অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম তারা খাতাটা খুলেও দেখে না কতো পেয়েছে, হয়তো বাসায় গিয়ে দেখবে। আর পাশের ফ্রেন্ড তো দেখা দূরের কথা। আমি প্রফেসরকে ক্লাস হতে বের হয়ে বিষয়টা শেয়ার করতেই ও হেসে দিয়ে বললো, ‘আমেরিকানরা পরীক্ষায় খাতায় কতো পেলো তা নিয়ে অতোটা অস্থির নয়, এই খাতা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, এখান থেকে বের হয়ে তাকে সময়মতো কাজে (যেখানে সে চাকরি করে ওখানে) ঢুকতে হবে, সে ওই টেনশনে থাকে। এখানে একজন স্টুডেন্টকে অনেক কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফিস যোগাড় করতে হয়, পরীক্ষার খাতায় কতো পেলো এই নিয়ে ভাববে ক্লাসের দুই-তিনজন, যাদের এই ধরনের টেনশন নেই এবং ভালো রেজাল্ট করতে উদগ্রীব। বাকিরা এতোটা আগ্রহী হবে না এটাই স্বাভাবিক’। কেন শেয়ার করলাম বিষয়টি? কারণ আমাদের ‘প্রাইভেসি’ বলে যে একটা শব্দ আছে তা মস্তিষ্ক হতে উধাও হয়ে যাচ্ছে দেখে।

আজকাল বাচ্চাদের রেজাল্ট বের হচ্ছে অনলাইনে। জানা সহজ, ডিজিটাল যুগ, ভালো ব্যবস্থা। কিন্তু এমন ব্যবস্থায় একটু পরিবর্তন আশা করতে পারি, ভাবতে পারেন যারা দায়িত্বে আছেন। এখন যে ব্যবস্থা, কেউ চাইলেই অনলাইনে রেজাল্ট দেখতে পাচ্ছে যদি কেউ রোল নম্বর জানেন। এটা কেন হবে? প্রাইভেসি থাকবে না? প্রস্তাব রাখছি, রোল নম্বর ছাড়াও অন্য কোনো পাসওয়ার্ড থাকার যেন কেউ রোল নম্বর জানলেই রেজাল্ট না দেখতে পারে। নয়তো এটা একজন শিক্ষার্থীর প্রাইভেসি নষ্ট করে। এবার আসি অভিভাবক হিসেবে আমরা কী করছি? পাশের বাসার বাচ্চাটির রেজাল্ট বা আমার সন্তানের সঙ্গে আরও যারা তার বন্ধুরা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের রেজাল্ট কেমন হলো, খারাপ করলে তাদের কেমন লাগে, এসব মানবিক দিকগুলো বেমালুম ভুলে ফেসবুকে জানান দিচ্ছি, আমার সন্তান কতোটা ভালো করলো। এই রেজাল্টের পর শুনেছি সারাদেশে আটজনেরও বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে, একবারও কী ভাবছি আমরা আসলে সবাই মিলে তাদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছি কিনা? প্রতিবার পরীক্ষার রেজাল্ট দিলেই আমরা হারাচ্ছি শিক্ষার্থীদের। কিন্তু কেন? ভেবেছি কী কখনো? কোথায় আমাদেরও দায় আছে রাষ্ট্রের পাশাপাশি? আমরা তাদের রেজাল্ট ভালো হলে যেমন আহ্লাদিত হই, তেমনি খারাপ হলে তাদের উপর চড়াও হই, এতে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এমনকি নিজের জীবনকে শেষ করে দিতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করে না, কারণ তারা অনেক নাজুক তা আমাদের মনে রাখতে হবে। আমার ফেসবুকে আমেরিকান কমপক্ষে ৫০ জন ফ্রেন্ড আছে, আমি কোনোদিন কখনো দেখিনি তারা তাদের কিংবা তাদের বাচ্চাদের রেজাল্ট দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে।

কারণ তারা রেজাল্টকে কোনো কেয়ার করে না, করে মানুষ হচ্ছে কিনা, সমাজের উপকারে লাগছে কিনা, কিংবা নিজে নিজের জীবনটাকে উপভোগ করছে কিনা। হ্যাঁ জানি কেউ হয়তো বলবেন, আমি আমার সন্তানের সাফল্য শেয়ার করবো না? অবশ্যই করবো, কিন্তু সেটা এমন কেন? কেন সে কোন বিষয়ে কতো পেলো তা দেখিয়ে? তাতে করে অন্য যে পিতা-মাতা, যার সন্তান ভালো করেনি, একবারও ভাবছি, তাদের উপর কী মানসিক চাপ পড়ে? সেই চাপ আবার মনের অজান্তেই সন্তানের উপর পড়ে? সেই সন্তান চাপ নিতে না পেরে নিজেকে দিনকে দিন ছোট ভাবতে শুরু করে? সেই ভাবনা তৈরিতে আমি/আপনি কি ভূমিকা রাখলাম না? কেবল রাষ্ট্রের দোষ, শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ ভাবলেই হবে না, আমরা এই গলদ ব্যবস্থার মাঝে যে আরও মসলা যোগ করে এটাকে একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছি, সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। খুব দ্বিমুখী আচরণ হয়ে যাচ্ছে না যে একদিকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বকছি, আবার জিপিএ ফাইভ নিয়ে বেশ গর্ব বোধ করছি? নিজেরাই বলছি, এই জিপিএ ফাইভের মূল্য নেই, আবার নিজেরাই এই মূল্য বাজারে তুলে ধরছি? কেন সন্তানের রেজাল্ট ফেসবুকে আমাদের দিতে হবে? সন্তানের মার্কশিট প্রকাশ করার আগে কি আমরা তাদের অনুমতি নিচ্ছি? যদি নেই, তাহলে তাদেরও আমাদের মতো অসুস্থ বানিয়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আর যদি না নেই, তবে তো মহাঅপরাধ করছি। আসুন এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা হতে বের হই।

আমেরিকান, ব্রিটিশ বা অন্যদেশের অভিভাবকদের মতো শিখি, সন্তানের রেজাল্ট খুব ভালো বা মন্দ যাই হোক, এটা কেবলই প্রতিদিনকার একটা ডাল-ভাত খাওয়ার মতোই একটা ঘটনা, এই নিয়ে আনন্দিত হওয়ার আছে, কিন্তু এতো আহ্লাদিত হওয়ার কিছু নেই। কোচিং ব্যবসানির্ভর এই শিক্ষা ব্যবস্থায় মূলত শিক্ষা আমরা কিনছি, যার যতো টাকা সে ততো শিক্ষক রাখছে, ততো শিক্ষাকে কিনতে পারছি, অতএব এই নিয়ে গর্বের কিছু নেই। প্রকৃত শিক্ষায় যেদিন সন্তান শিক্ষিত হবে, সেদিন না হয় আমরা একটু গর্ব করি। আর যেসব বাবা মায়েরা বাচ্চাদের রেজাল্ট নিয়ে শঙ্কিত হয়ে বাচ্চাদের উপর প্রেসার দিচ্ছি, তারা বাচ্চাদের আসলে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছি। এই রেজাল্টই কিন্তু জীবনের সব কিছু নয়। জীবন অনেক বড়, ওকে তার মতো করে বেড়ে উঠতে দিলে নিশ্চয়ই একদিন আমাদের সন্তান তার স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছবে। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়