ইয়াসিন আরাফাত : ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনকে ‘সুস্থ’ রাখার জন্য এই ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন হলো মহাকাশেও। গত ১৯ বছর ধরে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনকে জীবিত রেখেছে বেশ কয়েকটি ইউরোপিয়ান কম্পিউটার। বলা যেতে পারে সেগুলো স্পেস স্টেশনের হৃৎপিন্ড। কিন্তু হঠাৎ ২০১৪ সালের শেষের দিকে কম্পিউটারগুলোতে সমস্যা দেখা দেয়ায় তা পরিবর্তনের পরিকল্পনা করে বিজ্ঞানীরা। কিন্তু পুরো সেটআপ এমন ভাবেই করা হয়েছিলো যে সেগুলোকে কোনও ভাবেই স্পেস স্টেশন থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছিলো না। বিচ্ছিন্ন করলে খুব বড় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা ছিলো। আনন্দ বাজার
কারণ স্পেস স্টেশনের জন্য স্পেস সংক্রান্ত বিভিন্ন ডেটা সংগ্রহ, নেভিগেশন এবং যোগাযোগের জন্য কম্পিউটারগুলো খুবই প্রয়োজনীয়। এই কম্পিউটার ছাড়া স্পেস স্টেশন সম্পূর্ণ অজেকো হয়ে পড়বে। এমনকি ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন নিজের কক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও পড়তে পারে। আবার কম্পিউটারগুলোকে পৃথিবীতে নিয়ে এনে মেরামত করাও সম্ভব না। ফলে ইউরোপীয় ইঞ্জিনিয়ার এবং রাশিয়ার মহাকাশচারীরা ঠিক যে ভাবে মানব শরীরে হৃৎপিন্ডকে উন্মুক্ত করে তার শিরা-ধমনী, পেশী অস্ত্রোপচার করা হয়, অনেকটা সে ভাবেই ওই কম্পিউটারগুলোর সার্জারি করার উপায় বার করেন।
২০১৫ সালে স্পেস স্টেশনের জন্য উপযুক্ত নতুন সার্কিট বোর্ড বানানো হয়। প্রথমে ইউরোপীয় ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্যে রাশিয়ার মহাকাশচারীরা কম্পিউটার বন্ধ না করে কী ভাবে এই নতুন সার্কিট তাতে প্রতিস্থাপন করা যায়, তা অনুশীলন করেন পৃথিবীতে। এরপর ২০১৮ সালের শেষের দিকে নতুন সার্কিট বোর্ড-সহ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেন প্রশক্ষিত মহাকাশচারীরা। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সফল ভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় ওই সার্কিট বোর্ড। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না মহাকাশচারীরা। তাদের অপারেশনকে সফল ঘোষণার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হয়। গত নভেম্বরে আরও একটা কম্পিউটারে একই রকমের সমস্যা দেখা দেয়। স¤প্রতি ওই কম্পিউটারেও নতুন ইউনিট প্রতিস্থাপন করা হয় ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’র মাধ্যমে। বর্তমানে স্পেস স্টেশনের সব কয়টি কম্পিউটারই ঠিকঠাক কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তারা।
স্পেস স্টেশনের ওপেন হার্ট সার্জারির ফলে খরচ এবং সময় দুইই বেঁচে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়াররা। সার্কিট বদলানোর ফলে কম্পিউটারের বর্তমান যা পরিণতি, তাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত আর কোনও সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন তারা।
আপনার মতামত লিখুন :