আমারসংবাদ : আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট। অনুষ্ঠেয় ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রতীকে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ।
তবে ঘোষিত ওই তালিকায় ক্যাসিনো, দুর্নীতি, চাঁদাবাজ ও বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িতরা কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পেয়েছেন। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ দলটির নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ ওঠার পর দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেও ৪টি ওয়ার্ড প্রার্থী পরিবর্তন করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। ফলে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পেয়েও প্রার্থীদের মাঝে প্লাস-মাইনাস আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাদ পড়তে পারে আরও কিছু বিতর্কিত প্রার্থী।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে গত রোববার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ।
এদিন সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে তালিকা প্রকাশ করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার পরপরই ৩ ওয়ার্ডে প্রার্থী পরিবর্তন করে দলটি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মুরাদ হোসেনকে।
এর আগে এই ওয়ার্ডে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তিতুকে সমর্থন করা হয়েছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন গোলাম আশরাফ তালুকদার। তিনি এখানকার বর্তমান কাউন্সিলর।
এর আগে এখানে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ম.ম. মামুন রশিদ শুভ্রকে সমর্থন দিয়েছিল দল। একই সিটিতে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন।
আগে প্রার্থী হিসেবে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ইলিয়াস রশীদকে সমর্থন দেয়া হয়েছিল। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল বর্তমান কমিশনার আব্দুল মতিনকে। তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠার পর প্রার্থী পরির্তন করেছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল সোমবার নতুন করে ওয়ার্ডটিতে নতুন বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শফিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনো, দুর্নীতি, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে জন্য সারা দেশে শুদ্ধি অভিযান করছেন তিনি।
তবে চলমান সেই শুদ্ধি অভিযানে যেসব কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো, দখল ও চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে বেশ কয়েক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার এবং কয়েকজন গা ঢাকা দেন।
গত রোবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়ন ঘোষণার পর একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্যাসিনো কারবার, দখল ও চাঁদাবাজিসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় কিছু ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন চেয়ে একজোট হচ্ছেন দলের মনোনয়ন কেনা অপর প্রার্থীরা।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে যে সকল বিতর্কিত কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তারা হলেন- উত্তরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আবুল হাসেম হাসু।
নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের মারধর, প্লট ও বাড়ি দখল, অবৈধ স্থাপনা, হত্যাচেষ্টাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ১ নম্বর ওয়ার্ডে পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিল আফছার উদ্দিন খান। তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
উত্তরের তুরাগের ৫৩ নং ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন কাউন্সিলর হাজী নাসির উদ্দিন। এলাকার হিন্দু সম্পত্তি দখলসহ জোরপূর্বক ওয়ারিশ সম্পত্তি এবং অন্যের জমি দখল করার অভিযোগ রয়েছে।
ক্ষমতার অব্যবহার করে বিপুল অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন এ কাউন্সিলর। এবারো তিনি দলীয় নমিনেশন পাওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া উত্তরে বিতর্কিতদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন ৪ নং ওয়ার্ডে জামাল মোস্তফা, ২৭ নং ওয়ার্ডে ফরিদুর রহমান, ২৯ নম্বরে নুরুল ইসলাম রতন, ৫৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ। তিনি বিএনপি পরিবারের সন্তান।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০ নং ওয়ার্ডে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ক্যাসিনোকাণ্ডসহ নানা কারণে বিতর্কিত কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন, ২ নং ওয়ার্ডে আনিসুর রহমান, ৩ নম্বরে মাকসুদ হোসেন, ৫ নং আশরাফুজ্জামান, ৭ নং ওয়ার্ডে আবদুল বাসিত খান, ১০ নং ওয়ার্ডে মারুফ আহমেদ মনসুর, ৩০ নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হাসান, ৩৭ নং ওয়ার্ডে আবদুর রহমান মিয়াজী, ৫১ নং ওয়ার্ড কাজী হাবিবুর রহমান হাবু, ৫৩ নং ওয়ার্ড নূর হোসেন, ৫৫ নং ওয়ার্ড নূরে আলম, ৫৬ নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হোসেন, ৫৯ ওয়ার্ড আকাশ কুমার ভৌমিক।
দক্ষিণ সিটির ৬৫ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী নিয়ে আপত্তি তুলেছেন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি— ওই ওয়ার্ডে মনোনয়ন পাওয়া সামসুদ্দিন ভূঁইয়া সেন্টু বিএনপির লোক এবং স্বাধীনতাবিরোধী।
তার প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে চিঠি দিয়েছেন তারা। গতকাল মাতুয়াইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শান্তনুর খান শান্ত স্বাক্ষরিত চিঠিটিতে এ দাবি করা হয়।
এদিকে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া যে সকল প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্যাসিনো, প্লট ও বাড়ি দখল, অবৈধ স্থাপনা, হত্যাচেষ্টাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকতে পারে।
কিন্তু বাস্তবতায় তা নয়। সেগুলো যাচাই-বাছাই করেই তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুলিখন : তন্নীমা আক্তার
আপনার মতামত লিখুন :