অনির্বাণ আরিফ : সরকারি চাকরি করলে ঘুষ খাওয়া যায়, সাদা পানি খাওয়া যায়, লাল ফিতা কাটা যায়, লুটেপুটে রাষ্ট্রকে চাটা যায়, কাজ না করেও বেতন নেয়া যায়, ১০টার অফিস ১২টায় আর ৫টার ছুটি ৩টায় ধরা যায়, ঊর্ধ্বতনদের তেলালে তরতর করে উপরে ওঠা যায়। আরও অনেক কিছুই যায়। বেসরকারি চাকরি করলে কোনো কিছুই পাওয়া যায় না, খাওয়া যায় না, ধরা যায় না, বলা যায় না তবে রাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তা বোঝা যায়। কোম্পানির আঁতলামি দেখা যায়। পুঁজিবাদের নষ্টামি ধরা যায়। একজন পাগল কিংবা শিশুকেও যদি উক্ত দুটি সেক্টরের তুলনা দিয়ে বলা হয় তুমি কোনটা চাও সে এক মিনিট না চিন্তা করেই বলবে সরকারি চাকরি। পশ্চিমের ধনী দেশগুলোতে কিংবা পূর্বের আসিয়ানভুক্ত উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরকারি চাকরি তারা করে যারা কোনো চাকরি পায় না। আর বাংলাদেশে হয় তার ঠিক বিপরীতটা।
১০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে যে ছেলে পুলিশের এসআই হয়েছে তার থেকে আপনি কীভাবে নৈতিকতা আশা করবেন? মামা বা মাসির ইয়ের পা চেটে যে ছেলে কোনোমতে একখানা দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি জোটালো আপনি তার থেকে কীভাবে প্রথম শ্রেণির আচরণ আশা করবেন? নেতাফাতা কিংবা আমলা কামলার লগে কাম লাগাইয়া যে ছেলে পাবলিক সার্ভিসে নিয়োগ পেয়েছে তার থেকে আপনি কীভাবে স্বচ্ছতা আশা করবেন? কিংবা দিনরাত পড়তে পড়তে যে ছেলে সমাজ, মানুষ, মানবিকতা, রাষ্ট্র, রাজনীতি, বৈষম্য সব ভুলে গিয়ে কেবল নিজের আখের গোছাতে একখানা চাকরির পেছনে ছুটেতে ছুটতে একখানা চাকরি নিয়েছে আপনি তার থেকে কীভাবে বন্ধুত্ব, মানবিকতা, আন্তরিকতা কিংবা মানুষের মতো আচরণ আশা করবেন?
লাখ লাখ তরুণকে এ রাষ্ট্র নষ্ট করেছে, দুর্নীতি শিখিয়েছে, অমানুষ বানিয়েছে, বেকার করে রেখেছে এবং লাখ লাখ তরুণ এ রাষ্ট্রে জন্ম নিয়ে বৈষম্যে, হতাশা এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রাষ্ট্র সরকারি-বেসরকারি চাকরির মধ্যে সুযোগ এবং সহজলভ্যতা সমান করলে একটা চমৎকার ব্যালেন্স আসতো। কোম্পানি এবং পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানগুলো সোজা হয়ে যেতো। লাখ লাখ তরুণ জানার জন্য পড়াশোনা করতো, কিন্তু বাঁচার জন্য যেকোনো চাকরি নিতো। কিন্তু এখন কোম্পানিগুলো দানবের মতো আচরণ করছে। পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজির জন্য লাখ লাখ তরুণকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে চলছে। এ বৈষম্য এ নষ্টামির নিয়ম থেকে নিজকে সেইফ করতে লাখ লাখ তরুণ সরকারি চাকরির জন্য দিনরাত পড়ছে। তবে জানার জন্য পড়ছে না, চাকরির জন্য পড়ছে। আর চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত বেকার থাকছে। আর চাকরি পেলে অমানবিক হয়ে যাচ্ছে। কারণ গোটা সিস্টেমটাই এভাবে চলছে। এ রাষ্ট্র বেকারত্ব কমাতে নয় বাড়াতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ রাষ্ট্র মানুষ করতে নয়, অমানুষ বানাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :