শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৫ দুপুর
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অবকাশ-এর স্মৃতিচারণ করে তসলিমা নাসরিন বললেন,  গোটা বাংলাদেশই নষ্ট হয়ে গেছে

সালেহ্ বিপ্লব : ময়মনসিংহ শহরে তসলিমা নাসরিনের পৈত্রিক বাড়িটির নাম অবকাশ।  নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে যার অন্যতম জনপ্রিয় লেখা, সেই তিনি বহু বছর ধরে নির্বাসিত দেশের বাইরে। অবকাশ-এ বেড়ে ওঠার দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি ফেসবুকে। জানিয়েছেন বাড়িটির হালফিল খবর।

তসলিমা নাসরিন লিখেছেন,  ‘‘যে বাড়িতে আমি বড় হয়েছি, সে বাড়ি ছিল প্রচণ্ড ধর্মনিরপেক্ষ বাড়ি। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের বাড়ি। আমার বাবা ছিলো ডাক্তার, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক। মিটফোর্ড এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেরও অধ্যাপক । আমরা চার ভাই বোন ছিলাম বিজ্ঞানের ছাত্র ছাত্রী। পড়েছি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান। আমি ডাক্তার হয়েছি।

বাবা নাস্তিক ছিলেন। ভাই বোনেরাও নাস্তিক ছিলো। দাদারা বেহালা বাজাতো, গিটার বাজাতো। আমিও গিটার। বোন হারমোনিয়াম বাজিয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাইতো। আমাদের গিটার, বেহালা আর গানের শিক্ষক ছিলেন যামিনী পাল, সমীর চন্দ্র দে, বাদল দে। দাদারা পাড়ার হিন্দু মেয়েদের সংগে প্রেম করতো। একজন তো এক হিন্দু মেয়েকে পরে বিয়েই করেছে। মেয়েটি নৃত্যশিল্পী। বোনেরও ছিল পাড়ার হিন্দু ছেলেমেয়েদের সংগে বন্ধুত্ব। আমাদের বাড়িতে মা ছাড়া কেউ নামাজ পড়তো না। মা'র নামাজ নিয়ে বাবা আর আমরা ভাই বোনেরা হাসি ঠাট্টা করতাম। বাবা জানতোই না নামাজ কীভাবে পড়তে হয়। আরবি অক্ষরও চিনতো না, কোরান পড়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

আমার বাবা দাদারা বরাবরই ক্লিন শেভড। বরাবরই স্যুট টাই। আমরা বোনেরাও আধুনিক পোশাক। জামা পাজামা। সার্ট প্যান্ট। বা শাড়ি টিপ। এই ছিল আমাদের ৭০, ৮০ আর ৯০ দশকের অবকাশ। বাড়িতে সারা বছর রবীন্দ্রসংগীত বাজতো, গণসংগীত বাজতো, হেমন্ত মান্না দে সতীনাথ বাজতো। নাটক হতো, নৃত্যনাট্য হতো। সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতো দাদা। আমিও করতাম । বাড়ির বুকশেল্ফে ছিল প্রচুর গল্প উপন্যাস প্রবন্ধের বই। বাড়িটিতে সাহিত্য চর্চা চলতো প্রতিদিন।

দাদা লিখতো কবিতা। আমিও লিখতাম। বাড়িতেই সকাল কবিতা পরিষদ গড়ে তুলেছিলাম, বারান্দার ঘরে শহরের উৎসাহী আবৃত্তিকারদের নিয়ে বৃন্দ আবৃত্তির মহড়া চলতো। বাড়িতে দাবা খেলা চলতো বাবা আর মেয়েতে, ভাই বোনে চলতো রাত জেগে তাস খেলা। সে বাড়ির নাম ছিল 'অবকাশ'। নামখানা বাবার দেয়া। অবকাশে আমরা সবাই ছিলাম কর্মমুখর। কারও একফোঁটা অবকাশ ছিল না।

আমাদের সেই অবকাশ আর আমাদের নেই। সেই অবকাশ এখন বড় দাদার স্ত্রী এবং স্ত্রীর বাপের বাড়ির আত্মীয়দের দখলে। তার পুত্র, পুত্রদের শ্বশুরবাড়ির পাঁড় ধর্মবাজদের প্রভাবে আমাদের সেই অবকাশ এখন কোরান হাদিস হিজাব বোরখা তসবিহ আর জায়নামাজের অবকাশ। আমরা দেয়ালে টাঙাতাম আর্ট, দেয়ালে এখন কাবা শরিফের ছবি, টাঙানো প্রশ্রাব পায়খানা, পেট খারাপ, বমির উদ্রেক, সর্দি কাশি আর স্বপ্নদোষের দোয়া । ময়মনসিংহ শহরে আমার বাবার ছিলো ক্লিনিক। এক্স রে, প্যাথলজি, মেডিক্যাল কন্সাল্টেশান, সার্জারি, ফার্মেসি। এখন শুনেছি অবকাশের বোরখা হিজাব আলখাল্লা পরা, মুখে ধর্মের দাড়ি রাখা লোকগুলো শহরে একটি দোকান খুলেছে, সেই দোকানে বিক্রি করে কোরান হাদিসের বই, জায়নামাজ , তসবিহ, হিজাব বোরখা, যমযমের পানি আর আরব দেশের আতর আর খেজুর।

আমাদের সেই শিল্প সাহিত্যের, সেই গান বাজনার, সেই ধর্মনিরপেক্ষ অবকাশ নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু আমাদের অবকাশই নষ্ট হয়নি। নষ্ট হয়ে গেছে গোটা বাংলাদেশ।’’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়