মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লা চকবাজার আলীয়া মাদ্রাসার কামিল শাখার শিক্ষার্থী শাহ-জালাল। নৈশ প্রহরীর চাকরি করা বাবা নুরুল ইসলাম চার মাস আগে মরণব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
একটু টুকরো ভিটে মাটি ছাড়া তেমন জমি নেই। নিজের অদম্য চেষ্টায় লেখাপড়া করা জালাল পারিবারিক অভাব অনটন আর সঠিক দিকনির্দেশনার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারে নি। পরিবারে মা মনোয়ারা বেগম আর ছোট ভাই শাহ-পরাণকে নিয়ে শাহ-জালালের অভাবের সংসার। টিউশনি করে নিজের লেখাপড়া ও সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে হাফিয়ে উঠে। টাকার জন্য শুধু বাবার সুচিকিৎসাই নয় আদরের ছোট ভাই শাহপরাণকে লেখাপড়া করাতে পারে নি।
গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে শাহ-জালালের মোবাইল ফোনে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তায় শাহ জালাল জানতে পারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি হয়েছে তার। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ৫ নং পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের শাহ-জালালদের ঘরে ঈদের আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত ঈদের আনন্দও এত মধুর হয়ে আছড়ে পড়েনি শাহ-জালালদের বাড়ির উঠোনে। শাহ-জালালদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মা মনোয়ারা বেগম ও ছোট ভাই শাহ-পরানকে নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুঁনছে অদম্য মেধাবী শাহ-জালাল। টাকা পয়সা ও লবিং ছাড়া চাকরির আনুষ্ঠানিকতা শেষ করায় শাহ-জালালের মা এমন খুশির খবরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীরের জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করেন এবং অব্যক্ত ভাষায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
একই রকম আনন্দ পরিলক্ষিত হয়েছে সহকারি শিক্ষক পদে চাকরি পাওয়া জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ইশিতা ও সদর উপেলার ভূবনঘর গ্রামের তাসলিমার চোখে মুখে। কোন রকম ঘুষ-লবিং তদবীর ছাড়া নিজেদের মেধা আর যোগ্যতায় চাকরি পাওয়ায় তাসলিমা ও ইশিতারদের বাড়িতেও চলছে আনন্দ উদযাপন।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জুন মাসে ৮৪ হাজার ৭২৮ জন রির্টান পরীক্ষা দেয়। পরে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পায় ২০৯৫ জন। যার মধ্যে কোন প্রকার লবিং-তদবীর ছাড়াই ৬৮৭ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পদে চাকরির জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়। কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.আবদুল মান্নান বলেন, রির্টান ও মৌখিক মাধ্যমে ৬৮৭ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করি। অল্প কিছু দিনের মধ্যে উর্ত্তীণ প্রার্থীদের নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম শেষ করা হবে।
কুমিল্লা জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির জন্য যারা আবেদন করেছেন তাদের নিয়োগ পরীক্ষাকে শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করতে কোন ত্রæটি রাখেন নি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক। পুরো জেলার মধ্যে দু’টি ভাগে ভাগ করে রির্টান পরীক্ষা নিয়েছেন এবং রির্টানে উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছেন সপ্তাহ দুয়েক সময় নিয়ে।
কুমিল্লা জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের চাকুরি বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো.আবুল ফজল মীর বলেন, কোন লবিং তদবীর ঘুষ ছাড়াই শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রমটি সম্পন্ন করেছি। যোগ্যরাই চাকুরি পেয়েছে। আজ তারা চাকুরি পেয়ে যেমন আনন্দিত ঠিক তেমনি স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারায় আমিও একই রকম আনন্দিত। সম্পাদনা : জহুরুল হক
আপনার মতামত লিখুন :