আমিরুল ইসলাম : যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জাতি কতোটা দায়ম্ক্তু হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে পর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জাতির দায় কতোটুকু বাকি রয়েছে জানতে চাইলে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরের গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই ওঠেছিলো। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন, ‘যারা গণহত্যা করে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে তাদের বিচার হবে’। এর জন্য তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে ‘দালাল আইন, তৈরি করেছিলেন। এই দালাল আইন অনুযায়ী বিচার শুরু হয়েছিলো ১৯৭৩-এর ট্রাইব্যুনালে। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা-ের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দালাল আইন বাতিল করে দেন। যাদের বিচার হয়েছিলো বা শাস্তি পেয়েছিলো তাদের ছেড়ে দেন।
এরপর তাদের সরকারের অংশ বানালেন, এমপি বানালেন, মন্ত্রী বানালেন। বিএনপি ক্ষমতার অংশীদার করে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এরপর ঘাতক দালাল কমিটির দীর্ঘ দাবির পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছেন এবং এ পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হয়েছে। ফলে বিচারহীনতার কলঙ্ক থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করেছেন। জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছিলেন, তাদের বিচার বন্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে একের পর এক জাতিকে বিচারহীনতার অভিশাপ এবং কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এটা স্বাভাবিকভাবে ত্রিশ লাখ শহীদ পরিবারের জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব মানুষের জন্য একটা বিরাট প্রাপ্তি। এই বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা কলঙ্কমুক্ত হয়েছি। এখনো কিছু অপরাধীর বিচার বাকি রয়েছে এবং সংগঠনগুলোর বিচার বাকি রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের যে ঘাতক বাহিনী, রাজাকার, আল শামস, পাকিস্তান হাইকমান্ড। ট্রাইব্যুনালে তাদেরও বিচার হবে পর্যায়ক্রমে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ এর পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, চেতনা সব কিছুই মুছে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর জন্য। জিয়াউর রহমান খুব সচেতনভাবেই এগুলো করেছেন এবং তার পরবর্তী প্রজন্মও একই কাজ করেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি দেখেছি, মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা দেখেছি, লাঞ্ছনা দেখেছি। শহীদ পরিবারের অপমান দেখেছি, লাঞ্ছনা দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাদের সম্মানী ভাতা দশ হাজার টাকা করা হয়েছে এবং অন্যান্যা সুযোগ-সুবিধাদিও বাড়ানো হয়েছে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বাড়ানো হয়েছে।
নির্যাতিত নারীদেরও এখন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। এর ফলে জাতি মুক্তিযুদ্ধের অহঙ্কার গৌরব ফিরে পেয়েছে। আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে, এখানেই শেষ নয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রবর্তনের জন্য আমরা ২৮ বছর ধরে আন্দোলন করছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংবিধানটিও আমরা ফিরে পেতে চাই। এর জন্য আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে এবং আমরা আশা করি বাংলাদেশ একদিন ত্রিশ লাখ শহীদের স্বপ্নের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :