শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:১৯ দুপুর
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:১৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বরেন্দ্র অঞ্চলে ধানের বদলে মিষ্টি মেলে

মুসবা তিন্নি: ব্যাটারি চালিত ভ্যানের পেছনে বাধা বড় বড় বস্তা।ভ্যানের উপরেই বড় পাতিলে সাজানো মিষ্টির পাতিল। দুই হাত দিয়ে ভ্যান ঠেলে ছুটে চলছে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। মাঝে মাঝে হাঁক ছাড়ছেন, ‘ওই আদা মিশানে গুড়ের মড়মড়ে ঝুঁরি, রসালো জিলাপী, ফুলোরা, মুড়ির মোয়া ও তাওয়া মিষ্টি আছে গো মা-বোন ও ভাইয়েরা।

এমন হাঁক শুনলে গ্রামের শিশুদের থামানোয় দায়। সব ছুটে আসে ঘোষণাকারির কাছে। টাকা নয়, ধান দিয়ে শিশুরা কিনে নেয় মন পছন্দের খাবার।
অগ্রাহনের মৌসুম আসলেও হাঁক-সুর বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামগুলোতে প্রায় শুনে যায়। তারা মৌসুমি মিষ্টি বিক্রেতা। তবে মিষ্টি বিক্রির জন্য তারা টাকা নেন না। টাকার বদলে নেন ধান। বরেন্দ্র অঞ্চলে আমন মৌসুমে ধানের বদলে এভাবে মিঠাই বিক্রির চল বহু পুরনো।

ধান কাটা শুরু হলেই বিভিন্ন জেলা থেকে ভ্রাম্যমাণ মিষ্টির দোকানিরা চলে আসে বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামগুলোতে। তারা পরিমাণমতো ধান নিয়ে ক্রেতার হাতে তুলে দেন মিষ্টি। ধান কাটা মজুর, ধানকুড়ানি শিশু-কিশোর-কিশোরীরা এ সময় ধানের বিনিময়ে মিষ্টান্নের স্বাদ নেন। মিষ্টি বিক্রেতারা পরিবারের সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় ধান এভাবেই সংগ্রহ করে থাকেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর স্কুল পাড়ায় দেখা মিললো মৌসুমি মিষ্টি বিক্রেতার। তার নাম শহিদুল ইসলাম (৩৫)। বাড়ি পাশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহারাজপুর গ্রামে। তার ব্যাটারি চালিত অটোভ্যানের পেছনে ঝুড়ি তার মধ্যে রয়েছে কয়েক রকমের মিষ্টি। বড় দুইটি বস্তায় ধান ভর্তি। হরেক রকম গুনের কথা বলে পাঁচন্দর গ্রামে ঘুরে ঘুরে মিষ্টি বিক্রি করছিলেন তিনি।

শহিদুল ইসলাম জানান, বহু পুরোনো মিষ্টির ব্যবসা তার তাদের। তার বাবা দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছেন। তবে সব সময় নয়, আমন কাটা-মাড়াই মৌসুমে। তারা মহারাজপুরসহ চাঁপাই জেলার প্রায় তিন শতাধিক মৌসুমি মিষ্টি বেক্রাতা রয়েছে। অগ্রাহণ মাস শুরুর আগেই তাদের প্রস্ততি শুরু হয়ে যায়। বাড়িতে হরেক রকম মিষ্টি বানিয়ে প্রতিদিন ভোর রাতে সাইকেল বা কেউ অটো ভ্যান নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামগুলোতে ভাগ হয়ে মিষ্টি বিক্রির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। সন্ধ্যায় আবার তারা বাড়ি ফিরে আসেন।

শহিদুল ইসলাম আরো বলেন, এমন মৌসুমি ব্যবসারশুরুতে তিনি মাথায় মিষ্টান্নের ডালা নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে ও ধানক্ষেতের মধ্যে ঘুরে বেড়াতেন। মাঠে ধান কাটার ফাঁকেও কৃষকরা ধান দিয়ে মিষ্টি কিনে খেতেন। তবে, পায়ে হেঁটে বেশি জায়গা ঘোরা যায় না। তাই, কয়েক বছর আগে অটো ভ্যান কেনেছেন এখন অনেক এলাকা তিনি ঘুরতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, তার বিক্রি করা মিষ্টিগুলো ঘরে বানানো। স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঝুরি, জিলাপি, নাড়ু, খুরমাসহ বিভিন্ন মিষ্টান্ন তৈরি করে দেন। সকাল হলেই তিনি সেই সব মিষ্টান্ন নিয়ে চলে আসেন গ্রামে। প্রতিদিন তার কাছে যে পরিমান মিষ্টি থাকে তাতে বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ কেজি ধান পান তিনি। যা খরচ বাদে বিক্রি করে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়ে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়