শিরোনাম
◈ অবশেষে মার্কিন সিনেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস ◈ কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল চলাচল বন্ধ ◈ ইউক্রেনকে এবার ব্রিটেননের ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা ◈ থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ◈ জিবুতি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে ৩৩ জনের মৃত্যু ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ এফডিসিতে মারামারির ঘটনায় ডিপজল-মিশার দুঃখ প্রকাশ ◈ প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ◈ প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাত চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন নির্বাচিত ◈ বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৫:৩৪ সকাল
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৫:৩৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাড়ি, গাড়ি, ক্ষমতা নয় মাগফেরাতের প্রতিযোগিতায় নামার আহবান জানালেন ইমাম

রাশিদ রিয়াজ : গত জুম্মায় নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে রহিম মেটাল মসজিদে। বিশাল মসজিদ। হাজার হাজার মুসল্লির উপস্থিতিতে জুম্মার খুৎবা দিচ্ছিলেন ইমাম। তার বক্তব্যের একটি পর্যায়ে আসল দুনিয়ায় মশগুল হয়ে থাকা আমাদের বিভিন্ন কাজে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার বিষয়। ইমাম বললেন, জীবনের একটা পর্যায়ে এলে মাগফেরাতের কথাও আমাদের চিন্তা করা উচিত। কিন্তু দুনিয়ার ক্ষণিক এ সময় এত দ্রুত চলে যায় যে তা ভাবার ফুরসতও পাওয়া যায় না। এ পরিস্থিতি আমাদের অনন্তকাল সম্পর্কে গাফেল করে দেয়। একটি উদাহরণ টেনে বললেন, এক ব্যক্তি আসরের নামাজের জামায়াতে আসতে দেরি করে ফেললে মসজিদে ঢুকে দেখতে পেল ইমাম রুকুতে চলে গিয়েছে। দ্রুত ওই ব্যক্তি নামাজের নিয়াত বাঁধতেই ইমাম সিজদায় চলে গেলেন। ওই ব্যক্তিও সিজদায় চলে গেলেন। কিন্তু রুকু না পাওয়ায় ওই রাকাত তাকে নামাজ শেষে ইমাম সালাম ফেরালে তাকে আদায় করে নিতে হবে স্বাভাবিকভাবে। অর্থাৎ ওই ব্যক্তির রুকুতে যাওয়ার চেষ্টা ও সিজদায় যাওয়ার বিষয়টি ফাও নামাজ আদায় হিসেবে রয়ে গেল। এটা আমাদের হিসাব। ইমাম বলেন, কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রোজ কিয়ামতে ভাল কাজের ঘাটতি পড়লে ওই ফাও নামাজের বদৌলতে গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ রাহমানুর রাহিমের কাছে মানুষের কোনো প্রচেষ্টা ফেলনা নয়। এটাই বুঝালেন ইমাম।

রহিম মেটাল মসজিদ সংলগ্ন একটি মাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসার কচিকাঁচা শিশুরা দল বেঁধে আসে নামাজ পড়তে। রয়েছে একটি ছোট কবরস্থান। ভেতরে ঢুকতেই বাহারি সব পাতাবাার, ফুল গাছে সাজানো, সবুজ ঘাসে ভরতি। ক্ষণিকের জন্যে হলেও মনে দুনিয়াবি চিন্তার স্রোতে বাধা পড়ে যায়। কবরের মাঝে মরহুমরা কেমন আছেন এই চিন্তা আসে মনে। আমাদের প্রত্যেককে যেতে হবে। এবং কবরই চূড়ান্ত গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরুর প্রারম্ভিক স্থানও বলা যায়। কবর আযাব, কবরে শান্তির ঘুম খারাপ ও ভাল কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এটা আমরা সবাই কম বেশি জানি।

খুৎবায় ইমাম আরো বললেন, দুনিয়াবি কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু সময় করে নেয়া। এবং নিজের সম্পর্কে চিন্তা করা। কি করছি। সঠিক নাকি ভ্রান্ত পথে চলছি। তাহলে তার পরিণামই কি হবে। ইংরেজিতে একটি কথা আছে ‘গো ব্যাক টু ন্যাচার’। অনেকে বলেন বয়স ৬০ হলেই ধীরে ধীরে মানুষের মন মাটির দিকে ফিরে যেতে চায়। স্থিতু হতে চায় তার মন। প্রকৃতি কাছে সে ছুটে যায়। অনেকে বলেন মাটি দিয়ে মানুষ তৈরি বলে তার বয়স যত বাড়ে ততই সে মাটির কাছে যেতে চায়। ‘গো ব্যাক টু ন্যাচার’ এসব ধারণাকে সমর্থন করে। জুম্মার নামাজের ইমামের কথার সঙ্গে যদি মিলানো যায়, যেতেই যখন হবে তখন তারও একটা প্রস্তুতি দরকার। যে কোনো স্থানে যাওয়ার জন্যেই তো একটা প্রস্তুতি নিতেই হয়। উড়োজাহাজে উড়ে যেতে, ট্রেন ধরতে, জাহাজে পাড়ি দিতে হলেও। তারপর কোনো ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছে ফের ঘরে ফেরা। মানুষ আসলে অনন্তের যাত্রা পথে ক্ষণিকের জন্যে এই পৃথিবীতে কিছু দিনের জন্যে বাস করতে এসেছে। এসব সবার জানা। তারপরও আমরা দুনিয়ার বাইরে ভাবনায় ফিরে যেতে ভুলে যাই।

সুরা আসরে আল্লাহ কি চমৎকার ভাবেই না বলেছেন, ‘সময়ের কসম, নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় নিপতিত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।’

বিভিন্ন ব্যাখ্যায় এসেছে সময় মানে বিগত সময়-অতীত কালও হতে পারে আবার চলিত সময়ও। এই চলিত বা বর্তমান কাল আসলে কোনো দীর্ঘ সময়ের নাম নয়। বর্তমান কালে প্রতি মুহুর্তে বিগত হচ্ছে এবং অতীতে পরিণত হচ্ছে। আবার ভবিষ্যতের গর্ভ থেকে প্রতিটি মুহুর্ত বের হয়ে এসে বর্তমানে পরিণত হচ্ছে এবং বর্তমান থেকে আবার তা অতীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখানে যেহেতু কোনো বিশেষত্ব ছাড়াই শুধু সময়ের কসম খাওয়া হয়েছে, তাই দুই ধরনের সময় বা কাল এর অন্তর্ভূক্ত হয়। অতীতকালের কসম খাওয়ার মানে হচ্ছেঃ মানুষের ইতিহাস এর সাক্ষ্য দিচ্ছে, যারাই এই গুনাবলী বিবর্জিত ছিল তারাই পরিনামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর বর্তমানকালের কসম খাওয়ার অর্থ হল যে, বর্তমানে যে সময়টি অতিবাহিত হচ্ছে সেটি আসলে এমন একটি সময় যা প্রত্যেক ব্যক্তি ও জাতিকে দুনিয়ায় কাজ করার জন্য দেয়া হয়েছে। মোটামুটি স্থির সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছাতে পারি যে মানুষ, যারা চারটি গুণাবলীর অধিকারী : (১) ঈমান , (২) সৎকাজ , (৩) পরস্পরকে হকের উপদেশ দেয়া এবং (৪) একে অন্যকে সবর করার উপদেশ দেয়া ছাড়া বাকি সবাই ক্ষতির মধ্যে আছে। এবং এটি আল্লাহ সময়ের কসম খেয়ে বলছেন। যাতে এ নিয়ে মানুষের মনে কোনো দ্বিধা না আসে। মানুষ বিষয়টিকে অপরিহার্য বলে গণ্য করে। আল্লাহর এই বাণীর অর্থ সুস্পষ্টভাবে জানার জন্য এখন এখানে প্রতিটি অংশের ওপর পৃথকভাবে চিন্তা - ভাবনা করা উচিত। এজন্যে দিনে বা রাতের কোনো একটি ভাগ আমাদের বেছে নেয়া উচিত। মাগফেরাত চাওয়া উচিত। এজন্যেই জুম্মার খুৎবায় ইমাম মাগফেরাতের প্রতিযোগিতার কথা বলেছেন। শুধু মৌখিক স্বীকারোক্তির কথা বলেননি। সময় নিয়ে আমলের কথা বলেছেন।

একটি ছোট গল্প দিয়ে শেষ করছি, বাজারে এক বরফওয়ালা জোর গলায় হেঁকে চলছিল --- দয়া করো এমন এক ব্যক্তির প্রতি যার পুঁঁজি গলে যাচ্ছে। দয়া করো এমন এক ব্যক্তির প্রতি যার পুঁজি গলে যাচ্ছে। এটিই হচ্ছে আসলে মানুষকে যে আয়ুষ্কাল দেয়া হয়েছে তা বরফ গলে যাবার মতো দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। একে যদি নষ্ট করে ফেলা হয় অথবা ভুল কাজে ব্যয় করা হয় তাহলে সেটিই মানুষের জন্য ক্ষতি। পুঁজি সহ লোকসানের কবলে পড়ার মত অবস্থা হবে তার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়