জান্নাতুন নাঈম প্রীতি : ভালোবাসা আর প্রেম এক নয়, হঠাৎ আচমকা সারপ্রাইজ না ভালোবাসা। ভালোবাসা আসতে সময় লাগে কেমন করে বুঝলাম জানেন? সম্প্রতি সকালে যখন দেখলাম পত্রিকায় লেখা হয়েছে একজন চম্পা বেগমের কথা। চম্পা বেগমকে আপনি চিনবেন না। সে কোনো নামি তারকা নয়। চম্পা বেগমের স্বামী প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করতেন।
কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানার দুর্ঘটনায় চম্পা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন ‘আমি তো সোহাগীর আব্বুরে প্রথমে চিনিইনি। পরে আমি চুল দেইখা চিনছি। সারা শরীর পুইড়া গেছে গো। চম্পা বেগম তার স্বামীকে বলতেন তুমি এতো দূরে থেকে খাইতে আইয়ো কেন? যাইতে যাইতে তো তোমার পেট খালি হয়া যাইবো। তখন সোহাগীর আব্বু ওরফে তার স্বামী তাকে বলতো, দুপুরে আমি খালি ভাত খাইতে আই না তরে দেখতে আই। তরে না দেখলে আমরা ভালো লাগে না’। জি, এটাই ভালোবাসা। চম্পা বেগমের স্বামী পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে কাতর হয়ে তার বউয়ের বোনকে বলেছেন চম্পা বেগমের পাশে থাকতে। কারণ তিনি সম্ভবত মারা যাবেন। বলেছেন, আমার মেয়ে সোহাগী আর স্ত্রী চম্পাকে তোমরা দেইখা রাইখো।
আমি মনে হয় বাঁচমু না। হ্যাঁ যুদ্ধক্ষেত্রে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের প্রেমে পড়েন মার্থা গেলহর্ন, ফিজিক্স ক্লাসে আইনস্টাইনের মিলেভার সঙ্গে প্রেম, অথবা নেপোলিয়ন প্রেমে পড়ে যান জোসেফাইনের। সেসব নিয়ে সিনেমা হয়, উপন্যাস লেখা হয়, কোথাও লেখা হয় না প্রেমগুলো ছিলো ক্ষণস্থায়ী। কোথাও লেখা হয় না প্রেমগুলো আচমকা সারপ্রাইজের মতো ছিলো। তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়ার মতো ছিলো না, দগ্ধ শরীরের জ্বালা নিয়ে প্রবল কষ্টে আর ব্যথায় চম্পা বেগমকে দেখতে চাওয়ার আকুতির মতো ছিলো না। চম্পা বেগমের স্বামী হয়তো আর দুদিন পরই মারা যাবে। সেই খবর ছাপা হবে না কোথাও। একদিন চম্পা বেগম তার স্বামী হারানোর শোকও কাটিয়ে উঠবে। কেবল কোনো এক জোছনা রাতে ছাতিম ফুলের গন্ধ পাওয়ার পর চম্পা বেগম আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে তার ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে পাবে। চাঁদের গায়ের পোড়া দাগগুলোকে তার স্বামীর পোড়া শরীরের মতো লাগবে। মহাকাল জানবে না ভালোবাসা কি, কেবল চম্পা বেগম নামের সাধারণ এক খেটে খাওয়া নারী জানবে তার একজন ভালোবাসার মানুষকে সে চাঁদের গায়ের এবড়োথেবড়ো দাগগুলোতে দেখতে পায়। নিষ্ঠুর পৃথিবীতে এই-ই বা কম কীসের? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :