নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফতেয়াবাদে শতবর্ষী পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন অধ্যাপক অলক রায়। সমকাল
চট্টগ্রামের অত্যন্ত পুরোনো ও ঐতিহাসিক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো ফতেয়াবাদ রামকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যার বয়স ১০৩ বছর। বিদ্যালয়ের সামনে থাকা পুকুরের বয়সও প্রায় ১০৩ বছর। স্থানীয়ভাবে পুকুরটি তালতইল্যা পুকুর নামে পরিচিত। তবে ৪৮ শতাংশ আয়তনের স্মৃতিময় শতবর্ষী এই পুকুরটি বিলীন হয়ে গেছে ভরাটে। যে কারণে বর্তমানে হারিয়ে গেছে পুকুরটির অস্তিত্ব।
পুকুরটি ভরাট করা জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে একটি গার্মেন্ট কারখানা। এজন্য গোপনে পুকুরের কয়েক পাশে দেওয়া হয়েছে বাউন্ডারি দেয়ালও। পুকুরের স্থানে গার্মেন্ট নির্মাণের খবরে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এটি নির্মাণ করা হলে পুকুরের পাশে থাকা তিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র যাতায়াত পথটি বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ভরাট করা বা শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। কেউ এমন আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি হিসেবে জেল-জরিমানার কথা বলা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার সমকালকে বলেন, 'শতবর্ষী পুকুর ভরাট করে গার্মেন্ট নির্মাণ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে আমরা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয়রাও ওই স্থানে একটি শতবর্ষী পুকুর থাকার বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে গার্মেন্ট মালিকদের আমরা নোটিশ দিয়েছি। আমরা এখন দেখব দলিলমূলে আসলে জায়গাটি কী নামে আছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, জায়গাটির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে। পুকুর ভরাটে আইনে নিষেধাজ্ঞা আছে। কোনো প্রকার তথ্য গোপন করে কিংবা তথ্য পরিবর্তন করে যদি মালিক পক্ষ পুকুর ভরাট করে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামগ্রিক তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই, সব পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহসহ যাবতীয় কাজ শেষ করে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করব।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে ও জায়গা মেপে আমরা এর ওপর নির্মিত অবৈধ দেয়াল ভেঙে দিয়েছি। সেই সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষকে তাদের জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছি। গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্কুলের খেলার মাঠ দখল করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। শতবর্ষী পুকুরের স্থানে গার্মেন্ট নির্মাণ করতে গিয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পরিবেশ আইন ভঙ্গ করেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসন পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে।
তিনি জানান, গার্মেন্টটি নির্মাণ করা হলে ওই স্থানে থাকা দুই স্কুলের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান পথটি বন্ধ হয়ে যাবে। জায়গাটি মাপার পর দেখা গেছে, রাস্তার ওই জায়গাটি স্কুলের দখলে আছে।
ওই জায়গায় শতবর্ষী পুকুর থাকার বিষয়টি জানা নেই উল্লেখ করে এ বিষয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ তুষার ইমরান বলেন, 'গার্মেন্ট কারখানা গড়ে তোলার স্থানটি নাল জমি হিসেবেই ওই জায়গার মালিক প্রণব কান্তি পাল (নটু পাল) থেকে ক্রয় করেছি। দেশের শিল্পায়ন ও স্থানীয় এলাকার মানুষদের উন্নয়নে জমির কাগজপত্র দেখে জায়গাটি কেনা হয়েছিল। এতদিন পরে এসে শুনছি ওই স্থানে নাকি শতবর্ষী পুকুর ছিলো। কিন্তু আমরা ওই জায়গায় গিয়ে পুকুরের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাইনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক অলক রায় বলেন, আইনকানুন না মেনেই শতবর্ষী পুকুর ভরে গার্মেন্ট নির্মাণের পাঁয়তারা করা হচ্ছে, যা অযৌক্তিক ও সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত। স্থান সংকুলানের অভাবে পুকুর ভরাটের স্থানটিতে তিন স্কুলের কয়েকশ' শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন অ্যাসেমবিø করা হয়। স্থানটিতে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলাও করে থাকে। গার্মেন্ট নির্মাণ হলে এসব বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি দুই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রধান চলাচল পথটিও বন্ধ হয়ে যাবে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের ওপর। শতবর্ষী পুকুরটি সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাসও।'
পুকুর ভরাট করে গার্মেন্ট নির্মাণের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার ফতেয়াবাদ রামকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী। এতে স্কুলের কয়েকশ' শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সচেতন নাগরিকসহ স্থানীয়রা অংশ নেন। বিভিন্ন প্রতিবাদী ¯স্লোগান সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান তারা। যে কোনো মূল্যে এমন সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য সংশ্নিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান আন্দোলনকারীরা।
আপনার মতামত লিখুন :