যুগান্তর : গণহত্যা নিয়ে মিথ্যাচার করায় মিয়ানমারনেত্রী ও দেশটির সরকারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির ওপর বেজায় চটেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। বুধবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরের আন্তর্জাতিক আদালতে সু চি যখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে তখন টেলিভিশনের সামনে বসেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা।
খাঁচায় বন্দি বাঘের মতো গর্জন করছিলেন তারা। সু চির একের পর এক মিথ্যা কিছুতেই সহ্য হচ্ছিলো না তাদের। হাতের মুঠোয় ঘুষি পাকিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছিলেন, সব মিথ্যে কথা। ডাহা মিথ্যে কথা! গণহত্যা নিয়ে সু চি মিথ্যে বলছেন! রাগে-ক্ষোভে দাঁত কামড়াচ্ছিলেন তারা। পায়ের চটি হাতে টিভির সামনে ছুটে যান অনেকে। ভিড় ঠেলে হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বলছিলেন, হাতের কাছে পেলে ওই ডাইনিকে জুতাপেটা করতাম। খবর রয়টার্স ও আলজাজিরার।
আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিন বুধবার মিয়ানমারের বক্তব্য শোনেন আদালত। এদিন সু চি আদালতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যা চালানোর পুরোটাই অস্বীকার করেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, তার দেশের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ‘বিভ্রান্তিকর ও খণ্ডিত।’ সেনাবাহিনীর গণহত্যার মুখে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রাখাইনে সেনাবাহিনীর ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের মধ্যে ভয়ের কারণে’ পালিয়ে গেছে রোহিঙ্গারা। তবে নিজের বক্তব্যে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ‘কয়েকজন’ বলে উল্লেখ করেন সু চি।
কুতুপালং শিবিরে টিভি ঘরের সামনে থেকে ষাটোর্ধ রোহিঙ্গা আবদুল করিম বলেন, রোহিঙ্গারা ভয়ের কারণে পালিয়ে এসেছে, সু চির এ বক্তব্য আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। ও সেনাবাহিনী আর মগদের (বৌদ্ধ অধিবাসী) তুষ্ট করতে এসব মিথ্যে বলছে।
২০১৭ সালে রাখাইনের মংডু থেকে পালিয়ে আসা করিম এবার ভেজা কণ্ঠে বলতে থাকেন, সেনারা আমার ভাই-ভাবিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা সেদিন যখন বাংলাদেশের সীমানার কাছে পৌঁছে গেছি, তখন তাদের পেছন থেকে গুলি করা হয়।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, পুরো বিশ্ব গণহত্যার প্রমাণ দেখেছে। তারা গণহত্যা চালায়নি বলে যে দাবি করছে তার বিচার করবে বিশ্বই।
কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এ রোহিঙ্গা নেতা বলেন, কোনো চোরই স্বীকার করে না যে সে চোর। কিন্তু প্রমাণের মাধ্যমে তাকে ন্যায়বিচারের আওতায় আনা হয়। তিনি আরও বলেন, সু চি মিথ্যা বলেও ছাড় পাবেন না। তাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বিশ্ব তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
আপনার মতামত লিখুন :