আক্তারুজ্জামান : চার বোনের মধ্যে অন্তরাই সবার বড়। তাই দায়িত্বটাও সবার চেয়ে বেশি। দায়িত্বের ভার বইতে বইতে দেশের ভার কাঁধে নেয়াটা আরো সহজ হয়েছে তার জন্য। এমনকি বিদেশের মাটি থেকে দেশকে এনে দিয়েছেন স্বর্ণ জয়ের সম্মান। বলছিলাম এবারের দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ) বাংলাদেশের প্রথম পদক ও দ্বিতীয় সোনা উপহার দেয়া হুমায়রা আক্তার অন্তরার কথা। যিনি ১৩তম আসরে বাংলাদেশের ৩টি স্বর্ণ জয়ে ভূমিকা রেখেছেন। তবে নেপাল থেকে দেশে ফিরেই জানিয়েছেন, পুরস্কারের থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাবেন তিনি।
বাবা-মা ও তিন বোনসহ পল্টনে দুই কক্ষের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন হুমায়রারা। বাবা আশরাফুল আলম মামুন ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালান। মা জাহানারা বেগম গৃহিনী। চার বোনের লেখাপড়ার খরচ শেষে বাকি টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খান আশরাফুল আলম। এই সংকটের মধ্যে বেড়ে ওঠা হোমায়রা আক্তার অন্তরা শেফা এখন দেশের খেলাধুলায় উজ্জ্বল মুখ।
কারাতের একক কাতায় পেয়েছিলেন ব্রোঞ্জ। পরে স্বর্ণ জিতেছেন একক কুমিতে আর দলগত কুমিতে রৌপ্য। ৩ স্বর্ণ, ৩ রৌপ্য ও ১২ ব্রোঞ্জ জেতা কারাতে দল গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরেছেন। পরদিন হুমায়রা শুনিয়েছেন তার কারাতে খেলোয়াড় হওয়ার গল্প। শুনিয়েছেন তার কষ্ট করে বেড়ে ওঠার কথা, অসুস্থ মা এবং তাদের চার বোনকে নিয়ে তার বাবার মাথার ঘাম পায়ে ফেলা পরিশ্রমে সংসার চালানোর কাহিনী।
দেশের নাম উজ্জ্বল করে মেয়ে যখন বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছেন তখন তাকে আনতে যেতে পারেননি হুমায়রার মা। কেন মা যেতে পারেননি সেটা খোলাসা করেছেন অন্তরা নিজেই। ‘আমার মা অসুস্থ। বাইরে বেশি বের হতে পারেন না। তাই বিমানবন্দরে যাননি। বাবাও কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আমি সবার সঙ্গে রিজার্ভ বাসেই চলে এসেছি।’
আনসারের নিয়ম অনুযায়ী, স্বর্ণ জিতলে সম্মানী সর্বোচ্চ ১৩ হাজার টাকা। অন্তরা এবং সুমী জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম স্বর্ণ জেতেন গত বছর। এর মধ্যে সুমী জুনিয়রে এবং অন্তরা সিনিয়রে। তাও জিতেছেন তিনটি স্বর্ণ। কারাতেতে অন্তরাই একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি অংশ নেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তিন ইভেন্টে এবং তিন ইভেন্টেই স্বর্ণ জেতেন। একাধিক ইভেন্টে খেলতে পারদর্শী বলেই অন্তরাকে এসএ গেমসেও তিনটি ইভেন্টে খেলিয়েছেন কারাতের জাপানী কোচ। তিনটিতেই পদক (স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জ)। এবারের এসএ গেমসে ব্যক্তিগতভাবে পদক জয়ে এখনো বাংলাদেশের সেরা পারফরমার এই অন্তরা।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তিন পদক জয়ে ভূমিকা রাখায় বেশ কিছু অর্থ পাবেন অন্তরা। একটি স্বর্ণের জন্য ৬ লাখ, ব্রোঞ্জের জন্য ১ লাখ আর দলগত সোনার জন্য আরো এক লাখ। সবমিলিয়ে মায়ের চিকিৎসার জন্য বড় অংকের টাকাই উঠতে যাচ্ছে অন্তরার হাতে।
আপনার মতামত লিখুন :