জেবা আফরোজ : কুষ্টিয়ার মেয়ে তসলিমা আক্তার লিমা। নিজের দুই স্তানেরচাহিদা মেটাতে গিয়ে হয়ে গেলেন স্বাবলম্বী। মাত্র দুই হাজার টাকা দিয়ে শিশুদের পোশাক তৈরি করে দেশ-বিদেশে সরবরাহ করছেন তিনি।
বিবিসির একটি প্রতিবেদনে উঠে আসলো জীবন সংগ্রামের গল্প............
কীভাবে আলিয়ার উদ্যোক্তা হলে তসলিমা আক্তার লিমা জানালেন নিজেই। তসলিমা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই হাতের কাজের প্রতি আমার খুব বেশি আগ্রহ ছিলো। সুঁই সুতার কারুকাজ করতে অনেক ভালো লাগতো। হঠাৎ করে মনে হলো কিছু একটা করবো এবং সেটা ঘরে বসেই করতে হবে। কারণ আমার দুই বাচ্চা আছে। যে কারণে ঘরের বাইরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তখন ঘরে বসেই আমি এই ভাবনাটা কাজে লাগাতে শুরু করি।’
২০১৮ সালে বাচ্চাদের পোশাক বানানো দিয়ে কাজ শুরু করেন তসলিমা। এরপর সেটি প্রচার হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পেইজ খুলেন। পরে বানানো পোশাকগুলো ওখানে বিক্রি করতে শুরু করেন।
এই প্রসঙ্গে তসলিমা বলেন, ‘আমার বাচ্চগুলো ছোট হওয়ায় পোষাক বানানো সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে পেরেছিলাম। কারণ তাদের বয়সের পোশাক বানানোর চিন্তাই আগে মাথায় আসে। এছাড়া হাতে পুঁজিও ছিলো কম। এতো কম পুঁজিতে এই সিদ্ধান্তটাই ভালো ছিলো। প্রথমে মাত্র ১৫ পোশাক ডিজাইন করলাম, এতে আমার খরচ পড়লো দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মতো । সেই ১৫ টা পোশাক এক ঘন্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে গেলো। পোশাকগুলের এতো চাহিদা ছিলো আমি আর কাউকে দিতে পারছিলাম না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া আমার কাছে কিছু ফেব্রিক ছিলো। বুজে উঠতে পারছিলাম না এইগুলো কীভাবে কাস্টমারের কাছে পৌঁছাবো। ভাবতেই পারিনি এগুলো কেউ কিনবে। পরে দেখলাম ফেব্রিকগুলোও বিক্রি হয়েছে। এভাবে বিক্রি করতে করতে প্রতি মাসে আমার কাছে ৩-৪ হাজার টাকা থাকতো, যা যথেষ্ট ছিলো। এখন রিলাক্সে কাজ করলেও প্রতি মাসে ৫০ হাজারের বেশি আয় হয়।
তার ভাষ্য, ‘প্রথম যখন এই উদ্যোক্তা নিয়েছিলাম তখন একাই কাজ করেছি। এক মাস পরে বুজতে পারলাম কাজটি একা করা সম্ভব নয়। তখন আরো কিছু কর্মী নিলাম। আমার এখানে এখন ৬জন কর্মী কাজ করছেন। এখানে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে দুজন এই আয় দিয়ে সংসার চালান। এখন আমার আরো ৮-৯ জন কর্মী লাগবে।’
তসলিমার পোষাক বর্তমানে সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের বাইরে যাচ্ছে এই পণ্য। ইন্টারনেট সুবিধার কারণে কুষ্টিয়ায় থেকেও ব্যবসা করতে সমস্যা হচ্ছে না তসলিমার। এই অনলাইনের কারণে পুরো পৃথিবীটাকে হাতের মুঠোয় মনে হচ্ছে তার। ল্যাপটপ ব্যবহার করার সময় নেই তাই মোবাইল দিয়েই সব কাজ করছেন তিনি।
ঘর-সংসার ও বাচ্চা সামলে নিয়ে পণ্যের অর্ডার নেয়া থেকে ডেলিভারি সব একাই করেন তসলিমা। তার সবচেয়ে বড় সুবিধা শুশুর বাড়ির সহযোগিতা পেয়েছেন। তার মতে, নিজের বাবার বাড়ি হয়তো এতোটা সহযোগিতা করতো না। বরং বলতো কিসের ব্যবসা, ঘরে থেকে সংসার চালাও। সম্পাদনা : রাশিদুল
আপনার মতামত লিখুন :