শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:৫৪ দুপুর
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:৫৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এবার ভর্তি জালিয়াত চক্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থী

ফজলুল হক, জাককানইবি প্রতিনিধি : দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময় তৎপর হয়ে উঠে এই ভর্তি জালিয়াত চক্রটি। 'প্রক্সি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস' এই দুই পদ্ধতিতেই সিন্ডিকেট পরিচালনা করে থাকে তারা। বর্তমানে প্রক্সি জালিয়াতি করে অবৈধ অর্থোপার্জন যেনো তাদের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় আছে এই চক্রটি। বড় অঙ্কের (৩ লাখ) টাকার বিনিময়ে প্রতি পরীক্ষার্থীকে চান্স পাইয়ে দেয়ার শর্তে লেনদেন করে থাকে এই চক্রটি।

সম্প্রতি এইসব কথা উঠে এসেছে জালিয়াত চক্রের এক সদস্যের ফাঁস হওয়া ৭ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডে। যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ১৮১২৩৮৩৯ রোলধারী ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার নাম সাব্বির রহমান।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার পূর্বে এক শিক্ষার্থীকে প্রক্সি প্রক্রিয়ায় ভর্তি করিয়ে দিবে এমন একটি চুক্তি করার কথোপকথন রেকর্ড আকারে ফাঁস হয়। যেখানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের  ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শফিক খানের সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে এসেছে। ফাঁস হওয়া রেকর্ডে বলা হয়েছে, শফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সিন্ডিকেট। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে ঝামেলা হলে সব সমস্যার সমাধান করে থাকে শফিক খান। তার এই ভর্তি বাণিজ্যের উপার্জিত অর্থে বিলাস বহুল জীবন যাপন করে।

তার হাতের ঘড়ি, মোবাইল, বাইক, মাইক্রোর মূল্য অনেক। শুধু ঘড়ির দামই ২0 হাজার টাকা। প্রতিদিন ২ প্যাকেট সিগারেট আর মদ নিয়ে বসায় আসর। প্রতি সিজনে ৫০ লাখ টাকা আয় তার। এই সকল প্রকার ব্যায়ের কোনো অর্থ সে বাসা থেকেও আনে না বলে জানা যায় এই চক্রের সদস্য সাব্বিরের মুখে। এমনকি শফিক নিজেও জালিয়াতি করে ভর্তি হয় বলে জানা যায় এই ফাঁস হওয়া রেকর্ড থেকে। এই ভর্তি পরীক্ষায় ৭ জন পরীক্ষার্থী আছে সাব্বিরের, যাদের প্রক্সি জালিয়াতি করে ভর্তি করা হবে। তার একমাত্র ইচ্ছা এইবারের টাকা দিয়ে একটা বাইক কিনবে।

সাব্বির কেবল কবি নজরুল নয় জাহাঙ্গীরনগর, শাবিপ্রবি, মাওলানা ভাসানীতেও তার চক্রের মাধ্যমে জালিয়াতি করে থাকে বলে ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়। চক্রের অন্যতম প্রধান হোতা শফিক খান এর পূর্বেও জালিয়াত করে প্রশাসনের কালো তালিকায় এসেছিলো। কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই সে তার স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করে। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ডি’ ইউনিট- এ প্রথম শিফট এর প্রকাশিত ফলাফলে জালিয়াতি করে পঞ্চম স্থান অধিকার করে এই চক্রের আশ্রয়ে আসে এক পরীক্ষার্থী। নাম মারুফ রহমান যার রোল ১৩৮৫৮। সে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তুষার জিন্না ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আপেল মাহামুদ আকাশ এর মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শফিক-সাব্বির সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে।

যার স্বীকারোক্তি দিয়েছে স্বয়ং জালিয়াতি করে ভর্তি হতে আসা আটক শিক্ষার্থী মারুফ রহমান। অভিযুক্ত তুষার জিন্না ফুলবাড়িয়া ইসলামী কলেজের আইসিটি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করছে। গত বৃহস্পতিবার ৫ ডিসেম্বর ভর্তি হতে এসে আটক হওয়া শিক্ষার্থী মারুফ রহমানের জবানবন্দী অনুযায়ী সাব্বির তার মোবাইল ফোনসহ সাথে আনা ব্যাগ নিয়ে যায়।

এবিষয়ে শফিক খান, সাব্বির রহমান ও তুষার জিন্নার সাথে একাধিক ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ দেখায় এবং তুষার জিন্না বর্তমানে পলাতক আছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্য দিকে আপেল মাহমুদ আকাশের মুঠোফোনে জানায় এটি মিথ্যা এগুলোর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমি কেবল তুষার ভাইয়ার কথায় মারুফের বাসায় কথা বলেছি।

সাব্বিরের জড়িত থাকার বিষয়ে স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তানিয়া আফরিন তন্বী বলেন, অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনবে প্রশাসন। তবে সাব্বিরের নামের সাথে যেহেতু আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয়টা রয়েছে। আমরা রবিবার বিভাগের শিক্ষকরা বসে এবিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবো।

জালিয়াত চক্রে সিএসই বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এ এইচ এম কামাল বলেন, যেহেতু বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে আমরা একাডেমিকভাবে বসবো এবং কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে যেন ভবিষ্যতে এমন আর কেউ না করতে পারে। তুষার জিন্না নামের শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ড্রপ আউট তাই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর শফিক যদি সংশ্লিষ্ট থাকে এই কাজের সাথে তবে বিভাগ অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে।

উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর আটক হওয়া জালিয়াতি করে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী মারুফ রহমানসহ আরো ৩ জনের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যার সত্যতা নিশ্চিত করেছে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, জালিয়াতি করে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী আটক হয়েছে এবং তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং তার দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো দুজন শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে এসেছে। যদি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সম্পাদনা : জেরিন মাশফিক

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়