দীপক চৌধুরী : বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেছেন, মুজিব বর্ষে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাবো। এটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে স্বীকার করতেই পারি যে, ২০২১ সালে সকল উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ দেবো। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চকে মুজিব বর্ষ হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে একান্তভাবে কথা বলার সময় বিদ্যুতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে সিনিয়র সচিব অনেক কথা বলেন। বিদ্যুতের অগ্রগতি ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবেই উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের সমাজে বিদ্যুৎ কীভাবে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। এর বিশদ বর্ণনাও শোনা গেছে তার কণ্ঠে। এখানে সেসব কথার চুম্বক অংশ তুলে ধরছি।
বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থা ও পরিবেশ সম্পর্কে আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘বিদ্যুৎ যদি থাকে তাহলে দিন-রাতের মধ্যে পার্থক্য থাকে না। কাজ আমরা বেশি করতে পারি। সেটা গৃহস্থালী কাজ হোক বা রাষ্ট্রীয় কাজই হোক না কেন। লেখাপড়া, বিনোদন, পারিবারিক কাজ অথাৎ সর্বত্র এর প্রভাব পড়ে। আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। আমাদের অন্যান্য টেকনিক্যাল ক্ষমতাও বাড়ছে। গার্মেন্ট সেক্টরে দুই-তিন শিফটে এখন কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সকল নাগরিককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। এবং এর সংস্কার ও পুনর্গঠনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। একসময় ছিল বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশ,এখন উদ্বৃত্বের দেশ।’
এক প্রশ্নের জবাবে আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘বিদ্যুৎখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা। বেসরকারী খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে উৎসাহ ও প্রণোদনার ব্যবস্থাকরণ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ আমদানীর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। তিনি বলেন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, প্রি-পেইড মিটার স্থাপন, অন লাইন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসহ সকল কাজে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আহমদ কায়কাউস বলেন, ২০০৯ সালের সরকার গঠনের পর একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিদ্যুৎকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এখন আমাদের সবার দায়িত্ব হলো এই বিদ্যুৎ ব্যবহারে আমরা যেন সাশ্রয়ী হই। বিদ্যুৎ অপচয় যেন না হয়। আহমদ কায়কাউস বলেন, সরকারের ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ অর্জনের লক্ষ্যে আমরা ২৪ হাজার মেগাওয়াট , ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট, ও ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’
বিদ্যুৎ বিভাগের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সাধনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ক্রমান্বয়ে উন্নত দেশে পরিণত করতে বিদ্যুৎখাতে যথাযথ ভূমিকা পালন করার জন্য বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট সকল কর্মী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দানের পাশাপাশি ইউটিলিটিসমূহ প্রশিক্ষণের ভৌতসুবিধা বৃদ্ধির বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎখাতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ উদ্যোগটি অচিরেই বাস্তবায়ন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যেন মনে প্রাণে বিশ্বাসকরি, এদেশের সম্পদ জনগণের। কাজেই এই সম্পদকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে।’
বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘জ্বালানি নরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে একক জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে জ্বালানি বহুমুখীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একই সাথে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের প্রসার, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রকার জ্বালানি প্রাপ্যতা এবং আন্তর্জাতিক বাজার দর বিবেচনা করে জ্বালানি বৈচিত্রায়নকে কৌশল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।’ #
আপনার মতামত লিখুন :