শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:০৮ দুপুর
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:০৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি, সাড়ে ৯টা থেকে সোয়া ১টা

এস এম নূর মোহাম্মদ : কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে দফায় দফায় হট্টগোল ও হাতা-হাতির ঘটনা ঘটেছে আপিল বিভাগে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর সোয়া একটা পর্যন্ত আদালত কক্ষে অবস্থান করেন বিএনপির আইনজীবীরা। এমনকি বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বাথরুমে যেতে চাইলে তাতেও বাধা দেয়া হয়। এসময় জামিন ছাড়া অন্য কোন মামলা শুনানি করতে দেননি তারা। বিরতির পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি অন্য একটি মামলা শুনানি করতে চাইলেও হট্টগোলের কারনে তা সম্ভব হয়নি। আর এ বিষয়টিকে নজির বিহীন উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ৭ নম্বর ক্রমিকে ছিল খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি। ক্রমানুসারে আবেদনটি শুনানির জন্য আসলে খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্ট দিতে সময় চেয়ে আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এসময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদন বলেন, আমাদের কাছে মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট রয়েছে। এটি দিচ্ছি দেখেন। তার শরীরের অবস্থা ভালো না।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কিসের বোর্ড? এই বোর্ড তো কর্তৃপক্ষ করেনি। জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা মানবিক কারনে এসেছি। বেগম জিয়া অসুস্থ। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা যে রিপোর্ট চেয়েছি সেটা আসুক। আগামী ১২ ডিসেম্বর শুনবো। ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। জয়নুল বলেন, এটা অবিচার হবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা তো রিপোর্ট চেয়েছি।

জয়নুল বলেন, এখান থেকে রিপোর্ট আসতে তো এত সময় লাগার কথা না। আগামী রোববার বা সোমবার রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন। এসময় বিএনপির আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করেন। একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এগিয়ে গিয়ে বলেন, মেডিক্যাল রিপোর্ট না আসার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল দায়ী। উনি যেটা উপদেশ দেয় মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ সেটাই করে। আমাদের রিপোর্ট দেখেন। সন্দেহ হলে খালেদা জিয়াকে এখানে আনেন। এসময় আবারও হট্টগোল শুরু করেন বিএনপির আইনজীবীরা। তারা বলেন, জামিন শুনানি না হলে আমরা এখান থেকে কেউ যাবো না। এসময় হট্টগোলের মধ্যে আট মিনিট চুপ করে বসে থাকেন বিচারপতিরা। পরে সকাল ১০টার দিকে তারা এজলাস ত্যাগ করেন। এসময় বিএনপির আইনজীবীরা বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে অশ্রাভ্য ভাষায় মন্তব্য করেন। কিছুক্ষণ পর আদালতের বেঞ্চ অফিসাররাও বাইরে চলে যান।

বিচারপতিরা এজলাসে না থাকলেও আদালতে অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপির আইনজীবীরা। এসময় বাইরে থেকে চকলেট এনে বিলি করা হয়। ১০.৪৫ মিনিটের দিকে আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা। তারা এরজন্য ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি দাবি জানান।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবারও ছয় বিচারপতি এজলাসে আসেন। এসময় আবারও জয়নুল দাড়িয়ে কথা বলতে চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এখন অন্য কিছু শুনবো না। সব কিছুর, বাড়া-বাড়ির একটা সীমা আছে। আজকে যে অবস্থা হয়েছে আগে কখনো আমরা এমনটা দেখিনি। এটা নজীরবিহীন। জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা তো আপনার কাছেই আসি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা কাগজ দেখে বিচার করবো। কে কি বলেছে সেটা বিষয় না। এসময় জয়নুলকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার বিরুদ্ধে কয়টি মামলা। সবই জামিনে আছেন।

এক পর্যায়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন কথা বলতে দাড়ান। এসময় আদালত বলেন, এটা নিয়ে আমরা কোনো কথা শুনবো না। এই আইটেম মুলতবি করেছি। আদেশ হয়ে গেছে। এসময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন দাড়িয়ে আদেশ রিভিউ করার আবেদন করেন। খোকন বলেন, আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। দয়া করে রিভিউ করেন। আমরা দয়া চাচ্ছি। প্রয়োজনে বেগম জিয়াকে এখানে নিয়ে এসে দেখেন।

আদালত বলেন, সবাই বলেছে বৃহস্পতিবারের আগে শুনবে না। এসময় খন্দকার মাহবুব হোসেন এগিয়ে বলেন, শেষ কথা বলতে চাই। আদালত বলেন, আমরা কোনো কথা শুনবো না। এসময় তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মওদুদ হোসেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বের হতে চাইলে তাদের বাধা দেন বিএনপির অন্য আইনজীবীরা। এসময় এক আইনজীবী দাড়িয়ে চিৎকার করে বলেন, আমাকে ফাঁসি দেন। কত জনকে ফাঁসি দিবেন? তখন আবারও হট্টগোল শুরু করেন আইনজীবীরা।

একপর্যায়ে আট নম্বর আইটেম ডাকলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি শুনানি করতে এগিয়ে যান। এসময় বিএনপির আইনজীবীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন জামিন শুনানি ছাড়া আজকে অন্য কোনো আইটেম হবে না। একপর্যায়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা আবারো উঠে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেয়া হয়। এসময় তাদের যেতে সহযোগীতার জন্য জন্য আওয়ামী লীগের কয়েকজন আইনজীবী এগিয়ে গেলে বিএনপির আইনজীবীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়।

কিউসি শুনানি করতে চাইলে থেমে থেমে চলে স্লোগান। তবে দুপুর সোয়া ১২টা থেকে থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত টানা স্লোগান দেন বিএনপির আইনজীবীরা। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ছাড়াও মাঝে মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে বলে স্লোগান দেন তারা। এক আইনজীবী এসময় একটি ছোট প্লে-কার্ডও তুলে ধরেন আদালতে। এরই মধ্যে ঘটে আবার হাতাহতির ঘটনা। এসময় কিউসি শুনানি করতে না পেরে ঠাই দাড়িয়ে ছিলেন। আর পুরোটা সময় চুপ ছিলেন আদালতও। দুপুর সোয়া ১টায় আদালতের সময় শেষ হলে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারপতিরা। পরে বের হয়ে যান সব আইনজীবীও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়