শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৮:২৩ সকাল
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৮:২৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হলেও মেলেনি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি

এইচ এম মিলন, কালকিনি : ৭১’র রণাঙ্গনে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রাজদী গ্রামের এমএ কাদের সিদ্দিকীর বড় ছেলে শহীদ নুরুল আলম পান্না তখন ছিলেন একজন টগবগে তরুণ। তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর। বরিশাল জেলার গৌরনদী সরকারি কলেজের ডিগ্রির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি তখন। তাকে ওই কলেজের সবাই গরীবের বন্ধু হিসেবেই চিনতেন। তিনি নিজের পকেটের টাকা খরচ করে গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করতেন। চলা-ফেরা ও কথা-বার্তায় ছিলো নিজস্ব স্বকীয়তা। দেশপ্রেমিক, পরোপকারী, আত্মপ্রত্যয়ী, স্বাধীনচেতা ও উদ্যমী এক যুবক।

১৯৭১ সালে দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তখন দেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শহীদ নুরুল আলম পান্না ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। তিনি তখন লেখা-পড়া ছেড়ে দিয়ে দেশ শত্রুমুক্ত করার জন্য চলে আসেন নিজ গ্রাম উপজেলার দক্ষিণ রাজদীতে। তিনি ১৯৭১ সালের মে মাসে যোগদেন ৩০৩ নম্বর রাইফেলে। তখন মেজর মনজুরের নেতৃত্বে ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে কালকিনি অঞ্চলে নুরু কবিরাজের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। যুদ্ধকালীন সময় তার একটাই প্রধান কাজ ছিল পাক হানাদার বাহিনীর গোপন সংবাদ সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। তিনি গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে একাত্তর সালের ১০ অক্টোবর কালকিনি উপজেলার এনায়েতনগর এলাকার ফাসিয়াতলা বাজারে যান। সেখানে তিনি রাজাকারদের হাতে আটক হন। পরে তাকে পাক হানাদার বাহিনী চোখ বেধে আটক করে মাদারীপুর এ.আর হাওলাদার জুট মিলের মিলিটারি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে বসে তাকে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে পাকবাহিনি। হত্যা করার পর তার মৃতদেহটিও নিশ্চিহ্নকরে ফেলা হয়।

আজ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও তাঁর আত্মীয়-স্বজনের কাছে খোঁজ নিয়ে শুনতে হয় লজ্জাজনক এক ইতিহাস। এতগুলো বছর অতিবাহিত হলে তার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তভুক্ত হয়নি। এবং কি স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও মেলেনি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। শহীদ পান্নার স্মরণে এলাকাবাসীর উদ্যোগে নিজ গ্রাম পৌর এলাকার দক্ষিণ রাজদীতে ১৯৭৩ সালে শহীদ পান্না স্মৃতিসংঘ স্থাপিত করা হয়। যার নিবন্ধন নম্বর ফ-০০৬৬। সেটাও আজ বিলুপ্তির পথে। অর্থাভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ওই ঘরটি। ১৯৮৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রণীত তালিকায় তাঁর নাম অন্তভুক্ত ছিল। কিন্তু চুড়ান্ত তালিকায় তার নাম নেই। অথচ ১৯৯৫ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন জমাদার রচিত ‘মাদারীপুর মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতিকথা’র পঁচিশ পৃষ্ঠায় তার (শহীদ পান্না) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও শহীদ হওয়ার ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে। ১৯৯৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘মুক্তি বার্তা’র দ্বিতীয় বর্ষের দশম সংখ্যায় তার নাম অন্তভুক্ত আছে। শহীদ পান্নার মুক্তি বার্তার নম্বর হলো ০১১০০২০৩৭০।

শহীদ পান্নার ছোট ভাই অধ্যাপক জহিরুল আলম ডালিম ২০০৯ইং সালের ৩ মার্চ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বরাবর একটি আবেদন করেন। তার আবেদনের ভিত্তিতে ২০০৯ইং সালের ৩১ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা প্রশাসক শশী কুমার সিংহ বরাবর একটি আবেদন করেন। কিন্তু তখনও শহীদ পান্নার নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। এরপর ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর উপজেলা পরিষদের সভায় কালকিনি-ভূরঘাটা সড়কের কাঠের পোল থেকে বড়বাড়ি পর্যন্ত সড়কের নাম ‘শহীদ পান্না সড়ক’ নামে করার প্রস্তাব গৃহিত হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শহীদ পান্নার নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য পুনরায় আবেদন করা হয়। এরপরও রহস্যজনক কারণে পান্নার নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। তাই শহীদ পান্নার পরিবার এখনো তাঁর নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রত্যাশায় ও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। তবে ২০১৭ইং সালে সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হলেও সেখানে শহীদ নুরুল আলম পান্নাকে গণ-শহিদ হিসাবে রাখা হয়েছে।

কিন্তু শহীদ পান্নার পরিবারের অভিযোগ, তাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সরকারি চূড়ন্ত তালিকায় তার নাম অন্তভুক্ত করা এখনও হয়নি।

শহীদ পান্নার বড় ছেলে নাফিজ সিদ্দিকী তপু ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম সরকারি তালিকাভুক্ত না হওয়ার কারণ জানি না। তবে আমরা সরকারি কোনো সাহায্য চাই না। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে শুধু চাই আমার বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করা হোক। সর্বশেষ ২০১৭ইং সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হলে আমার পরিবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে আবেদন করেছিলো। এরপর ও রহস্যজনক কারণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় না রেখে গণশহীদের তালিকায় নাম রাখা হয়েছে।

লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে শহীদ পান্নার নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন মঞ্চ নাটকেও তার চরিত্র ও শহীদ হওয়ার কারণ উল্লেখ করেছি। আমি আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে শেষ বারের মত সদয় বিবেচনা করবেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদেও সাবে কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা জাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য মো. আব্দুল জলিল জানান, ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই শুরু হয়। নুরুল আলাম পান্নার ছোট ভাই অধ্যাপক জহিরুল আলম ডালিম কালকিনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির নিকট আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই কমিটির নিকট সঠিক কাগজপত্র ও সাক্ষী উপস্থাপন করতে পারি নাই। যার পরিপ্রেক্ষিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হয় নাই। তারপরও তিনি গণ-শহীদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। তার নাম গনশহিদের তালিকায় রেখে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, পান্নার পরিবারকে সঠিক কাগজপত্র দিয়ে প্রমান করতে পারলে তারপর স্বীকৃতি মিলবে। তবে এ বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ভালো বলতে পারবেন। সম্পাদনা: জেরিন মাশফিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়