কামরুল হাসান মামুনের ফেসবুক থেকে: ডা. জাফরুল্লাহ একজন মুক্তিযোদ্ধা যার দু’টি কিডনি প্রায় বিকল। তাকে সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস করতে হয়। নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অত্যাধুনিক কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার। এটি তিনি মূলত দরিদ্র মানুষের জন্যেই গড়ে তুলেছেন। আর্থিক সামর্থ্যসহ সকল সুযোগ থাকার পরও নিজে বিদেশে গিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করাননি, দেশে করতে চেয়েছেন। দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে দেশের আইনি প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে অসত্য কথা বলে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হতো। অসত্য তথ্য দিয়ে তিনি কারও কিডনি কিনে নিতে চাননি। তিনি দেশের আইনের পরিবর্তন চেয়েছেন। তাই শুরু করেন আরেক যুদ্ধ। এটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি ডোনেশন আইন পরিবর্তনের যুদ্ধ। এইরকম মানুষ দিয়েই এই বাংলাদেশ একসময় পরিপূর্ণ ছিল। এদের জন্যেই আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধটা যদি আজকে করতে হতো আমার মনে হয় এই দেশ কোনদিন স্বাধীন হতো না। চারিদিকে যেমন অসৎ মানুষ দেখছি তাতে মনে হয় অধিকাংশই নিজের সামান্য লাভের জন্য দেশপ্রেম বিক্রি করে দিত।
কিডনি ডোনেশন সম্পর্কে মতামত নেওয়ার জন্য হাইকোর্ট সাত জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে যে কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার সদস্য ছিলেন। তিনি কিডনি ডোনেশন পক্ষে আদালতে তার যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। তবে ভিন্নমত পোষণকারী চিকিৎসকরা অঙ্গদানের বিষয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত না করার পক্ষে অভিমত দিয়েছিলেন। তাদের মতে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ অভাবের তাড়নায় অঙ্গ বেচাকেনায় মেতে উঠবে। আর জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন, টাকা বা সম্পত্তি দান করার মতো অঙ্গদান করতে চাওয়াটা মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই কেবল নিকট আত্মীয়ের মধ্যে দানের প্রক্রিয়াটি সীমাবদ্ধ না রেখে যে কোনো সুস্থ অনাত্মীয় নাগরিকের জন্য অঙ্গদান উন্মুক্ত করতে হবে। তবে এতে মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আইনে তার বিশেষ বিধান রাখতে হবে এবং তিনি জয়ী হয়েছেন। ব্রাভো! ব্রাভো!! ব্রাভো!!!
এই রায়ের ফলে বাংলাদেশের রোগীদের এখন আর ভারতে, শ্রীলঙ্কায় গিয়ে এই চিকিৎসা করাতে ৩০-৪০ লাখ টাকা, সিঙ্গাপুরে ২-৩ কোটি টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আরও বেশি খরচ করতে হবে না। এখন তার চেয়ে অনেক কম খরচে দেশেই অস্ত্রোপচার করাতে পারবেন। জনগণকে আর দেশের বাইরে দৌড়াতে হবে না। এর সততারও জয় হয়েছে। এখন থেকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কাউকে কিডনি কিনতে বা দান করতে হবে না।
সামান্য পাদে গন্ধ হলে যারা ভারত সিঙ্গাপুর দৌড়ান তাদের জন্য উনি একটি স্কুল। শিখুন। বিস্তারিত পত্রিকায় যা কমেন্ট থ্রেডের প্রথম কমেন্টে পাবেন।
আপনার মতামত লিখুন :