শিরোনাম
◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা

প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৫:৫৫ সকাল
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৫:৫৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রাণিসম্পদখাত (এলডিডিপি) প্রকল্পে শতকরা ৫০ ভাগ নারীর অংশগ্রহণ থাকবে

দীপক চৌধুরী : প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস মাংস, দুধ, ডিম। এ খাতে উৎপাদনে বাংলাদেশ ঈপ্সিত লক্ষে সাফল্য অর্জন করতে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর নাম প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)। প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ৪ হাজার ২শ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। যারমধ্যে বিশ্বব্যাংকের লোন সহায়তার পরিমান ৩ হাজার ৮শ ৮৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ৩৯৪ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তাপুষ্ট এ প্রাণিসম্পদখাতে সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পটির সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষকরা উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এ প্রকল্পে থাকবে শতকরা ৫০ ভাগ মহিলা। প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগী দ্বারা নির্ধারিত প্রজাতির গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, এবং পোল্ট্রি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্য থাকবে। প্রকল্প অঞ্চলে প্রাণিসম্পদ উৎপাদক ও ভ্যালু চেইন উদ্যোক্তাদের (শতকরা ৪০ ভাগ নারী) মধ্যে বাজার ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা, দুধ; প্রক্রিয়াজাত দুধজাত পণ্য; জীবন্ত প্রাণী; মাংস; ডিম বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্র বাড়ানো এবং ২০২৩ সালের মধ্যে দেশকে দুধ ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এর লক্ষ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জিডিপিতে স্থিরমূল্যে প্রাণিসম্পদের অবদান রয়েছে। এতে অংকে ১ দশমিক ৪৭ ভাগ এবং প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ৩. ৪৭ ভাগ ও আকার ৪৩ হাজার দুশ ১২ কোটি টাকা।

প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় মাংস, দুধ ও ডিম উৎপাদনে বিভিন্ন সময়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। তবে এসব আমিষের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের আন্তরিকতা রয়েছে। কারণ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ৪৩ দশমিক ৮৪ লক্ষ টন মাছ, ৭৫ দশমিক ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন মাংস, ১৭১০ দশমিক ৯৭ কোটি ডিম ও ৯৯ দশমিক ২১ লক্ষ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়েছে। আন্তরিকতা ও সরকারের মনিটর না থাকলে এ লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হতো বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মনে করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পথ ধরেই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ট পদক্ষেপে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদখাত আয়- রোজগারের খাত হিসেবে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আরো বেশি টেকসই প্রযুক্তি দরকার। সেই লক্ষ্যে কিছুু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুধ, মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি, বাজার সংযুক্তকরণ এবং ভ্যালু চেইন সিস্টেম উন্নতি করা, পশুবীমা, উন্নয়ন এবং নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প’ কাজ শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। আউটসোর্সিং বিষয়ে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগের মাধ্যমে তৃণমূলে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব। এটি প্রাণিসম্পদ বিভাগের ইতিহাসে প্রথম। এর প্রকল্প পরিচালক কাজী ওয়াছি উদ্দিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। সূত্রমতে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দুগ্ধখাতের উন্নয়নে দেশের ৪৬৫ উপজেলায় সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগ লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (এলডিডিপি) গ্রহণ করে। প্রকল্প পরিচালক কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদখাতের অবদান অনস্বীকার্য।

দেশের প্রাণি সম্পদখাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্টি সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পটি ‘জিওবি’র অর্থায়নে করার কথা থাকলেও বারবার বিশ্বব্যাংকের অনুরোধে বাংলাদেশ তা গ্রহণ করে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। যা পদ্মাসেতুর ভিত্তিহীন অভিযোগের ফলে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তা বন্ধের পর প্রথম ও সর্ববৃহৎ আর্থিক সহায়তা পুষ্ট প্রকল্প। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি অনুমোদনের পর চলতি বছরের এক জানুয়ারি থেকে প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আর তা বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একদল যোগ্য ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’ কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মতাদর্শবিরোধী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ দুধ, মাংস, ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক তা চায় না।’ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদখাত সংক্রান্ত অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানী আয় বাড়াতে এ খাতের অবদান অনস্বীকার্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী দেশ। সুতরাং আমরা মৎস্যসম্পদ নিয়ে এদিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কিছু পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়েছে। এলডিডিপি প্রকল্পের জন্য প্রাণিসম্পদের উদ্যোগে ডিএলএস স্টাফ ট্রেনিং ও প্রফেশনাল ডেভলপমেন্ট শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু হয়েছে। এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য বেশ কিছু জেলায় ইতিমধ্যে জনবল মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এলডিপিপির উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ৬০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ কোর্সে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রায় সারাদেশব্যাপী সেসব কর্মকর্তা রয়েছেন। ঢাকার পাবলিক হেলথ শাখার এলআরআই (মহাখালী), গাজীপুর, বরিশাল, কুড়িগ্রাম, কুমিল্লা, পটুয়াখালি, ভোলা, ঠাকুরগাঁও, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, চাঁদপুর, পঞ্চগড়, বরগুনা, নীলফামারী, জয়পুরহাট, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ও উপজেলায় কর্মরত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের ন্যাশনাল লাইভস্টক ট্রেনিং ইন্সটিটিউট বিকে বাড়ী, সাভার ওটিআইয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনেই ডেইরী ও গোবাদিপশুর খামার বাড়ানো দরকার জাতীয় স্বার্থে। ছাগল ও ভেড়া পালনে, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণে,মহিষ ও গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণে আমরা যদি কৃষক ও গ্রামের যুবশ্রেণির তরুণ-তরুণিদের প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে পারি তাহলে বাংলাদেশ সোনার দেশ হতে পারে। এর ফলে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি হবে। প্রাণি সম্পদ উৎপাদন, উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যেও মাননিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার স্থাপন জরুরি। শুধু তাই নয়, প্রাণি সম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়টি তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে হলে প্রত্যেক জেলায় কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র নির্মাণ জরুরি। একই সঙ্গে এটা করা জরুরি যে, প্রাণিসম্পদের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তিগতজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে হবে। এক্ষত্রে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম অবশ্যই দরকার। #

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়