**** এখনো আন্দোলনের পক্ষে নন ফখরুলরা ****লন্ডন নির্দেশনা মানছেন না যুবদলসহ একাংশ****** ৫ ডিসেম্বর রাজধানীতে শোডাউন চায় বড় অংশ ***** আন্দোলনের দাবি নিয়ে আমরা নিজেরাই বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি : ফখরুল***
ডেস্ক রিপোর্ট :ঝটিকা আন্দোলনের মাধ্যমে হলেও সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় বিএনপির বড় একটি অংশ। কিন্তু ভবিষ্যৎ ক্ষমতার চিন্তায় এখনই আন্দোলনের পক্ষে নয় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ক্ষুদ্র অংশটি।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় রাজনৈতিক কৃতজ্ঞতা, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি, পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে কেন্দ্র করে বৃহৎ অংশ আন্দোলনের জন্য চাপ প্রয়োগ করলেও তাতে কান দিচ্ছেন না দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি অংশ।
ক্ষুদ্র অংশটি মনে করছেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কোনো লাভ নেই। স্বৈরাচার সরকারকে খুব সহজে সরানো যাবে না। হঠাৎ আন্দোলন করলে বিএনপিরই ক্ষতি বেশি হবে। এখনই রাস্তায় নেমে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করলে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।
তবে খালেদাপন্থিসহ দলটির বৃহৎ অংশটি মনে করছে, সরকারকে চাপ ছাড়া আগামী ৫ ডিসেম্বরই যে খালেদা জিয়ার মুক্তির ফয়সালা আসবে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। সরকার নির্দিষ্ট ছকেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখেছে। আর সেটি পূরণ হওয়া ব্যতিত খালেদা জিয়ার মুক্তির আশা করা হবে বিএনপির জন্য দুঃস্বপ্ন।
তবে এখন রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সরকার পতনের আন্দোলনের মুখ্য সময় যাচ্ছে বলে মনে করছেন আন্দোলনের পক্ষে থাকা নেতারা।
তাদের ভাষ্য, ক্ষমতাসীন দলের পারিবারিক অভ্যন্তরীণ দূরত্ব, বাজার ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের সমর্থন, কূটনৈতিক ব্যর্থতাসহ নানা দাবি নিয়ে এখনই রাজপথে নামার মুখ্য সময়। তাই খালেদাপন্থিদের বড় অংশটি আন্দোলনের জন্য দলটির নীতিনির্ধারকদের চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট এলাকাসহ পুরো ঢাকা শহরে ঝটিকা আন্দোলনের রূপ দেখাতে চায় বিএনপির বড় অংশটি। ঢাকার আন্দোলনের চিত্রই মফস্বলে ছড়িয়ে যাবে। এতে দলটির স্থায়ী কমিটিসহ মধ্যম সারির নেতারাও ইচ্ছুক।
তবে বিএনপি মহাসচিব এতে অনিচ্ছুক বলে দলটির বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগ রয়েছে। মহাসচিবরা চাচ্ছেন ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। আর অন্য অংশটি চাচ্ছে খালেদা জিয়াকে জীবন্ত অবস্থায় কারাগার থেকে বের করা।
এ নিয়ে দলের মধ্যেও ভেতরে ভেতরে বিতর্ক চলছে। আন্দোলন চাওয়া অংশটি মনে করছে, সরকারকে চাপ দেয়া ছাড়া নেত্রী মুক্ত হবেন না। নেত্রীর অঘটন ঘটলে বিএনপির এখন যে অবস্থান রয়েছে সেটিও বিলীন হয়ে যাবে। আর আন্দোলনের মাধ্যমে যদি নেত্রী জীবন্ত অবস্থায় বের হন তাহলে দল টিকবে। বিএনপির ভবিষ্যৎ থাকবে।
দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্দোলনের জন্য লন্ডন থেকে তারেক জিয়া দল পুনর্গঠনের চেষ্টা করলেও একটি অংশের অনাগ্রহে সেটিও থমকে গেছে। রাতের আঁধারে ছাত্রদলের নেতৃত্ব এলেও এখনো দুই নেতা দিয়েই চলছে আন্দোলনের মূলশক্তির ছাত্রসংগঠনটি। আসছে না পূর্ণাঙ্গ কমিটি। আর লন্ডন থেকে যুবদলের কমিটি গঠনের নির্দেশ এলেও বর্তমান সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব সেটি কর্ণপাত করছেন না।
এছাড়া হচ্ছে না স্বেচ্ছাসেবকসহ অন্য কমিটিগুলো। মাঠপর্যায়ের আন্দোলনের জন্য প্রথম সারিতে যেসব কর্মীশক্তি প্রয়োজন সেগুলো এখনো তৈরি হয়নি। তাই ভবিষ্যৎ ক্ষমতা নিয়ে যারা চিন্তা করছেন তাদের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আন্দোলন গৌণ বলেই মনে করছে একটি অংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটির ভাষ্য, সমপ্রতি অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার জানাজায় জনপ্রিয়তার কারণে পুরো রাজধানীবাসী তাকে স্মরণ করেছে। তার জানাজায় এত সংখ্যক লোকের উপস্থিতির মাধ্যমে বিএনপি যেমন উচ্ছ্বসিত তেমনি আরও একটি হলো জনপ্রিয় নেত্রীর লাশের পাশে পুরো ঢাকাবাসীকে পাবে বিএনপি। এমন আশাতেই শেষ পর্যায়ে এসেও নীরব রয়েছে আন্দোলন না চাওয়া অংশটি।
দলের সেই নেত্রীর লাশের পাশে সহানূভূতিকে কেন্দ্র করেও অকৃতজ্ঞ অংশটি জনপ্রিয়তা চাচ্ছে বলে একাংশের ক্ষোভ রয়েছে। তবে এখন যারা আন্দোলন চাচ্ছেন না, এদের অধিকাংশই ছাত্রজীবন থেকে মূল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্র রাজনীতির হাতে যদি আজ বিএনপির নেতৃত্ব থাকতো তাহলে আরও বহু আগেই খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে যেতো বলে মনে করছেন দলটির পর্যবেক্ষণ করা নেতারা। বর্তমানে বিএনপির নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত যাদের হাতে রয়েছে, এদের অধিকাংশই অর্থনৈতিক প্রভাবশালী ও বিশেষ কৌশলে এ দলের আদর্শ গ্রহণ করেছেন।
দলটির মাঠপর্যায়ের নেতাদের ভাষ্য, স্থায়ী কমিটিসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা যদি রাজপথে নেমে আসতেন তাহলে নেতাকর্মীরা রাজপথে রক্ত দিতে নেমে আসতো। বড় নেতারা যদি আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকতেন তাহলে তৃণমূলের নেতারা পুলিশের বুলেটের সামনে জীবন দিতো। কিন্তু বিএনপি যেভাবে চলা উচিত ছিলো সেভাবে চলছে না। সমঝোতায় আর কৌশলের ফাঁকে দলটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলেও নানান মহল থেকে অভিযোগ আসছে।
আন্দোলন প্রসঙ্গ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাষ্য, আন্দোলনের দাবি নিয়ে আমরা নিজেরা নিজেরা বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি, এটা ঠিক নয়। এখন আন্দোলনের চাইতেও ঐক্য বড়। স্বৈরাচার সরকারকে খুব সহজেই সরানো যায় না।
তাই এই সরকারের কথাগুলো জনগণকে বলতে নেতাকর্মীদের গ্রামে গ্রামে যেতে হবে, মহল্লায় মহল্লায় যেতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো দলের পাঁচশর উপরে গুম, কয়েক হাজার হত্যা, ২৩ লাখের উপরে আসামি। এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই।
জ্যেষ্ঠ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আইনের ওপর আস্থা রেখে এক বছর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি। আগামী ৫ তারিখ খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে আর আইনের ওপর আস্থা রেখে বসে থাকবো না। ৮০ ভাগ মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়।
এক দফার আন্দোলন ছাড়া, সরকার পতনের আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। তিনি আরও বলেন, আন্দোলন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে যদি সরকার উস্কানি দেয়, নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তাহলে এর দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
কারণ আমরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবো। ‘আগামী ৫ তারিখ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ যদি সঠিক রিপোর্ট প্রকাশ করে তাহলে আদালত খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবেন। আর খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন’ —এমন আশাও করছেন তিনি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেছেন, আন্দোলন ছাড়া বিএনপির আর বিকল্প নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ৫ তারিখের পর খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে, তার যদি জামিন না দেয়া হয় তাহলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছাতেই খালেদা জিয়া মুক্ত হচ্ছেন না। কত ধানে কত চাল ৫ তারিখের পর দেখা যাবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে প্রস্তুত হতে দলের সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি।
আমার সংবাদ
আপনার মতামত লিখুন :