রাশিদ রিয়াজ : সৌদি আরবের প্রিন্সেস বাসমাহ বিনতে সৌদের নিখোঁজের খবর গত কয়েকমাস আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছিল। এখন বলা হচ্ছে, তিনি গৃহবন্দী রয়েছেন। জার্মানির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ডয়চে ভেলে বলছে তিনি সৌদি সরকারের হাতে আটক রয়েছেন। বাসমাহ সৌদির বাদশাহ সৌদ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের মেয়ে। তিনি ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত দেশটির বাদশাহ ছিলেন। বাসমাহ (৫৫) সমাজসংস্কারক হিসেবে পরিচিত। সৌদি ক্রাউনপ্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দেশটিতে নারীদের গাড়ি চালানো, সিনেমা ও খেলারমাঠে যাওয়ার সুযোগ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্থায়ী বসবাসের বন্দোবস্তসহ বেশ কিছু সংস্কার আনলেও এই সৌদি রাজকন্যা বাসমার সংস্কারের দাবি সৌদি শাসকরা ভালভাবে নেননি। তবে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই।
বাসমাহকে আটকের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না থাকলেও রক্ষণশীল সৌদি আরব সরকারের জন্য তিনি যথেষ্ট মাথা ব্যথার কারণ। পশ্চিমা দেশে পড়াশোনা করে এসে সৌদি আরবের বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের হয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করতেন তিনি। এ ছাড়া তিনি সৌদিতে নারীদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রায়ই আন্তর্জাতিক ও সৌদি আরবের বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি করতেন। সৌদি আরবে নারী ও পুরুষের একই স্থানে উপস্থিতির ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তার ঘোর বিরোধী ছিলেন বাসমাহ। এ ছাড়া সৌদি আরবের সংবিধানের সংস্কারও চান তিনি। বাকস্বাধীনতার পক্ষে তিনি। এধরনের দাবিতে বেশ কিছু আলেমকে কারাগারে ঠেলে দিয়েছে সৌদি সরকার। কারাগারে অনেক আলেম চিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন বলে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ তুলেছে। মিডিল ইস্ট মনিটর
সৌদি আরবে সরকারের সমালোচকদের এধরনের হত্যা, গুম, কারাদ- দেওয়া হয়েছে, তারও বিরোধী ছিলেন বাসমাহ। এ জন্য তিনি সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনাও করেছিলেন। সৌদি রাজপরিবারের সরাসরি সমালোচনা না করলেও এই পরিবারের সদস্যদের ঠিকই সমালোচনা করেছেন বাসমাহ। ২০১২ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের রাজপরিবারের প্রায় ১৫ হাজার সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ হাজারের এই ক্ষমতা বা সম্পদ ভোগের সুযোগ নেই। আমাদের প্রায় ২ হাজার ধনকুবের রয়েছেন। তাদের হাতে সব ক্ষমতা এবং সম্পদ। এই ২ হাজার ধনকুবেরের বিরুদ্ধে কারও কিছু বলার সাহস নেই।’
ঠিক এসব কারণেই বাসমাহকে গৃহবন্দী করা হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। তবে তাকে আর প্রকাশ্যে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে সৌদি সরকারের বক্তব্য জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেনি।
আপনার মতামত লিখুন :