শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:৪৭ দুপুর
আপডেট : ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:৪৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণহীন

যুগান্তর : দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান ত্রিপক্ষীয় সমস্যার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের একাধিক রেগুলেটরি সংস্থা মুক্তবাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনাকে তাদের কাজের সর্বনিম্ন তালিকায় রেখেছে। মূলত মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে সংস্থাগুলোকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। ফলে এসব সংস্থা বাজারের অব্যবস্থাপনা দূর করতে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এছাড়া জনসংখ্যার হিসাবে দেশে খাদ্যপণ্যের প্রকৃত চাহিদা এখনো নিরূপণ করতে পারেনি মন্ত্রণালয়গুলো। এ নিয়ে চিঠি চালাচালিতে সীমাবদ্ধ বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়। এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভোগ্যপণ্য বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোনো ভূমিকা রাখে না।

জানা গেছে, বাজার মনিটরিংয়ে বর্তমানে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, ট্যারিফ কমিশন, মূল্য প্রতিযোগিতা কমিশন কাজ করছে। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলও রয়েছে। এতগুলো সংস্থা কাজ করার পরও বিভিন্ন মৌসুমে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রোজার মৌসুমে চিনি, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল ও পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। সবজির বাজারে শসা, কাঁচামরিচ ও লেবুর মূল্য আকাশছোঁয়া হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওই সময় সরকার কিছু পণ্য বিদেশে রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ তেমন কিছু হয় না। ভোক্তাকে এর খেসারত দিতে হয়। একইভাবে প্রতি বছর কার্তিক মাস এলেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়। এ বছর বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। আর বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে নানা অজুহাতে বাড়ানো হয় পণ্যের দাম।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন বলেন, বাজার তদারকি অব্যাহত রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকরা। পেঁয়াজ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫০০ জন অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের সংস্থাগুলো কাজ করতে পারছে না এর বড় উদাহরণ টিসিবি। সম্প্রতি পরিস্থিতি খারাপ হলে পেঁয়াজ আনতে টিসিবিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সংস্থাটি সক্ষমতার অভাবে স্থানীয় বাজার থেকে কিনে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে। আমদানি করতে পারেনি। এ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে টিসিবি খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিসিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চেয়ে একাধিকবার প্রস্তাব পাঠানোর পরও নাকচ তা করে দেয়া হয়।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের প্রসঙ্গে এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, পেঁয়াজের পরিস্থিতি এমন হবে তা দু’মাস আগেই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বলা হয়েছিলো। সেখানে বলা হয়, ভারতে দু’দফা বন্যার কারণে আগামীতে পেঁয়াজ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু ব্যবসায়ীদের এ তথ্যের জবাবে ওই সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। এ নিয়ে সমস্যা হবে না। হিসাব ছাড়াই মন্ত্রণালয় এ ধরনের বক্তব্য দেয়ায় ব্যবসায়ীরা ওই বৈঠকে আর কোনো কথা বলেনি। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দামের বর্তমান অবস্থার জন্য মনিটরিং সেলের দূরদর্শিতাও দায়ী।
এছাড়া ভোগ্যপণ্য মনিটরিংয়ের জন্য ট্যারিফ কমিশন, মূল্য প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, বিএসটিআই তাদের কাজের তালিকায় সবচেয়ে গুরুত্বহীন করে রেখেছে বাজার ব্যবস্থাপনাকে। কারণ সংস্থাগুলো মনে করছে সরকার মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী। এসব সংস্থা বাজার ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী না হয়ে ব্যস্ত থাকছে অন্য সব কাজ নিয়ে।

এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর সরকার বিকল্প বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের আমদানি করতে বলেছিলো। কিন্তু খুব বেশি আমদানি হয়নি। এরপর শীর্ষ পর্যায়ে কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপকে আমদানি করতে বলেছে সরকার। কিন্তু এসব গ্রুপ কখনও পেঁয়াজ আমদানি করেনি। ফলে তারা এক কেজি পেঁয়াজও আমদানি করেনি। এর থেকে বার্তা পরিষ্কার সরকারের ডাকেও বাজার রেসপনস করছে না। বাজার যেখানে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে সরকারকে মাঠে নামতে হবে। এতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ কমবে। তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে সরকার ভূমিকা রাখবে না সেটি হতে পারে না।

এদিকে বিভিন্ন মৌসুমে খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে চাহিদার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকা। অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে বলা হচ্ছে দেশে ছোলার চাহিদা আছে ৬০ হাজার টন, পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ লাখ টন, চিনির ১২ থেকে ১৪ লাখ টন, ভোজ্যতেলের ১৫ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া চালের সোয়া ৩ কোটি মেট্রিক টন। সঠিক চাহিদার তথ্য নির্ধারণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয় কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু এখনও তা নির্ধারণ সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি স্বীকার করে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বোরবার বলেন, খাদ্যপণ্যের প্রকৃত চাহিদার সঠিক তথ্য আমাদের প্রয়োজন। সঠিক তথ্য না থাকার কারণেই পেঁয়াজের বাজারে এমন অবস্থা হয়েছে।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, যে কোনো ভোগ্যপণ্যের ব্যাপারে ৬ মাস আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া দরকার। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সেটি করার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেছি। আগাম প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় মনিটরিং করা হলে অনেক পরিস্থিতি মোকাবেলা বা এড়ানো সম্ভব।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি চলছে। কিন্তু এর মানে লুটপাট নয়। সৌদিতে মুক্তবাজার অর্থনীতি বিরাজ করছে। কিন্তু তাদের পণ্যের বাজারে এতটা লাগামহীন নয়। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম ইচ্ছেমতো বাড়াতে পারবে না। এক্ষেত্রে সরকারের মনিটরিং সংস্থাগুলো সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি এফবিসিসিআইয়েরও ভূমিকা আছে। এ জন্য এফবিসিসিআইকে জনবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব ও স্বচ্ছভাবে গড়ে তুলতে হবে। অনুলিখন : ওয়ালি উল্লাহ, সম্পাদনা : মাজহারুল ইসলাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়