শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ০৭:৩৮ সকাল
আপডেট : ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ০৭:৩৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাদ্রাসা শিক্ষায় ঝোঁক বাড়ার কারণ অনুসন্ধান

 

মাসকাওয়াথ আহসান : বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে ইবতেদায়ি সমাপনী শিক্ষা পরীক্ষায়। এবার প্রাথমিক সমাপনী শিক্ষা পরীক্ষায় মোট ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ২৬৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। যা গেলো বছরের চেয়ে ২ লাখ ২৩ হাজার ৬১৫ জন কমেছে। অন্যদিকে ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এবার অংশ নিচ্ছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৭১ জন শিক্ষার্থী। যা গেলো বছরের চেয়ে ৩০ হাজার ৯৮৩ জন বেশি। সাধারণ মাধ্যমের চেয়ে মাদ্রাসা মাধ্যমে এবার পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কী? প্রশ্ন ছিলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কাছে।

জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় দেশে জনসংখ্যা কমছে, তাই তার প্রভাব এই শিক্ষা মাধ্যমে পড়েছে।’ প্রতিমন্ত্রীর উত্তরটি এতোই অযৌক্তিক যে, তা আলোচনার টেবিলে ন্যূনতম গুরুত্বের দাবি রাখে না। বাংলাদেশের বাইরে অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে যেখানে অতীতে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রচলিত ছিলো, সে দেশগুলোতে মাদ্রাসার সংখ্যা কমছে। জোর দেয়া হয়েছে সাধারণ শিক্ষার উপর। ব্যতিক্রম বাদ দিলে মাদ্রাসা শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের রাষ্ট্রের মূল অর্থনৈতিক ধারার কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। অধিকারবঞ্চিত শিশু হিসেবে মাদ্রাসায় ভর্তি করার পর শিশুটি যে শিক্ষা লাভ করছে, কর্মক্ষেত্রে তার প্রায়োগিক প্রাসঙ্গিকতা না থাকায় অধিকারবঞ্চিত হিসেবেই বাকি জীবনযাপন করছে সে। অপরিবর্তনীয় বঞ্চনার শৃঙ্খলে আটকে যাওয়ায় তরুণ ও যুবা বয়সে সে শ্রেণি সংগ্রামের কথা ভাবছে। উদ্দেশ্যহীন সহিংসতায় অনেকে মারা পড়ছে। যারা বেঁচে থাকছে তাদেরও ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো দিশা থাকে না। সম্প্রতি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ইসলামী কট্টরপন্থী নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান আয়োজিত কথিত আজাদি মার্চে ফজলুর রহমানের মালিকানায় থাকায় মাদ্রাসাগুলোর ছাত্র-শিক্ষকদের রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ‘জলসা’ সফল করার জন্য বসে থাকতে দেখা গেছে। আপনি লংমার্চে কেন, এর মাধ্যমে কী অর্জন করতে চান? এ প্রশ্নের উত্তরে সবাই তাদের জীবন বাস্তবতা তুলে ধরেছে, যেখানে কর্মসংস্থানের কোনো রকম সম্ভাবনাহীনতা আর জীবনের উদ্দেশ্যহীনতার বেদনাদায়ক ছবি উঠে এসেছে। মানুষকে ভালোবাসার চোখে দেখতে হয়, মানুষ তো কেবলই রাজনৈতিক ও ক্ষমতার লড়াইয়ের ফুটসোলজার হতে পারে না। কাজেই মাদ্রাসার ছাত্রদের স্বপ্নহীনতার বাস্তবতা হৃদয় বিদীর্ণ করে। ধর্ম খুব ভালোবাসার একটি ব্যক্তিগত আশ্রয়।

ধর্ম শিক্ষা ও কোরআন পাঠ শিশুদের নৈতিকতা বর্ধনে সহায়ক হয়। কিন্তু আত্মার পরিচর্যার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্ম-নৈতিকতা-দর্শন পাঠের মাধ্যমে আত্মার পরিচর্যার সুযোগ রয়েছে। বরং সাধারণ শিক্ষাতে আরও কর্মসংস্থানমুখী প্রশিক্ষণ যুক্ত করে সামষ্টিকভাবে শিশুদের আগামীর কর্মী-অর্থনীতির সহিস-প্রগতির সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলাই সময়ের দাবি। যে আরব বিশ্বে ইসলাম ধর্ম চর্চার গভীরতা ও প্রাবল্যের ইতিহাস প্রাচীন, সেখানে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বৈশ্বিক ধারার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। সেখানে বাংলাদেশে ইসলাম চর্চার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষাকে নানা রাজনৈতিক প্রণোদনা দিয়ে ‘হোলিয়ার দ্যান দাউ’ কেন হতে হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ঠোঁটে জামায়াতকে একটি রাক্ষসের জুজু হিসেবে বাঁচিয়ে রাখার প্রবণতা, আর আওয়ামী লীগ সরকারের মাদ্রাসা তোষণ রাজনীতির হেফাজতিতে ‘অধিকারবঞ্চিত’ শিশুদের কর্মমুখর আগামীর চিন্তাটি উপেক্ষিত। ভারতে এখন হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী রাজনীতির জোয়ার, সে অভিঘাতে খুব স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশে কট্টর হিন্দুত্ববাদের ভোক্তা রয়েছে। দিনমান ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নানা অপকথার ডালি নিয়ে হাজির হয় শিবসেনারা, মুখে তাদের শিবির নিধনের শোরগোল। এই বাস্তবতায় ‘ইসলাম ধর্ম’কে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরার প্রবণতা বাংলাদেশের সাধারণ্যে দৃশ্যমান। আওয়ামী শিবিরের শ’চারেক ‘অসাম্প্রদায়িকতা’র লিপসার্ভিস দেয়া বুদ্ধিজীবী রয়েছে।

এরা এমন কট্টর প্রগতির গালগল্প দেয় যে, বাংলাদেশের সাধারণ মুসলমানেরা তাদের ধর্মীয় আত্মপরিচয় খোয়া যাওয়ার প্যারানয়ায় আক্রান্ত হয়। এসব কথিত বুদ্ধিজীবীরাই ‘অসাম্প্রদায়িক আদর্শের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন কট্টর সাম্প্রদায়িক মোদী’ এ রকম আইরনিক্যাল সিদ্ধান্তে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। আন্তর্জাতিক সেমিনার সিম্পোজিয়ামে আমন্ত্রিত হওয়ার যোগ্যতা না থাকায় ভারতে নানা অনুষ্ঠানে গিয়ে আঞ্চলিকতার মাঝে আন্তর্জাতিকতার সুখ খুঁজতে তারা ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে প্রচার করে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে ভীত করে তোলে। বিএনপি শিবিরের শ’খানেক ইসলামী আত্মপরিচয়ের লিপসার্ভিস দেয়া বুদ্ধিজীবী, জনগণের এই ‘ভারত জুজু’র লক্ষণ দেখে সেটাকে রাজনীতির পুঁজি করে সারাক্ষণ এই ‘ভারতপ্রীতির’ ভীতি ছড়িয়ে দেয়। ভূ-রাজনীতি অনেক জটিল বিষয়, এখানে সবসময় বাইরে থেকে যা দেখা যায়, ভেতরে তা থাকে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্বল্পদ্রষ্টী বুদ্ধিজীবীরা জনগণের মাঝে, ‘ইসলাম গেলো গেলো’ গুজবের আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। বাংলাদেশের ইসলাম মানবতাবাদী বাউল ও সুফীদের মাধ্যমে প্রচারিত ইসলাম। এই নদীর দেশে-সবুজ সমতলে, অশিক্ষার কারণে কুসংস্কারাচ্ছন্নতা আছে, কিন্তু ধর্মীয় কট্টরপন্থার শেকড় নেই। পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো মরু কিংবা পাথরপ্রবণ কর্কশ জনপদ নয় বাংলাদেশ।

ফলে বাংলাদেশে আল-কায়েদা বা আইএস প্যাটার্নের জঙ্গিবাদ বিকাশের কোনো সুযোগ নেই। এখানে সহিংসতা ততোটুকুই সম্ভব, যা আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা করে দেখিয়েছে। এ হচ্ছে ঐতিহ্যসঞ্জাত ঠগীদের সন্ত্রাস আর লুণ্ঠনের ভূমি। কাজেই আলাদা করে ‘জামায়াত জুজু’ বা ‘বিজেপি জুজু’ দিয়ে লীগ ও বিএনপি দুটি বিবদমান পক্ষ যতোই বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করুক জনগণের তাতে বিভ্রান্ত হওয়া অনুচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসা বাংলা-ইংরেজি-গণিত-বিজ্ঞান এসব বিষয়ের উপর জোর দিলে, কারিকুলামে কর্মমুখী প্রশিক্ষণযুক্ত করলে, ছাত্ররা উপকৃত হবে। আবার সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্ম-নৈতিকতা শিক্ষা, পবিত্র কোরআন পাঠের মতো বিষয় থাকলে ছাত্রদের ধর্ম-নৈতিকতার দিকটি বিকশিত হবে। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়