এই সময়: বরফের বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে সিল ও সামুদ্রিক ভোঁদড়ের দল। আলাস্কার অতি পরিচিত সেই দৃশ্য কি খুব বেশি দিন আর দেখা যাবে? গবেষকদের সমীক্ষা অন্তত আশার আলো দেখাচ্ছে না। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রাণঘাতী সংক্রমণ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের গণ্ডি পেরিয়ে পাড়ি জমিয়েছে সুদূর আলাস্কায়। তাতেই বিপন্ন আলাস্কার সিল এবং সামুদ্রিক ভোঁদড়। ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্টে অশনি সঙ্কেত দেয়া হয়েছে।
১৯৮৮ এবং ২০০২ সালে ‘ফোসিন ডিসটেম্পার ভাইরাসে’র (পিডিভি) সংক্রমণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো উত্তর আটলান্টিকের কয়েক হাজার সামুদ্রিক সিল। সেই একই সংক্রমণ যখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় সিলদের দেহে দেখা দি্লো, তখন বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ গভীর হয়েছিলো। ভৌগোলিক অবস্থানগত ভাবে সীমাবদ্ধ একটি রোগ কীভাবে উত্তর আটলান্টিক থেকে সুদূর উত্তর প্রশান্তে ছড়িয়ে পড়লো, এসব ভেবে কূল পাচ্ছিলেন না তারা। শুরু হলো সমীক্ষা। আর এতেই শনাক্ত হলো ‘অপরাধী’। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে দ্রুত গলছে সুমেরু মহাসাগরের বরফ আর তাতেই এক মহাসাগর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে অন্য মহাসাগরের প্রাণীর দেহে।
পিডিভি সংক্রমণ প্রথমেই ঘায়েল করে সামুদ্রিক প্রাণীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এর জেরে হয় নিউমোনিয়া। সংক্রমণ গুরুতর হলে ১০ দিনের মধ্যেই মারা যায় প্রাণীটি। ১৯৮৮ সালে প্রথম এটি মহামারী আকারে ছড়ায় উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের গ্রে সিলদের মধ্যে। প্রাণ যায় প্রায় ২৩,০০০ সিলের। দ্বিতীয় মহামারী ২০০২ সালে, সেবারও সংক্রমণ প্রাণ কেড়েছিলো হাজার তিরিশেক সিলের। প্রশান্ত মহাসাগরীয় সিলদের মধ্যেও এই সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখে সমীক্ষা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। ২০০১ থেকে ২০১৬ অবধি আলাস্কার সিল, সি লায়ন এবং সামুদ্রিক ভোঁদড়ের থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হতে থাকে। সেই সমীক্ষার রিপোর্টই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নালে।
রিপোর্টের প্রধান লেখক ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ট্র্যাসে গোল্ডস্টাইনের কথায়, সমুদ্রে সিল, সি লায়নদের সাধারণ বিচরণক্ষেত্র থেকে কোনও ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা, সেটা দেখাই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বিভিন্ন প্রজাতির ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে একই ধরনের জীবাণুর অস্তিত্ব মিললো। সমুদ্র যতো বেশি উন্মুক্ত। সংক্রমণের হার ততো বেশি। বিশেষজ্ঞদের গবেষণা বলছে, উষ্ণায়নের জেরে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর থেকে এই সংক্রমণ আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রে ছড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে নর্দার্ন এলিফ্যান্ট সিল, হাওয়াইয়ান মঙ্ক সিলের মতো সামুদ্রিক প্রাণী বিপন্ন হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। এই সংক্রমণের প্রভাব কী হতে চলেছে, তা নিয়ে গবেষকরাও ধোঁয়াশায়। গবেষকদের একাংশ মনে করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরের সামুদ্রিক প্রাণীগুলির মধ্যে এই সংক্রমণের স্বাভাবিক প্রতিরোধ তৈরি হবে। অন্য পক্ষের আশঙ্কা, এর জেরে প্রশান্ত মহাসাগরের এই প্রাণীগুলি অতি বিপন্ন হয়ে পড়বে। অনুলিখন : ম. সিদ্দিকা ,সম্পাদনা : মাজহারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :