শোয়েব সর্বনাম : দুপুরের দিকে মওলানা ভাসানী হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের বাজারে চলে যেতেন। সেখানে গামছা কাঁধে কোনো কৃষককে অনুরোধ করতেন, ভাই আপনের গামছাটা দেন, বিছিয়ে নামাজ আদায় করবো। বাংলার ধর্মপ্রাণ কৃষক শুধু গামছাই দিতেন না, তার সঙ্গে নামাজেও দাঁড়িয়ে পড়তেন। তাদের দেখাদেখি আরও দু’চারজনও জুটতো। মোনাজাত শেষে ভাসানী সংক্ষেপে বক্তব্য রাখতেন। এই বক্তব্য সমাজতান্ত্রিক। বক্তব্য শেষে তিনি আরেক গ্রামে ছুটে যেতেন। সেখানে গামছা কাঁধে আরেক কৃষককে ভাই বলে জড়িয়ে ধরতেন, তখনো যোহরের ওয়াক্ত শেষ হয়নি। ফলে কৃষক আবারও গামছা পেতে তার পাশে দাঁড়িয়ে যেতেন। কথিত আছে, এভাবে গ্রামে গ্রামে সমাজতন্ত্রের প্রচার করতেন তিনি। মওলানা ভাসানী বাংলার সবচেয়ে বিচক্ষণ কমিউনিস্ট। লোকে বলে, কমিউনিস্টরা নাস্তিক। অথচ ভাসানী মোটেও নাস্তিক ছিলেন না, শোনা যায় সমাজতন্ত্রে প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি এক ওয়াক্তের নামাজ দু’বারও আদায় করতেন।
সেই হিসেবে তিনি ছিলেন ডাবল মুসলমান। অসুস্থ লোকেরা তার কাছে পানি পড়া নিতে ভিড় করতো, তিনি তাতে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে বলতেন, ওষুধটাও ঠিকঠাক খাবেন। কমিউনিজম ব্যাপারটাই এ রকম, চীন আর রাশিয়া একসময়ের প্রতাপশালী কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ছিলো, কিন্তু দু’দেশের কমিউনিজম দু’রকম। আর আমাদের দেশের বামগুলার একদল চীনপন্থী তো আরেকদল রাশিয়াপন্থী। ভাসানী মাটি ও মানুষের প্রাণের কথা বুঝতেন। সেই কারণেই তিনি জীবদ্দশাতেই সফল বিপ্লব ঘটাতে পারছিলেন। যেই সফলতার কারণে মওলানা আব্দুল হামিদ খান নামটির সঙ্গে ভাসানী উপাধি যুক্ত হয়। এতো বড় কমিউনিস্ট নেতা বাংলায় আর আসেনি। নামের সঙ্গে মওলানা অ্যাড করেও যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করা সম্ভব, তার উদাহরণ হিসেবে ভাসানী আজীবন গুরুত্বের সঙ্গে পঠিত হবেন। চীন রাশিয়া এবং নাস্তিক্যচর্চা ত্যাগ করে মওলানা ভাসানীকে নিয়ে বাংলার বামদের আরও চর্চা করা দরকার। তাহলেই দেখা যাবে, ওই লাল সূর্য উঠছে। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :