শিরোনাম
◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ০৩:১২ রাত
আপডেট : ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ০৩:১২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ধর্ম বদলেছেন, ঢাকার সেই ঐতিহাসিক টেস্ট স্কোয়াডের অভিমানী ক্রিকেটার থাকছেন ইডেনে

এল আর বাদল : রেকর্ড বই বলছে, ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে সদাগোপান রমেশের হাতে বোল্ড রঞ্জন দাস ৫৮। এই পরিসংখ্যানটুকু বাদ দিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাকে চেনার, জানার আর কোনও উপায় নেই। কী করেই বা থাকবে, সেই ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারত-বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট ম্যাচটাই যে তার জীবনের প্রথম এবং শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তিনি বাংলাদেশের বিকাশরঞ্জন দাস।

দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন রঞ্জন। ১৮ বছর বয়সে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে। সেটা ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক ঐতিহাসিক দিন। নাবালকত্ব ছেড়ে সাবালকত্বের পথে পা বাড়িয়েছিলো পদ্মাপাড়ের ক্রিকেট। অনেকেই তখন বলেছিলেন, লম্বা দৌড়ের মশলা রয়েছে বিকাশের মধ্যে। ঠিকঠাক রাস্তা ধরে এগোলে বাঁ হাতি পেসার সৌরভ ছড়াতেই পারতেন সে দেশের ক্রিকেটে।

কিন্তু যা ভাবা হয়, তা সব সময় মেলে না। ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে যেতে হয় বিকাশকে। ‘বিকাশ’ নামের অস্তিত্ব এখন আর নেই। সে দিনের বিকাশরঞ্জন দাস ব্যক্তিগত বিশ্বাসে বদলে ফেলেছেন ধর্ম। হয়ে গিয়েছেন মাহমুদুল হাসান। ক্রিকেটারের পরিবর্তে এখন তিনি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। ব্যস্ততার মধ্যে কাটে প্রতিটা দিন।

২০০২ সালে ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্ট খেলা বাংলাদেশ দলকে ইডেনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিসিসিআইর সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী। ওই দলে খেলেছিলেন বিকাশ রঞ্জনও। ভারতে আসার ভিসা সবেমাত্র হাতে পেয়েছেন তিনি। উত্তেজনায় ফুটতে থাকা প্রাক্তন ক্রিকেটার বললেন, ২১ তারিখ ভারতের বিমানে উঠছি। ২২ নভেম্বর ইডেন গার্ডেন্সে দেখা হবে দাদার (সৌরভ গাঙ্গুলী) সঙ্গে। ১৯ বছর আগে সৌরভের বিরুদ্ধে শেষ বার খেলেছি। তার পরে আর দেখা হয়নি ওর সঙ্গে। এবার আবার দেখা হবে। দাদা দারুণ একটা উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের কথা যে ভুলে যাননি, তাতেই প্রমাণিত সৌরভ অনেক বড় মাপের মানুষ।

২০০০ সালে টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। সৌরভের নেতৃত্বে ভারত গিয়েছিল সে দেশে। প্রাক্তন সেই ভারত অধিনায়ক এখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। টেস্ট ক্রিকেটের গরিমা ফেরাতে দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্ট হবে ইডেনে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের। ঢাকার ইস্টার্ন ব্যাঙ্ক লিমিটেডের ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার রঞ্জন বলছেন, সেই মধুর স্মৃতি কী করে ভুলবো বলুন তো, শান্ত (হাসিবুল হোসেন) ভাই প্রথম ওভার করেছিলো। আর এক প্রান্ত থেকে আমি শুরু করেছিলাম। প্রথম বলটা করেছিলাম সদাগোপান রমেশকে।

রঞ্জনের জোরের উপরে ধেয়ে আসা বলটাই মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয় রমেশের কাছে। টাইম মেশিনের সাহায্য না নিয়ে রঞ্জন ফিরে যান ২০০০ সালের সেই প্রথম টেস্টে। তিনি বলছিলেন, একটু জোরের উপরেই বলটা রেখেছিলাম। বাড়তি বাউন্সে বল রমেশের ব্যাটে লেগে স্টাম্পে লাগে। একটু পরেই আম্পায়ার স্টিভ বাকনার এগিয়ে এসে আমার হাতে বেলটা তুলে দিয়ে বলেন, এটা যত্ন করে রেখে দিও। এটা তোমার প্রথম টেস্ট উইকেটের স্মৃতি। বেলটা হাতে নিয়ে দেখলাম ভেঙে গিয়েছে।

সেই বেল এখনও বিকাশ রঞ্জনের শো কেসে সযত্নে সাজানো রয়েছে। অভিষেক টেস্টের সেই স্মারকের দিকে তাকালে অদ্ভুত এক ভাল লাগা কাজ করে তার। সেই সঙ্গে যন্ত্রণায় মোচড় দিয়ে ওঠে তার বুক। শুরুতেই কেন শেষ হয়ে গেল প্রতিশ্রুতি জাগানো একটা কেরিয়ার? সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে বিকাশ বলছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে নাগাড়ে বল করে যেতাম। পিঠে ব্যথা অনুভব করতাম। কেউ সে ভাবে আমাকে গাইড করার ছিল না। ওই পিঠের চোটই আমার কেরিয়ার শেষ করে দিল।

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে শেষ করে উঠেই প্রাক্তন বাঁ হাতি পেসারের প্রশ্ন, ‘‘আপনাদের বুমরাও তো চোটের কবলে। তাকে ফেরানোর জন্য চেষ্টা করছে না বিসিসিআই? চোট-আঘাত ফাস্ট বোলারের জীবনে বিভীষিকা। চোট সারিয়ে ফিরে আসার লড়াইটা একজন ফাস্ট বোলারের কাছে আরও কঠিন। সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ডের সাহায্যের দরকার পড়ে। রঞ্জনের অভিমান তার দিকে সেই সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। অবহেলিত রঞ্জনের অভিমানের বাষ্প গলায় জড়িয়ে বলছেন, অস্ট্রেলিয়ায় কমনওয়েলথ ব্যাঙ্ক টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে শচিন টেন্ডুলকার ও অজিত আগরকরের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো। পরে জানতে পারি চোট সারানোর জন্য বোর্ড ওদের অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছে। আমিও আমাদের দেশের বোর্ডের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। দুঃখের কথা, কোনও সহযোগিতাই পাইনি। তখন ঠিকঠাক সাহায্য পেলে আমাকে হয়তো খেলা ছাড়তে হত না।

আগামী শুক্রবার ভরা ইডেন গার্ডেন্সে আবেগতাড়িত করে তুলতে পারে বিকাশ রঞ্জন দাসকে। ফিরিয়ে দিতে পারে ১৯ বছর আগের সোনা রোদ্দুর। কল্পচোখে তিনি দেখতেই পারেন ১৮ বছরের এক তরুণ প্রতিভা বল হাতে ছুটছেন ঢাকার সাবেক জাতীয় স্টেডিয়ামে। তার বিষাক্ত ছোবলে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে রমেশের উইকেট। কে বলে ক্রিকেট কেড়ে নেয়। অনেক মন ভাল করা স্মৃতিও তো ফিরিয়ে দেয় ক্রিকেট। সূত্র, আনন্দবাজার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়