শাহীন খন্দকার : শুরু হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক সচেতন সপ্তাহ । সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও সোমবার থেকে, চলবে আগামী ২২ নভেম্বর পর্যন্ত বৈশ্বিক প্রচার। এবারের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে‘ আমাদের ওপর নির্ভর করবে অ্যান্টিবায়োটিকের ভবিষ্যৎ’। এ সর্ম্পকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.সায়েদুর রহমান অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে তারঁ করা গবেষনার ফলাফল সর্ম্পকে জানালেন, মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে মানুষের শরীরে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সিপ্রোফ্লেক্লাসিন অ্যান্টিবায়োটিক ওষধের কার্যকারিতা হারিয়েছে ৩৩শতাংশ। আর ইকোলাই ব্যাটেরিয়ার বিরুদ্ধে সেফট্রিআক্রোন অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারিয়েছে ২৮ শতাংশ।
অন্য একটি গবেষণার তথ্যের সূত্রধরে ডা. সায়েদুর বলেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বাড়ছে। এর মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে শিশু বিভাগের ৯৬ শতাংশ রোগিকে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ দেয়া হয়। মেডিসিন বিভাগের ৫৪ শতাংশ রোগি এওবং ৮১ শতাংশ সার্জারি রোগিকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়।
এছাড়া চিকিৎসকরা নিজস্ব চেম্বারে প্রায় ৫০ শতাংশ রোগিকে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেন। এমনকি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে আসা ২৫ শতাংশ রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের পরামর্শ দেয়া হয় বলে এই গবেষক জানান। মানুষকে অপ্রয়োজনে বা ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে, যাদের অনেকের অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনই নেই। ভবিষ্যতে এমন অবস্থা দাঁড়াবে যেখানে সেলফভর্তি অ্যান্টিবায়োটিক থাকবে, কিন্তু কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের পরিমাণ অনেক বেশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষ অপচিকিৎসক কিংবা অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তির পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকেন। আর বছরে সাড়ে ৩৬ কোটি মানুষ দুই থেকে তিনবার বিভিন্ন দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে থাকেন। বাংলাদেশে দুই থেকে আড়াই লাখ ফার্মেসি আছে, যাদের বড় অংশই অনিবন্ধিত। এই দুই-আড়াই লাখ ফার্মেসি যদি দিনে অন্তত পাঁচটি করে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করে, তাহলে তারা দিনে ১০ থেকে ১৫ লাখ অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে।
একজন দোকানদারের পক্ষে কোন অ্যান্টিবায়োটিক রোগীর জন্য প্রয়োজন আর কোনটা প্রয়োজন নেই, এটা বোঝারও সুযোগ নেই। এমনকি অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পর্কে তাদের ধারণা না থাকায় তারা রোগীদের দুটি বা তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকে সাময়িক উপসমের জন্য, যা রোগীর জীবন বিপন্ন করে তোলে। অথচ এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণাই নেই।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী অবস্থা থেকে দেশকে ও দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হলে অবশ্যই নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে। জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের প্যাকেট লাল রঙের করা যেতে পারে। যাতে করে প্যাকেট দেখেই সবাই বুঝতে পারে এটা অ্যান্টিবায়োটিক। এটি ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কেনা বা বিক্রি নিষিদ্ধ। এ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্যাকেটে কমপক্ষে ততগুলো ওষুধ রাখতে হবে যাতে একটি কোর্স সম্পন্ন হয়। তাহলেও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স এড়ানো সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :