শিরোনাম
◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞার থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলার নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ.লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা (ভিডিও) ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ফসফরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি

প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ দুপুর
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫২% শিক্ষার্থী

বণিক বার্তা: প্রতি বছরের মতো এবারো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহযোগিতায় শিশুদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য নিয়ে চালানো এক জরিপে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গড় উপস্থিতির হার ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত থাকছে।

জরিপ অনুযায়ী দারিদ্র্যকেই বিদ্যালয়বিমুখতার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বাল্যবিবাহকেও এজন্য দায়ী করছেন তারা। তাদের মতে, অভিভাবকদের নিম্ন আয়ের কারণে উপার্জনমূলক বিভিন্ন কাজে নামতে বাধ্য হয় শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সময়ে অনুপস্থিত থাকা এসব শিক্ষার্থীই একপর্যায়ে শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ে।

ইউনিসেফের জরিপ প্রতিবেদনে বিভাগ ও জেলাভিত্তিক শিক্ষার্থী উপস্থিতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, পাহাড়, হাওড়, উপকূল ও দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের জেলাগুলোয় শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার সবচেয়ে কম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাওড় অঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম সুনামগঞ্জের বিদ্যালয়গুলোয় নবম ও দশম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার মাত্র ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। এ হিসাবে জেলাটির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছে। এ বিষয়ে, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পুলিন চন্দ্র রায় বলেন, অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ও দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির অন্যতম কারণ। এছাড়া দারিদ্র্যের কারণেও অনুপস্থিত থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে আগের তুলনায় এ হার এখন অনেক কমেছে।

বিদ্যালয়ে উপস্থিতির তালিকায় পিছিয়ে রয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানও। এ জেলার আয়তন ও জনগোষ্ঠীর তুলনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক কম। তাই শিক্ষার্থীদের দূর-দূরান্ত থেকে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এ জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় নবম ও দশম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার মাত্র ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। সে হিসাবে এ জেলায়ও শিক্ষার্থীর বড় অংশই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে।

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে অতিমাত্রায় দুর্যোগপ্রবণ দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা কুড়িগ্রাম। বন্যা, খরা, নদীভাঙন, শৈত্যপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয় এ জেলার বাসিন্দাদের। এসব এলাকায় শিক্ষার সুযোগটা তাই স্বাভাবিকভাবেই কম। কুড়িগ্রামের বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ। সে হিসাবে এ জেলায়ও নবম ও দশম শ্রেণীর অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছে।

নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী উপস্থিতিতে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অন্য জেলাগুলোর মধ্যে আছে কিশোরগঞ্জও। জেলার শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার মাত্র ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নবম ও দশম শ্রেণীর ৩৪ দশমিক ৫, কক্সবাজারের ৩৫, সিলেটের ৩৮ দশমিক ২, নারায়ণগঞ্জের ৩৯ দশমিক ৯, ময়মনসিংহের ৪১ দশমিক ৬ ও হবিগঞ্জে ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে বিদ্যালয়ে।

বিভাগভিত্তিক উপস্থিতির হারে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট। ইউনিসেফের জরিপ অনুযায়ী, এ বিভাগের নবম ও দশম শ্রেণীর ৬২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে। অনুপস্থিতির হার সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যান্য বিভাগের মধ্যে খুলনায় অনুপস্থিতির হার ৪৪ দশমিক ৭, রাজশাহীতে ৪৮, রংপুরে ৪৯ দশমিক ৪, ঢাকায় ৫২ দশমিক ১, ময়মনসিংহে ৫৩ দশমিক ৮ ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মান্নান বলেন, ইউনিসেফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির হারের যে তথ্য দিয়েছে, সেটি আমার কাছে অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে। তবে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির হার বেশি, সেটি সত্য। বিশেষ করে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে এ হার অনেক বেশি। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে না গিয়ে পরিবারের জন্য উপার্জনে সহযোগিতা করার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে সরকার মিড ডে মিলসহ নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে কিছু উদ্যোগের বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। বিদ্যালয়ের উপস্থিতির হার বাড়ানোর মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ঝরে পড়া কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি মাধ্যমিক স্তরে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১৮ সালে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থীই ঝরে পড়েছে। ২০১৭ সালে এ হার ছিল ৩৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর ২০১৬ সালে এ হার ছিল ৩৮ দশমিক ৩০ শতাংশ।
অনুলিখন: সৌরভ আরাফাত, সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়