সিরাজুল ইসলাম, সিংগাইর: “আমার পুলা হার্টে অসুখ হয়ে মারা গেছে। তারে কেউ মাইরা ফ্যালাই নাই। তাই কোনভাবেই যেনো ওর লাশ কবর থেকে উঠানো না হয়।”- এ কথা বলেই দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা বছিরন (৬০)।
রোববার বেলা ১১টায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের জায়গীর কবরস্থানে পিতা মুজিবুর রহমানের দায়ের করা হত্যা মামলায় পুত্রের লাশ উত্তোলনকালে এ হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এ সময় উপস্থিত হাজারো নারী-পুরুষ মামলাবাজ পিতার এমন কাণ্ডকে ধিক্কার জানান।
নিহতের মা ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, জায়গীর গ্রামের মুজিবুর রহমানের পুত্র মো. শাহিনুর রহমান (৩৩) জাপান টোবাকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানীতে এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হোন। হার্টে ব্লক থাকায় পর দিন তাকে রিং পড়ানো হয়।
পরবর্তীতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: দেবী শেঠির কাছে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেন। পূনরায় শাহিনের অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকাস্থ ইউনাইটেড হাসপাতালে ৬ আগষ্ট মারা যান তিনি। ওই হাসপাতাল থেকে তার মৃত্যু সনদও প্রদান করা হয়। পর দিন সকালে জানাজা শেষে স্থানীয় জায়গীর শাহাদাতপুর কবরস্থানে নিহতের লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে নিহত শাহিনের উপার্জিত টাকা-পয়সা নিয়ে স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন ও তার পিতার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর জের ধরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে আদালতে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হচ্ছেন- স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন (৩২) , ভাইরাদ্বয়- মিজানুর রহমান (৪০) ও কাজী নজরুল ইসলাম (৪৫) , সুমন্ধি রবিউল ইসলাম (৩৫) এবং চাচাত ভাই ইঞ্জি. আব্দুল বাতেন (৩৬)।
মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত সিংগাইর থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। যার প্রেক্ষিতে আজ রোববার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. হামিদুর রহমানের উপস্থিতিতে মৃত্যুর ১০০ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিংগাইর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তদন্তের অংশ হিসেবে আদালতের অনুমতিক্রমে ময়না তদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। সম্পাদনা: জেরিন মাশফিক
আপনার মতামত লিখুন :