শিরোনাম
◈ বিভেদ কেবল গণহত্যাকারীদের শক্তিশালীই করবে না, বরং আমাদের সর্বনাশ ডেকে আনবে: সারজিস ◈ ই‌ডেন গা‌র্ডেন নয়, আইপিএল ফাইনাল আহমেদাবাদে! ◈ ফিফার কংগ্রেসে যে‌তে পার‌লেন না কিরন, বিমানবন্দর থে‌কে ফেরত পাঠা‌নো হ‌লো ◈ ব্রাজিলের নতুন কোচ আনচেলত্তি মা‌সে ১০ কো‌টি ৩০ লাখ টাকা বেতন পা‌বেন ◈ টাকা ফেরাতে আইন, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়ে জোর দিচ্ছে সরকার ◈ দুর্বৃত্তের হামলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে ঢাবি শিক্ষার্থী নিহত ◈ যেসব এলাকায় বুধবার বিদ্যুৎ থাকবে না জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি ◈ ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধে কড়া বার্তা: তিন রিকশা ভাঙচুর, চালকদের ক্ষতিপূরণ ও বিকল্প আয়ের আশ্বাস ◈ যে কারণে বাংলাদেশে বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছিলো কলকাতার অভিনেতা শাশ্বতকে! (ভিডিও) ◈ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি পুরোপুরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার : প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর, ২০১৯, ০৬:৫৪ সকাল
আপডেট : ১৭ নভেম্বর, ২০১৯, ০৬:৫৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মানসিক নির্যাতন সহ্য করে মুখে হাসি নিয়ে চলে অনেক মেয়ে, আইনি প্রতিকার রয়েছে তা অনেকে জানে না

তারামন : শারীরিক নির্যাতন চাক্ষুষ হলেও মানসিক নির্যাতন অনেকটা অন্তরালের ঘটনা। এর দাগ পড়ে মনে আর মানসিক দহন মিথ্যে হাসির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। নারী নির্যাতন বিষয়ক এক জরিপে দেখা গেছে, স্বামীর দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় ৬৫ শতাংশ নারী। আর মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় ৮২ শতাংশ নারী। এরমধ্যে বিবাহিত নারীরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। তবে, বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে মানসিক নির্যাতনকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব হয় না।যার কারনে সামাজিক এবং আইনীভাবে মানসিক বিষয়গুলোকে স্বামী-স্ত্রীর নিজস্ব বিষয় বলে ধরে নিয়ে নিজেদের সমাধান করতে বলে।

বিত্তশালী পরিবারে সুশিক্ষিত বউ সূচনার সুখ দিকে অনেকেরই হিংসে হয়। স্বামী সন্তান নিয়ে বাহ্যত সুখী এক পরিবার। শফিকের আচার ব্যবহার সবাই মুগ্ধ। তাকে নিয়ে অভিযোগের কোনো সুযোগ নেই কিন্তু সূচনা এক নীরব যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে বিবাহিত জীবনের ১৫ বছর ধরে। ভদ্র মার্জিত শফিকের চুন থেকে পান খসলেই তার দায় গিয়ে পড়ে সূচনার ঘাড়ে। গায়ে হাত তোলার চেয়ে অনেক বেশি আঘাত লাগে তার অকথ্য ভাষার ব্যবহার। লোক দেখানো সুখের আড়ালে মানসিকভাবে সূচনা কতটা যন্ত্রণাতে আছে তা কেবল সে জানে। শারিরীক নির্যাতন নিয়ে সমাজে প্রতিবাদ প্রতিকার বা আইন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। এমনকি পারিবারিক আইনে মানসিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ থাকলেও এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা দুস্কর হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সূচনার মতো শিক্ষিত নারীদের পক্ষে মানসিক নির্যাতনের প্রতিকার পাবার পথ রুদ্ধ হয় তাদের সামাজিক, পারিবারিক মর্যাদার কারনে।

নারীদের প্রতি মানসিক নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হলে সবার আগে সমাজ ও পরিবারের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।

মানসিক নির্যাতনের ধরনটা ব্যক্তিভেদে নানা ধরনের হয়। কটুক্তি, টিটকারী, হেয় প্রতিপন্ন করা, খবরদারি মূলক আচরণ, ব্যক্তি স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ, পৌরুষত্ব দেখাতে বিকৃত আচরণ, ঘরের বাইরে কাজ না করতে দিয়ে স্ত্রীকে অকর্মন্য প্রমাণ করা, সন্দেহপ্রবনতা ইত্যাদি বিষয় মানসিকভাবে নারীকে বিপর্যস্ত করে। পারিপার্শ্বিক কারনে নারী নিজের অবস্থান থেকে এ ধরনের মানসিক নির্যাতনকে সহ্য করে মানসিকভাবে নিজে সবল নয় বলে। তবে, মানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে আইনি প্রতিকার রয়েছে তা অনেকে জানে না। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইনে এ বিষয়ে মামলা করা গেলেও দেশে এ ধরনের মামলা করার হার মাত্র ৩ শতাংশ।

পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ এর ধারা ৩-এ মানসিক নির্যাতনের বিষয়টি আইন দ্বারা একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে মানসিক নির্যাতন পারিবারিক সহিংসতার সংজ্ঞায় পড়ে এবং দেশের আইন অনুযায়ী এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধারাতে বলা হয়েছে ; ‘পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক আছে এমন কোনো ব্যক্তি দ্বারা পরিবারের অপর কোনো নারী বা শিশু সদস্যের উপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বুঝাবে।’

আবার ধারা ৩(খ)-তে মানসিক নির্যাতন কিভাবে হতে পারে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে ; ‘ যেমন- মৌখিক নির্যাতন, অপমান, অবজ্ঞা, ভীতি প্রদর্শন বা এমন কিছু বলা, যা দ্বারা একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলে তা পারিবারিক সহিংসতার সংজ্ঞায় পড়বে। এছাড়া, কাউকে হয়রানি করা, তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা, স্বাভাবিক চলাচল, যোগাযোগ বা ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা মতামত প্রকাশের উপর হস্তক্ষেপ করাও মানসিক নির্যাতন হিসেবে গণ্য করা হবে। কোনো শিশু বা নারী যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকবার কারণে পরিবারের অপর কোনো সদস্য কর্তৃক মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, এই আইন অনুযায়ী তারা প্রতিকার চাইতে পারবেন।’

আইনগতভাবে মানসিক নির্যাতনের মতো অপরাধের শিকার হয়ে একজন নারী স্বাভাবিক জীবনে প্রাণ চঞ্চলতা হারিয়ে ফেলে। নির্জীব জীবনটা বয়ে বেড়াতে গিয়ে শারিরীক ও মানসিক অসুস্থতাতে ভুগে। তবুও বেশিরভাগই মানুষ শারীরিক ও অর্থনৈতিকসহ অন্যান্য নির্যাতনকেই অপরাধ মনে করেন। এমনকি নারীরাও সামাজিক লোকলজ্জার কারণে মানসিক নির্যাতনকে অপরাধ বলে গণ্য করে না। বরং প্রাণান্ত চেষ্টা চালায় স্বামীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে।

মানসিক নির্যাতন সমাজের সকল স্তরে একটি ব্যাধি। যা প্রকট আকার ধারণ করছে ক্রমশ। এক সময় নারীর প্রতি নির্যাতন সমাজের নিম্ন শ্রেণীর বা কম শিক্ষিত মানুষের পারিবারিক বর্বরতার ঘটনা বলে মনে করা হতো কিন্তু বর্তমান সময়ে এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সচ্ছল স্বাধীন শিক্ষিত পরিবারেও নারীরা নির্যাতনের শিকার হয় প্রতিনিয়ত। পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় অগ্রসর নারীদের দমিয়ে রাখার প্রবণতার কারণে ঘরে ঘরে নারীদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এর মাধ্যমে। তাই এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

নারীদের প্রতি মানসিক নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হলে সবার আগে সমাজ ও পরিবারের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। একজন স্বামীকে তার স্ত্রীর প্রতি মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে। দাম্পত্য জীবনে নিজেদের বুঝাপড়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভংগীর পরিবর্তন করতে হবে। অধিকার বা কর্তৃত্ববোধের অহমিকা পারিবারিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দু’জনের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা থেকে সন্তানরা পাবে সুষ্ঠুজীবন এ কথাটা বুঝতে হবে। পরিবারের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রকে মানসিক নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ে আরো বেশি সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। এছাড়া, নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করতে আইন ব্যবস্থায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পাদনা : এইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়