যুগান্তর : সারাদেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদও রয়েছে। চালের আমদানিও গত বছরের এই সময়ের চেয়ে বেশি। পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরবরাহও স্বাভাবিক। কোথাও চালের কোনো ঘাটতি বা সংকট নেই। তারপরও বাড়ছে চালের দাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে দেশে চালের উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ ও মজুদ বেশি রয়েছে। গত অর্থবছরের এ সময় চালের উৎপাদন হয়েছিলো ১০ লাখ ৯০ হাজার টন। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৭৫ হাজার টন। গত অর্থবছরের এ সময় আমদানি হয়েছিলো ২ লাখ ৩৩ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৭৪ হাজার টন। সরবরাহ লাইনে গত অর্থবছরে ছিলো ৬৮ হাজার টন। চলতি অর্থবছর রয়েছে প্রায় ৬ লাখ টন। তারপরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।
এজন্য মিলার ও খুচরা বিক্রেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু পেঁয়াজের পাশাপাশি চালের মূল্যবৃদ্ধি বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে সাধারণ ক্রেতা, বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের। তারা বলছেন, মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। তাই এমন অবস্থা।
রাজধানীর নয়াবাজারের চাল কিনতে আসা মো. রেজা বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে চালের দামও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কিন্তু সরকারের কোনো সংস্থার দাম নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। এখন চালও বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে চাল কিনতে আসা আবদুল হালিম বলেন, বাজারে সরকারের কোনো নজরদারি নেই। যে যেভাবে পারছে সাধারণ মানুষের টাকা লুটে নিচ্ছে।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, চালের বাজার যে তদারকি হচ্ছে না সেটা কিন্তু নয়। আমরা তদারকির মধ্যে রেখেছি। মোকাম থেকে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের দামের তথ্য পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
শুক্রবারের মতো শনিবারও রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজার, নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো ৪২-৪৪ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো ৪৪-৪৮ টাকা। বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো ৩৪-৩৫ টাকা। এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো ৩২-৩৩ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি চালের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে চালের যে দাম বেড়েছিলো, সে দামেই এখনও বিক্রি হচ্ছে। শনিবার এই বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ২৩০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো ২১০০ টাকা। নাজিরশাইল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২৭৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো ২৬০০ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ২০০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো ১৮০০ টাকা। এছাড়া স্বর্ণা চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয় ১৭০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো ১৬০০ টাকা।
কেন চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে মিলাররা বলেছেন, তারা চালের দাম কেজিতে ১ টাকা বাড়ালে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়াচ্ছে ৫ টাকা। মূলত খুচরা ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার কারণেই দেশে চালের দাম বাড়ছে।
অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মিলাররা ধান মজুদ করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এই সময়ে কৃষকের হাতে কোনো ধান থাকে না। নতুন ধানের অপেক্ষায় কৃষক পুরনো ধান বিক্রি করে দেন। ফলে সব ধানই চলে আসে মিলারদের চাতালে। তখন তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়াতে সক্ষম হয়। অনুলিখন : ম. সিদ্দিকা, সম্পাদনা : মাজহারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :