শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:৪৮ দুপুর
আপডেট : ১৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:৪৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দয়ালূ মানুষ বেশি দিন বাঁচে

বিবিসি বাংলা: দয়া বা সহানুভূতি আমাদের কী দেয়? আপনি হয়তো উষ্ণতায় কিছুটা ঝলমলিয়ে উঠবেন, অথবা হঠাৎ করে খুব ভালো বোধ করতে শুরু করবেন। এগুলো হয়তো সত্যি, কিন্তু তবু এর আদ্যোপান্ত গবেষণার জন্য এখন বিজ্ঞানী আর শিক্ষাবিদরা একটি নতুন প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বেদারি কাইন্ডনেস ইনস্টিটিউট অবশ্য এ নিয়ে অনেকের করা হাসি-ঠাট্টার জবাব দিতে শতভাগ প্রস্তুত।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড্যানিয়েল ফেসলার জানালেন, ‘আমরা বিষয়টির বৈজ্ঞানিক দিকটি দেখতে চাই। আমরা এর মনস্তত্ত্ব, শরীরবিদ্যা এবং ইতিবাচক সামাজিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দয়া, সহানুভূতি কিংবা সহমর্মিতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। গত মাসে প্রবীণ ডেমোক্র্যাট এলিজা কামিংসের মৃত্যুর পর সেখানে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দেয়া ভাষণে এই বিষয়টিই ছিল প্রধান বিষয়।
তিনি সেখানে বলেছিলেন, ‘শক্ত মানসিকতার বা শক্তিশালী মানুষ হওয়ার জন্য দয়ালু হতে হয়।’ জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক এলেন ডিজেনেরাসও কিছুদিন আগে জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বে’র বিষয়ে বলেছিলেন, ‘দয়ালু হওয়া মানে নিজের মতের সঙ্গে যার মিলবে তার প্রতি দয়ালু হওয়া নয়। দয়ালু মানে সবার প্রতি দয়া বা সহানুভূতিশীল হওয়া।’

বিশ্ব দয়া বা সহানুভূতি দিবসে দেখে নেয়া যাক, আসলে দয়ালু হওয়ার মানে কী? আর কেন তা গুরুত্বপূর্ণ? বিশেষজ্ঞরা এটা বিশ্লেষণ করে দেখছেন এবং তাদের মতে, এটি মানুষের জীবন-মৃত্যুর মতো জরুরি।

ফেসলারের গবেষণার বিষয় হলো, কিভাবে দয়া ও সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে মানুষকে আরো দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা যায়। বলা যায়, আমরা এখন নির্দয় একটা সময়ে বাস করি। যুক্তরাষ্ট্রে এবং পুরো বিশ্বে ব্যক্তি পর্যায়ে এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে ক্রমাগত সঙ্ঘাত বাড়ছে।

তার মতে, দয়ামায়ার বিষয়টি মূলত একটি ভাবনা, একটি অনুভূতি এবং একটি বিশ্বাস, যা মূলত অপরের ভালোর সাথে সম্পর্কিত। আর নির্দয় হওয়া মানে অসহিষ্ণু মতবাদ, অপরের ভালো সম্পর্কে উদাসীন। সামাজিক মাধ্যমে ট্রলের শিকার হয়েছেন এমন যে কেউ বিষয়টি সহজেই বুঝতে পারবেন।

ফেসলার মনে করেন, মানুষ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রাসী আচরণ করে, অন্যের মতামতের মূল্য কম দেয়। কাইন্ডনেস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য বেদারি ফাউন্ডেশন দুই কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে। যেকোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করা এবং এ কাজের জন্য নতুন নেতা তৈরি করাই এই ইনস্টিটিউটের প্রধান উদ্দেশ্য। আর সে কাজে বিজ্ঞান আর আধ্যাত্মিকতার সম্মিলন ঘটানোর চেষ্টা করছেন গবেষকরা। যেমন, নৃবিজ্ঞানীরা দেখছেন দয়ার মনোবৃত্তি কিভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।

সামাজিক বিজ্ঞানীরা দেখছেন, যারা সাধারণত নির্দয় ব্যবহার করেন, তার পেছনের কারণ কী? অন্য দিকে মনোবিদরা দেখছেন, কিভাবে দয়ালু মনোভাব মানুষের মুড ভালো করে এবং বিষণ্নতার লক্ষণ দূর করতে পারে।

ফেসলার মনে করেন, মানসিক চাপে থাকলে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। উল্টো দিকে, ভালো একটা মানসিক অবস্থায় পাহাড়ের চূড়ার মতো কঠিন কাজও সহজে করতে পারে।

জরুরি বার্তা: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক কেলি হার্ডিং তার নতুন বই ‘দ্য রথ্যাবিট এফেক্ট’-এ দেখিয়েছেন, দয়ালু হওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সর্বোপরি মানুষকে দীর্ঘায়ু করে। ১৯৭০ সালে খরগোশের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, একদল দয়ালু গবেষকের অধীনে কাজ করেছে এমন খরগোশরা গবেষণায় ঠিকঠাক অংশ নিচ্ছে। একজন চিকিৎসক হিসেবে এমন ফল দেখে তিনি রীতিমতো চমকে গিয়েছিলেন। চিকিৎসক হার্ডিন মনে করেন, ‘দয়ালু হওয়ার মাধ্যমে মানুষ অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে।’

দয়ালু জীবনের জন্য কিছু টিপস : পাশের মানুষটির কথা মন দিয়ে শুনুন, কর্কশ আচরণের জবাব দয়ালু মনোভাব দিয়ে দিন, যাদের মতামতের গুরুত্ব সাধারণত কেউ দেয় না, তাদের পাশে থাকুন। এর মাধ্যমে আপনি তাদের মূল্যায়ন করে সম্মান দিলেন, যা তাকে ভালো করতে সাহায্য করবে, নির্দয় আচরণ পেলে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাবেন না, ভাবার চেষ্টা করুণ এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষ একটু ভালো ব্যবহার পেলে, একটু উৎসাহ পেলে অনেক ভালো কাজ করতে পারে, অনেক বড় বাধা অতিক্রম করতে পারে। বর্তমান সময়ে মানুষের গতিশীল জীবনের কারণে অনেক সময়ই মানুষ পাশের মানুষটির ভালো-মন্দ নিয়ে ভাবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের মানসিক সমস্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে এখন দয়ালু হওয়া, পাশের মানুষটির প্রতি সহমর্মী হওয়ার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
অনুলিখন : ওয়ালি উল্লাহ, সম্পাদনা: ইয়াসিন আরাফাত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়