মাহবুব কবির মিলন : প্রচন্ড খারাপ লাগছে সম্প্রতি রেল দুর্ঘটনায় আহত এবং নিহতদের জন্য। আমি গত ছয়-সাত বছর যাবৎ রেলের সঙ্গে খুব গভীরভাবে যুক্ত। শখের বশবর্তী হয়ে রেল ফ্যান গ্রুপের মেম্বার হয়েছিলাম। ¯্রফে আনন্দের রেল ফ্যানিং থেকে সরে এসে রেলের উন্নয়ন ও যাত্রী কল্যাণে ঢুকে গিয়েছিলাম গভীর বাস্তবতার ভেতরে। রেলের অনেক ভালো কাজে আমাদের রেল ফ্যানদের প্রত্যক্ষ এবং সরাসরি ভূমিকা রয়েছে। যার লিস্ট অনেক দীর্ঘ। রেলের হার্ডওয়্যার বা নির্মাণ ছাড়া এমন কোনো তথ্য নেই যা আমরা জানি না। এমন কোনো অনিয়ম নেই যা আমাদের অজানা। এটাই মজার ব্যাপার। রেলের সম্পূর্ণ বাইরে থেকে আমাদের তথ্যের ভা-ার অনেক বিশাল। এখানে প্রধান ভূমিকা পালন করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
সম্প্রতি দুর্ঘটনায় তূর্ণার চালক তিনবার ওভারশুট করেছেন অর্থাৎ সিগন্যাল অমান্য করে প্রচন্ড গতিতে চালিয়ে নিয়ে গেছেন। যা ভয়াবহ অন্যায় এবং হতবাক হওয়ার বিষয়। অভিজ্ঞ চালকের পক্ষে এটা কোনোভাবেই হওয়ার কথা নয়। চালক থাকেন দুজন। একসঙ্গে দুজন ঘুমিয়ে পড়ার কথা নয়। তাছাড়া উদয়ন এক্সপ্রেসের এলএম সাহেব বুঝতে পেরে অনবরত হর্ন বা হুইসেল বাজাচ্ছিলেন। কীভাবে জ্বলজ্যান্ত ট্রেনটাকে প্রচন্ড গতিতে লুপ লাইন ক্রসরত উদয়ন এক্সপ্রেসকে মেইন লাইন দিয়ে ঢুকিয়ে দিলেন ট্রেনের পেটে তা কিছুতেই মাথায় আসছে না। তূর্ণার এই এলএমদ্বয় সম্প্রতি ৭০২ সুবর্ণ ঢাকা থেকে নিয়ে গেছেন। সারাদিন তাদের বিশ্রাম শেষে রাতে ৭৪১ নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিলেন। দেখার বিষয় সারাদিন তারা কি করেছিলেন। গভীর ঘুমে অচেতন কিংবা অজ্ঞান না হলে, চোখ খুলে কোনোভাবেই এই দুর্ঘটনা ঘটার কথা নয়। দেখা দরকার তাদের কোনো বদঅভ্যাস ছিলো কিনা। গার্ড সাহেবেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। তিনি কেন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। সবাই ফেল করেছিলেন তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে। যাদের উপর নিশ্চিন্তে নির্ভর করে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন যাত্রীরা।
আমরা বহুদিন থেকে বলে আসছি লোকো বা ইঞ্জিনের ক্যাবে যেখানে এলএম সাহেবরা বসে চালান সেখানে অবৈধ যাত্রী তোলার বিরুদ্ধে। বারবার বলেছি এটা আমানতের চরম খেয়ানত। জানি না এক্ষেত্রে কি ঘটেছিলো। কুমিল্লা স্টেশনে যদি সিসি ক্যামেরা থাকে তাহলে হয়তো কিছুটা ক্লু পাওয়া যেতে পারে। কিছুদিন পূর্বে সিলেটের ট্রেন দুর্ঘটনার দায় নির্ধারণ করে একাধিক তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কিছুদিন পূর্বে লিখেছিলাম, ফাইল শুধু ওঠে আর নামে। নামে আর ওঠে। নরসিংদীতে ৭২২ আর ৬৭-এর মধ্যে মারাত্মক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিলো ২০১০-এর ৯ ডিসেম্বর। দায়ী চালকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো? এই যুগে ওভারশুট করা চরম অপরাধ। যা কল্পনাও করা যায় না। এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আমি শাস্তির চেয়েও বেশি আগ্রহী কি কারণে তাদের এই অবহেলা বা গাফলতি, সেটা বের করা। দ্রুত তাদের সব ধরনের স্বাস্থ্যগত টেস্ট করা প্রয়োজন। হিউম্যান এরোর বা ফেইলিউরের পিছনে যদি বড় কোনো অনিয়ম বা ত্রুটি কিংবা অন্যায় থেকে যায়, তবে সেটা দুর্ঘটনা নয়, তা একপ্রকার হত্যাকা-। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :