সাইফুল আলম চৌধুরী : যারা নিয়মিত শিং মাছ কিনেন তারা জানেন ছোট পাত্রে বেশি শিং মাছ রাখলে মাছগুলোর কী অবস্থা হয়। দেখা যায়, কোনোটির মাথার অংশে, কোনোটির লেজের, আবার কোনোটির পিঠের অংশের মাংস ঝলসানো ফ্যাকাসে বর্ণের হয়ে যায়। তখন ওই মাছগুলো তাড়াতাড়ি রান্না করে ফেলা ছাড়া কোনো গত্যন্তর থাকে না। বাংলাদেশে এখন ত্রিশটি টিভি চ্যানেল, আরও এগারোটি সম্প্রচারের অনুমতি পেয়েছে বাংলার স্যাটেলাইট জগৎকে আলোকিত করার প্রহর গুনছে। তথ্যমন্ত্রী এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি দেয়ার পর থেকে ছোটবেলার একটি দৃশ্য বারবার মনে পড়ছে। মাকে দেখতাম কিনে আনা অনেক শিং মাছ থেকে প্রতিদিনই কয়েকটা গুঁত্তা খাওয়া-ঝলসানো-ফ্যাকাসে বর্ণের শিং মাছ রান্না করতে, প্রতিনিয়ত শিং মাছ খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে যেতাম আমরা। বাংলাদেশে এতো টিভি চ্যানেল দর্শকদের অবস্থা এখন বাধ্যগত গুঁত্তা খাওয়া শিং মাছ খাদকের মতো।
আর টিভি চ্যানেলগুলোর সাংবাদিকদের অবস্থা যে গুঁত্তা খাওয়া শিং মাছের মতো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে অনুযায়ী, বাংলাদেশে টিভি দেখে নয় কোটি মানুষ, যার মধ্যে বাংলাদেশি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের দর্শক ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ গড়ে একটি টিভি চ্যানেল দেখে মাত্র ২২ লাখ। তুলনা করলে দেখা যাবে, মিরপুরেও এর চেয়ে বেশি লোক থাকে। আর বেসরকারি টিভি চ্যানেলের চলৎ শক্তি বিজ্ঞাপনের বাজার বছরে পাঁচশ কোটিও হবে না। অর্থাৎ একটি টিভি চ্যানেল গড়ে মাসে এক কোটি টাকাও পায় না, পাবে না। এই আয় দিয়ে একটি আধুনিক মানসম্পন্ন টিভি চ্যানেল বেতন দেবে কীভাবে? অবস্থা এমন হতে পারে কোনো কোনো টিভি চ্যানেল দর্শকদের এই অফার দিতে পারেন যে, এক ঘণ্টা তাদের টিভি চ্যানেল দেখলে তারা ওই দর্শককে এক কেজি পেঁয়াজ ফ্রি দেবেন।
টিভি চ্যানেলের সংখ্যা দিয়ে গণমাধ্যমের বিস্ফোরণ ঘটছে বলে দাবি করা সম্ভব, কিন্তু সেটি সাংবাদিকতা শিল্পের জন্য নিঃসন্দেহে নেতিবাচক বিস্ফোরণ। দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে একটি মত প্রচলিত আছে, সেটি হলো গণমাধ্যমের সংখ্যা বাড়তে দাও, কিন্তু গণমাধ্যমের পুঁজি বাড়তে দিও না। এতে সাংবাদিকরা নিজেরা কামড়াকামড়ি করবে, আর তাতে রাজনৈতিক শক্তির চিন্তাধারায় গণমাধ্যম চলতে বাধ্য হবে। মিডিয়া লজিককে গ্রাস করবে পলিটিক্যাল লজিক। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :