শিরোনাম
◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর, ২০১৯, ০৮:০৮ সকাল
আপডেট : ১৩ নভেম্বর, ২০১৯, ০৮:০৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মসিউর রহমান রাঙ্গার গ্রেপ্তার বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

 

প্রভাষ আমিন : আমি বিস্মিত, ব্যথিত, ক্ষুব্ধ, লজ্জিত। আমি ভেবেছিলাম ১১ নভেম্বর সকাল হওয়ার আগেই জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাবেন। তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে মামলা হবে। তার বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছিলাম। আশা করেছিলাম, এই দাবি আমাদের করতে হবে না। কারণ এখন ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। ভেবেছিলাম সোচ্চার প্রতিবাদে উত্তাল হবে রাজপথ। কারণ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাঠের নেতাকর্মীরা এখনও মরে যায়নি। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, বর্তমানে বাংলাদেশের ‘প্রধান বিরোধীদল’ ফেসবুক ছাড়া আর কোথাও তেমন প্রতিবাদ হয়নি। সাবেক বিরোধীদল বিএনপিরও কোনো আওয়াজ শুনিনি। সদা বিদ্রোহী বামদেরও প্রতিবাদ দেখিনি। হতে পারে, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙা এতোই ভয়ংকর, তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই অথবা সে যেটা বলেছে সেটা সত্যি। আসলে দুটির কোনোটিই সত্যি নয়। আসলে আপোসের চোরাবালিতে বারবার হারিয়ে যায় আমাদের অনেক মহৎ অর্জন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতারা আজ সব দলে নেতৃত্বে, তারপরও নূর হোসেনের অপমানের বিচার চাইতে রাজপথে অবস্থান নিতে হয় তার মাকে, তার ভাইকে, তার বোনকে।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখল করেন এইচ এম এরশাদ। ১৯৮৩-এর মধ্য ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারপর সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছাত্র-শিক্ষক-জনতা-পেশাজীবী ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। প্রথমে পনেরো দল ও সাত দল এবং পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আট দল, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাত দল এবং বামদের নেতৃত্বে পাঁচ দলÑ এই তিন জোট মিলে এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিলো ছাত্রদের প্রতিরোধ। এরশাদের নয় বছরের শাসনামলেই রাজপথ ছিলো প্রতিবাদে উত্তাল। তবে আন্দোলনের দুটি পর্যায় চূড়া স্পর্শ করেছিলো। একটি ১৯৮৭ সালের নভেম্বরে, আর অপরটি ১৯৯০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি ছিলো। সেই মিছিলে বুকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে জীবন্ত পোস্টার হয়ে মাঠে নামেন পরিবহন শ্রমিক ও যুবলীগ নেতা নূর হোসেন। তার এই অভিনব প্রতিবাদে অন্য মাত্রা পায় আন্দোলন। তখনকার আট দলীয় জোটের নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ির কাছে চলে আসেন নূর হোসেন। শেখ হাসিনা তার মাথায় হাত বুলিয়ে শার্ট গায়ে দিতে বলেন। তার আশঙ্কা ছিলো, এমন জীবন্ত পোস্টার পুলিশের সহজ টার্গেটে পরিণত হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা মাথায় হাত রেখেছেন, এতেই বর্তে যান নূর হোসেন। নতুন উৎসাহে স্লোগানে কাঁপান রাজপথ। শেখ হাসিনার আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। স্বৈরাচার এরশাদের পুলিশের গুলি বিদীর্ণ করে দেয় নূর হোসেনের বুক। সেই থেকে নূর হোসেন সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অনন্ত অনুপ্রেরণার প্রতীক।

প্রতিবছর বিভিন্ন সংগঠন ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস পালন করে। ১৯৮৭-এর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন জীবন দিয়ে আন্দোলনে যে গতি এনেছিলেন, তা চূড়ান্ত পরিণতি পায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে পতন ঘটে এরশাদের। নূর হোসেনের আত্মাহুতির ৩২ বছর পর এসে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা আবিষ্কার করলেন, নূর হোসেন মাদকাসক্ত ছিলেন, ইয়াবাখোর ছিলেন। মসিউর রহমান রাঙ্গা নিছক একজন তৃতীয় শ্রেণির রাজনীতিক। নামে জাতীয় পার্টি হলেও কার্যকলাপে ‘যাত্রা পার্টি’র ধরন বলেই রাঙ্গার মতো রুচিহীন লোক এই পার্টির মহাসচিব হতে পেরেছে। ৩২ বছর পর স্বৈরাচারের সহযোগী রাঙ্গার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, সেই আসলে নেশা করে বক্তৃতা করতে এসেছেন। রাঙ্গার এই রুচিহীন কথার একটাই জবাব, মামলা ও বিচার। তবুও একটাই কথা, রাঙ্গা হয়তো এখন ইয়াবা খেয়ে বক্তৃতা করেন, কিন্তু ১৯৮৭ সালে ইয়াবা ছিলো না। পেটানো পেশীবহুল শরীরের পরিবহন শ্রমিক নূর হোসেন ছিলেন প্রতিবাদী মানুষের প্রতীক।

কোনো মাদকাসক্তের শরীর এমন হতে পারে না।মসিউর রহমান রাঙ্গা যে আজ বাংলাদেশে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার সাহস পান এবং দিলেও কিছু হয় না, তার দায় আমাদের। ১৯৯০ সালে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে পতনের পর বছর পাঁচেক কারাগারে থাকতে হয় এরশাদকে। এরপর প্রথমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে মুক্তি পান তিনি। বছর দুয়েকের মধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিলে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। পতনের মাত্র সাত বছরের মধ্যে এরশাদকে রাজনৈতিক দোসর করে নেয় তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর কেউ কি ভেবেছিলেন, এরশাদ আবার এই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবেন, মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হবেন, বিরোধী দলীয় নেতা হবেন? মৃত্যুর সময় এরশাদ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। তার দল জাতীয় পার্টি এখনো সংসদে গৃহপালিত বিরোধীদল। রাজনীতির এই আপোসকামিতার সুযোগেই রাঙ্গার মতো চাঁদাবাজ মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান, রাজনীতিতে বড় বড় কথা বলার সুযোগ পান। অথচ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জনগণ রাজপথে পেলে রাঙ্গার হাড়ও খুঁজে পাওয়া যেতো না। আমি নিজে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের একজন অতি ক্ষুদ্র কর্মী ছিলাম।

কিন্তু এখনো নিজের যৌবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রাজপথে কাটাতে পেরেছি বলে আমি গর্বিত। কিন্তু রাজনীতির মারপ্যাঁচে হারিয়ে যায় আমাদের সেই অর্জনগুলো। আমরা যাদের নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলন করেছি, তারা আজ মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। এটাই লজ্জার। এই দেশে স্বৈরাচারের দোসররা আজ শহীদদের অপমান করার স্পর্ধা দেখান। নিজেদের প্রতারিত মনে হয়। নূর হোসেন ছিলেন যুবলীগের কর্মী। তিনি নেতা হতে মাঠে নামেননি। নেমেছিলেন সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য, স্বৈরাচারের পতনের জন্য। মৃত্যুর আগে সর্বশেষ শেখ হাসিনা নূর হোসেনের মাথায় হাত রেখেছিলেন। শেখ হাসিনার স্নেহের পরশকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েই নূর হোসেন বুক পেতে দিয়েছিলেন পুলিশের গুলির সামনে। সেই নূর হোসেনকে যারা আজ অপমান করেন, তাদের বিচারের দাবি আজ শেখ হাসিনার কাছেই করছি। মসিউর রহমান রাঙ্গার গ্রেপ্তার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়