কামরুল আহসান : আমাদের সমাজে নাচ নেই এটা একটা প্রধান প্রতিবন্ধকতা। বোধ করি এ কারণেই এ দেশের মানুষ এতো অসহিষ্ণু, এতো অস্থির। নাচ শুধু আনন্দের বাহন নয়, একটা একটা স্পিরিচুয়াল ব্যাপার। মানুষের হৃদয়কে খোলস থেকে মুক্ত করে নাচের মতো এমন অভিনব উপায় আর কিছু নেই। আমাদের যতো জড়তা, হীনতা, অসুস্থতার মূল কারণ আমাদের শরীর তেমন নাড়াচাড়া খায় না। নাচ সমস্ত শরীরকে এক মুহূর্তে আন্দোলিত করে। এটা একটা খুব ভালো ব্যায়াম। সুফীদেরও নিজস্ব নাচ আছে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা জনগোষ্ঠীরই আলাদা রকম নাচ আছে। আবহাওয়া, আর্দ্রতা, শীতলতা, খাদ্যাভ্যাস, ভূমির গঠন, আরও নানা পারিপার্শ্বিক, সাংস্কৃতিক কারণেই এটা হয়েছে। নাচ হচ্ছে মানুষের আদিততম ভাষা। মানুষ যখন মুখ দিয়ে অর্থবোধক শব্দ উচ্চারণ করতে পারেনি তখন সে শরীরের অঙ্গভঙ্গি দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করেছে। এ এক অসামান্য ব্যাপার।
আজও তাই আমরা মুখোমুখি কথা বলার সময় হাত নাড়াই, চোখ নাড়াই, যতো কথা মুখে বলি তার চেয়ে বেশি বলি ইশারায়, ইঙ্গিতে। এ নাচের মুদ্রাই। সমগ্র বিশ্বব্রহ্মা- বস্তুত নৃত্য করছে। প্রকৃতির সব কিছুতেই একটা একটানা সুর, ছন্দ। মানুষই একমাত্র এই সুরছন্দ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে তার অতি বিচার-বিবেচনার কারণে। সব কিছুতেই এখন কঠিন-কঠোর ব্যক্তিত্বের মুখোশ। মানুষকে এক প্রকার রোবট করে ফেলার প্রকল্প চালু হয়েছে। আমার খুব ভালো লাগে যখন বিয়েবাড়িতে এক দঙ্গল ছেলেমেয়ের খেমটা নাচ দেখি। সবাইকেই ভরতনাট্যম জানতে হবে তা কোনো কথা নয়। আমি নিজে আমার নিজের তালে খুব সুন্দর নাচি এবং নাচতে আমার ভালো লাগে। নাচ মানে শরীরকে একদম ছেড়ে দেয়া। শরীর আমাদের নানা আড়ষ্টতায় জড়িয়ে রাখে। শরীরের আড়ষ্টতা ছড়িয়ে পড়ে মনে। আমাদের ব্যক্তিত্বহীনতার, ক্ষুদ্রতার শুরু ওইখানে।
নাচ মানুষকে একত্রিত করে খুব দ্রুত। একটা অপরিচিত দলও যদি হাতে হাত ধরে ধরে গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে, কার্তিকের মিঠা রোদে নাচতে শুরু করে আত্মার বন্ধু হতে তাদের লাগবে এক মুহূর্ত। আমাদের পরিবারে নাচ নেই, সবাই একসঙ্গে বসে গানও গাওয়া হয় না, ফলে আমাদের বন্ধনগুলো দৃঢ় নয়। আমি মনে করি আমাদের স্কুল-কলেজে, অফিসে-আদালতে, বাসা-বাড়িতে নিয়মিত নৃত্যচর্চা করা উচিত। অফিসে গিয়ে বস ও বয়সসহ অফিসের সবাই একসঙ্গে গোল হয়ে হাত ধরে কোনো সংগীতের মূর্ছনায় দশ-পনেরো মিনিট নাচা উচিত প্রতিদিন। আগে কিছুক্ষণ নেচে তারপর কাজ শুরু করা উচিত। এতে কাজের আউটপুট ভালো হবে। এ নিয়ম চালু করা উচিত স্কুলে-কলেজে। তাহলে শিক্ষার মান বহুগুণ বেড়ে যাবে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :