সিরাজুল ইসলাম, সিংগাইর: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার সংগঠকের চেয়ারটি একাধারে ১৯ বছর ধরে আকঁড়ে আছেন পরিমল চন্দ্র অধিকারী।ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে দফায় দফায়।উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি চালাচালি হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই। এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছেন পরিমল বাবু।বকেয়া পড়েছে তার ৭ বছরের সরকারি বাসা ভাড়া।
সূত্রমতে, গত ২০১২ সালের পয়লা ডিসেম্বর হতে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পরিমল চন্দ্র অধিকারীর কাছে উপজেলা পরিষদের আবাসিক বাসা ভাড়া (মহুয়া-২) বাবদ ৩ লাখ ১২ হাজার ৫৩১ টাকা পাওনা রয়েছে।উপজেলা প্রশাসন থেকে একাধিকবার সরকারি বাসা ভাড়া পরিশোধের তাগিদ দিলেও তার তোয়াক্কা করছেন না তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহেলা রহমত উল্লাহ ভাড়ার বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে দুটি চিঠি দেন তাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদের এক কর্মচারী জানান, একমাত্র পরিমল বাবু ছাড়া অন্য কারো কাছে কোনো সরকারি বাসা ভাড়ার টাকা বাকি নেই।
জানা গেছে, ইতিপূর্বে সিংগাইর উপজেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার মাঠ সমন্বয়কারি ভুক্তভোগী আব্দুস সাত্তার মুন্সী পরিমল চন্দ্র অধিকারীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তভার দেয়া হয় উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম খানকে। তিনি তদন্তে সত্যতা পেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ওই প্রতিবেদনে সংগঠক পরিমল চন্দ্র অধিকারী ঋন তহবিল হতে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ, সদস্য পর্যায়ে ঋন প্রদান কালে ৩০০ টাকার ননজুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পের স্থলে ১৫০ টাকার ষ্ট্যাম্প ব্যবহার করে ২১ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব ক্ষতি, সদর দফতর অনুমোদিত বাজেট লঙ্ঘন করে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত বেতন-ভাতা গ্রহণসহ তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে ।
ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহেলা রহমত উল্লাহ পরিমল বাবুর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরকে লিখিতভাবে অবগত করেন। তার পরেও পরিমল বাবু অদৃশ্য শক্তির বলে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। অপরদিকে, অভিযোগকারি সাত্তার মুন্সীকে বদলি করা হয়েছে অন্যত্র। এ নিয়ে উপজেলা পাড়ায় কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে চলছে নানা কানা-ঘুষা। সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মহিলা সংস্থার সিংগাইর উপজেলা সংগঠক অভিযুক্ত পরিমল চন্দ্র অধিকারী সরকারি বাড়ি ভাড়া বাবদ ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বকেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দেব।
অনিয়ম দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্টে হস্ত মজুদের টাকা আত্মসাৎ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে গত জুন-জুলাই মাসের ৩০ জন সেলাই প্রশিক্ষনার্থীর লক্ষাধিক টাকা তার কাছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহেলা রহমত উল্লাহ বলেন, জাতীয় মহিলা সংস্থার পুরো কার্যক্রমই প্রশ্নবিদ্ধ, এরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে কোনো সমন্বয় করে কাজ করেন না।সংগঠক পরিমল বাবুর অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্তে সত্যতা মিলেছে।
সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।বকেয়া বাসা ভাড়ার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ভাড়া পরিশোধ না করলে মামলা করে টাকা আদায় করা হবে।সম্পাদনা: জেরিন মাশফিক
আপনার মতামত লিখুন :