প্রকৌশলী নওশাদুল হক : একটা সময় ছিলো যখন পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক আর ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্কের খুব একটা পার্থক্য ছিলো না। আজও কি তেমনই আছে, নাকি নেই? অনেকেই মনে করেন, বর্তমান প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলার প্রয়োজনে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কটা হওয়া উচিত বন্ধুত্বপূর্ণ।
আবার কেউ কেউ বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তুলতে শিক্ষকের হাতের বেত পুনরুদ্ধার করা জরুরি। ভিন্নজনের ভিন্নমত থাকতেই পারে। তবে এই মুহূর্তের বাস্তবতা বড়ই বেকায়দাময়। সম্প্রতি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মসজিদে নামাজ শেষে অফিসে ফেরার পথে কয়েকজন ছাত্র তাকে কোলে করে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়। শিক্ষকের শরীর ময়লা কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত ছিলো বলেই কি পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশ্যে এ হীন কাজ করেছে তার স্নেহধন্য ছাত্ররা? বেচারার পরিবারের ভাগ্য অনেক ভালো যে, তিনি সাঁতার জানতেন। খুব নিকট অতীতে কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর ইসলামিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় শিক্ষক ক্লাসে ঘুমাচ্ছিলেন। চারজন ছাত্র তার কক্ষের বাইরে নিজেদের মধ্যে গল্প করছিলো। এতে শিক্ষকের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো। চারজন ছাত্রকে ডেকে কক্ষের ভেতরে এনে দরজা বন্ধ করে স্টিলের পাইপ দিয়ে পেটাতে শুরু করলেন। শিক্ষকের অমানবিক পিটুনিতে সাত বছর বয়সের ছাত্র শুভ হাসান মারা গেলো।
এতে শিক্ষকেরই বা কি দোষ? ঘুম ভাঙানোর অপরাধে এতোটুকু শাস্তি তো হতেই পারে। ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের এমন বৈরিতার কারণ কী? আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, ভার্চুয়াল ভাইরাসে অধিক আসক্তি, সংস্কৃতির পরিবর্তন, ড্রাগের সহজলভ্যতা, নৈতিক শিক্ষার অভাব, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব, পারিবারিক কলহ, অসৎসঙ্গ, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি, সর্বোপরি শিক্ষকদের মূল্যবোধের অবক্ষয়ই ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্কের প্রধান অন্তরায়। এ থেকে উত্তরণের উপায় বের করার দায়িত্ব কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার নাকি রাষ্ট্রের? এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কোনো প্রতিষ্ঠানের নয় নিশ্চয়ই। কারণ এ সমস্যা হতে উত্তরণের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের উপর বর্তায়। শিক্ষক এবং অভিভাবকদের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, নৈতিক শিক্ষা, আদর, শাসন সর্বোপরি ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চাই পারে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের এই বেহালদশা অনেকাংশে দূর করতে।লেখক : সভাপতি, ঢাবি সমাজকল্যাণ অ্যালামনাই ফোরাম
আপনার মতামত লিখুন :