শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৪ দুপুর
আপডেট : ১২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পাহাড় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কালের স্বাক্ষী রানীখং মিশন

শাহীন খন্দকার : যতোদূর দৃষ্টি যায় মেঘালয়ের মেঘোমালা পাহাড় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নেএকোনা জেলার দূর্গাপুর গারো পাহাড়।সেই পাহাড়ি জনপদের আরেকটি আকর্ষণ রানীখং টিলা, টিলার ওপর নির্মিত শত বছরের প্রাচীন রানীখং মিশন।সোমেশ্বরীর কূল ঘেঁষে স্থাপিত এ মিশনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ক্যাথলিক ধর্মপল্লী।

স্থানীয়ভাবে এটি ‘সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী’ নামেই পরিচিত।ভারত সীমান্ত ঘেঁষে নান্দনিক কারুকার্যে নির্মিত এই ক্যাথলিক মিশন একটি দর্শনীয় স্থান।প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যান সেখানে।প্রকৃতি আর ইতিহাস সেখানে সযত্নে রয়েছে একসঙ্গে।‘রানীখং’ নামকরণের নেপথ্যেও রয়েছে নানা ইতিহাস।এটি মূলত পাহাড়ি টিলার নাম।কথিত আছে, এক সময় এই জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলটিতে এক রাজা ছিলেন।সেই রাজার কন্যা সন্তানের নামানুসারেই টিলাটির নাম করন।তবে জনশ্রুতি রয়েছে রাজার কন্যা ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে রাজ প্রাসাদের পিছনের অংশ সোমেশ্বরী নদীর কুলঘেষে রাক্ষসীর রুপ ধারণ করে সেই থেকে এর নামকরণ রানীখং।গারো বৈশ্যা রাজা ওরবর্তীতে রাজাকে পরাস্ত করে সেখানে জনবসতি গড়েন।রাণীখংয়ের নামানুসারেই জায়গাটির নাম রাখা হয় রানীখং।তবে এই ইতিহাসের স্বপক্ষে যুক্তি নেই। নামকরণ যে ভাবেই হোক না কেন এর ‘রাণী’ শব্দটির প্রয়োগ যথার্থ ও স্বার্থক।কারণ এই অঞ্চল সত্যিই সৌন্দর্যের রানী।ছোট বড় পাহাড় টিলা গারো অঞ্চলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যে কোনো আগন্তুকের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।পরিচয় করিয়ে দেয় নতুন এক পৃথিবীর সঙ্গে। রানীখং মিশন ও ক্যাথলিক গীর্জা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে।

যদিও এর আগে ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ময়মনসিংহ অঞ্চলে খ্রিস্টের বাণী প্রচারিত হতে থাকে।দুর্গাপুরের পাহাড়ি জনপদে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সুসং দুর্গাপুরের টাকশালপাড়া গ্রামের পাঁচ সদস্যের একটি আদিবাসী প্রতিনিধি দল ঢাকা ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ হার্থের সঙ্গে দেখা করে তাদের এলাকায় মিশনারী যাজক পাঠানোর অনুরোধ জানান।

বিশপ হার্থ ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ত্যাগ করার সময় তাদের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ ও গারো অঞ্চলে মিশনারী প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন।এরপর ধর্মপালের দায়িত্ব নেন লিনেবর্ণ। তিনি এডলফ্ ফ্রান্সিস নামে একজন ফাদারকে দুর্গাপুরের টাকশাল পাড়ায় যীশুর বাণী ও ধর্ম প্রচারের জন্য পাঠান।

১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ একদল গারো নারী-পুরুষকে বাপ্তিষ্ম প্রদানের মধ্য দিয়ে তিনি প্রচার কাজের সূচনা করেন।এরাই পৃথিবীর প্রথম ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত গারো সম্প্রদায়।প্রথম চার বছর টাকশালপাড়া থেকেই অস্থায়ীভাবে ধর্ম প্রচারের কাজ চালানো হয়। এরপর ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে সুসং মহারাজ জমিদারের কাছ থেকে টিলাটি বন্দোবস্ত নিয়ে রানীখং টিলায় স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় মিশন ও ক্যাথলিক গীর্জা।এটিই ‘সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী’।বর্তমানে এখানে ফাদারের দায়িত্বে আছেন ফাদার প্লিনসন।

এই ধর্মপল্লীর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, চিকিৎসালয়, বড় চিকিৎসালয় ছাড়া স্কুলগুলো সরকারি হয়েছে। হাইস্কুলটি এমপিওভুক্ত। সেই সাথে ৪০টি ছোট গীর্জা।সমতল থেকে বেশ উঁচু রানীখং টিলা। টিলার দক্ষিণ দিকে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বার পেড়িয়ে একটু এগুলেই চোখে পড়বে ধর্মপাল বিশপ হার্থসহ পাঁচ গারো হাজং আদিবাসীর মূর্তিসংবলিত একটি নান্দনিক ভাস্কর্য। ভাস্কর্যের ডানদিকে একটি ফলকে লিখে রাখা হয়েছে ধর্মপল্লী প্রতিষ্ঠার ইতিহাস।ভাস্কর্যের ঠিক পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে খ্রিস্টের মূর্তি।

এখান থেকে একটু দূরের একটি কক্ষে সাধু যোসেফের প্রতিকৃতি।এর বাম পাশে শত বছরের প্রাচীন ক্যাথলিক গীর্জা।পাঁচটি চূড়াসহ গীর্জাটির স্থাপত্যশৈলী অনন্য; মার্বেল পাথরের কারুকার্যশোভিত।গীর্জার সামনের পথ দিয়ে ওপরের দিকে এগুলে দেখা যাবে বিশ্রামাগার এবং মিশন পরিচালিত বিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের পৃথক হোস্টেল।সবকিছু সাজানো-গোছানো।টিলার পূর্বপাশে দাঁড়িয়ে একটু নিচে তাকালেই সোমেশ্বরীর স্বচ্ছ জলধারা বয়ে যেতে দেখা যায়।

উত্তরের গারো পাহাড় থেকে ঝরনার মতো নেমে আসা এ নদীটির আদি নাম ‘সিমসাঙ্গ’।পরে সুসং রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সোমেশ্বর পাঠকের নামানুসারে এর নাম হয় ‘সোমেশ্বরী’।

নদীর স্বচ্ছজলধারায় বৃষ্ট্রির ঢলে আদিবাসী -বাঙালিদের লাকড়ি ধরা নজর কেড়ে নেয়।আরে মনোমুগ্ধকর আদিবাসী বাঙালি নারী-পুরুষদের পাহাড়ি কয়লা এবং কাঠ সংগ্রহের দৃশ্য।ওপরের নীল আকাশও খুব কাছাকাছি মনে হয় রাণীখং টিলায় দাঁড়িয়ে চোখ মেললে দু'হাত বাড়িয়ে দেয় ভারতের মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে সারি সারি আদিবাসী বাড়ীঘর উঁকি ডাকছে যেনো হেঁটে যাওয়া পথিককে!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়