শিরোনাম
◈ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিকুলাম যুগোপযোগী করার তাগিদ রাষ্ট্রপতির ◈ ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনা, সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ◈ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে: মির্জা ফখরুল ◈ বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতি দুঃখজনক: পিটার হাস ◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১৫ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে

প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ০৭:৩৬ সকাল
আপডেট : ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ০৭:৩৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বর্তমান বিশ্বে সংসার সুরক্ষিত রাখতে স্বামীদের উচিত বিশ্বনবী হযরত মহানবী (সা.) এর আদর্শ লক্ষ্য করা!

মুসবা তিন্নি : মহানবী (সা.) এর জীবনের সব ভূমিকাই মানবজাতির আদর্শ। আজ আমরা জানব কেমন ছিলেন তিনি স্বামী হিসেবে? নবীজি (সা.) স্ত্রীদের কাছে সবচেয়ে বড় সান্তনার জায়গা ছিলেন। স্ত্রীদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন। কারও কথা হেসে উড়িয়ে দিতেন না। স্ত্রীর ভালো গুণ নিয়ে প্রশংসা করতেন। মন খুলে তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। যদি জিজ্ঞেস করা হয়, বর্তমান সময়ে কেন অধিক পরিমাণে ডিভোর্স হচ্ছে? দাম্পত্য জীবন কেন বিষাদে ভরে যাচ্ছে? সোজা উত্তর, উপরের মাত্র এ ক’টি গুণ না থাকার কারণে।

স্বামী তার স্ত্রীর প্রশংসা করতে অস্বস্তিবোধ করে! কারণ অনেক স্বামী আছেন, যারা স্ত্রীর প্রশংসা শুনলে তার ‘ইগো’তে প্রচণ্ড বাধে। আবার অনেক স্ত্রীও আছেন যারা স্বামীর কথা তোয়াক্কা করেন না। তাদের জন্য রাসুল (সা.) হলেন সর্বোত্তম আদর্শ।

দিলখোলা প্রশংসা : দোষ-গুণ মিলিয়েই একজন মানুষ গড়ে ওঠে। পুরোদস্তুর ভালো বা মন্দ এমন কেউ পৃথিবীতে নেই। নবীরা বাদে আল্লাহ কাউকে এমন সৃষ্টি করেননি। তবে মানুষের স্বাভাবিক ফিতরাত হলো সে প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে। অন্যের কাছে স্বীকৃতি কামনা করে। গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে চায়। তাই নবীজিও তাঁর স্ত্রীদের ভালো গুণ নিয়ে প্রশংসা করতেন। যেমন রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.) এর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ‘সারিদ যেমন সব খাবারের তুলনায় শ্রেষ্ঠ, আয়েশাও তেমনি অন্য নারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ (মুসলিম)।

অপছন্দনীয় বিষয়েও অসন্তুষ্টি নয় : আবার অপছন্দনীয় কোনো গুণ দেখলে তেতিয়ে ওঠার প্রয়োজন নেই। এ নিয়ে মনে বেদনা সঞ্চার করে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। এক হাদিসে এসেছে, স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি যেন অন্যায় আচরণ না করে। তার কোনো একটা স্বভাব পছন্দ না হলেও অন্য আরেকটা স্বভাব পছন্দ হবে। (মুসলিম)।

সাংসারিক কাজে সহযোগিতা : নবীজি (সা.) নিজ হাতে গৃহস্থালির টুকটাক কাজেও হাত লাগাতেন। ঘর ঝাড়– দিতেন। এমনকি বিবিদের সঙ্গে সবজি কাটতে কাটতে গল্প করতেন। এ সময় যেন তিনি একদম সাংসারিক বনে যেতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি পরিবারের কাজে অংশ নিতেন। (বোখারি)।

ভালোবাসা প্রকাশে অকার্পণ্যতা : একজন স্বামীর জন্য উচিত স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করা। বৈধ পন্থায় নানাভাবে উপস্থাপন করা। মমতার পরশ বুলিয়ে দেয়া। স্ত্রীর ভরসা অর্জন করা। হাদিসে পাকে এসেছে, নবীজি (সা.) রোজা থাকাবস্থায় চুমু দিয়ে ভালোবাসার জানান দিতেন। (মুসলিম)। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা আছে, আমি পান করে পাত্রটা নবীজির দিকে বাড়িয়ে দিতাম। তিনি আমার এঁটো করা স্থানেই মুখ লাগিয়ে পান করতেন। দাঁত দিয়ে গোশত ছিঁড়ে খাওয়ার পর আমার লালা লেগে থাকা স্থানেই তিনি মুখ লাগিয়ে খেতেন। (মুসলিম)।
এক হাদিসে নবীজি (সা.) আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমা তুলে দেবে, সেটার বিনিময়ও আল্লাহ তোমাকে সওয়াব দান করবেন। (বোখারি)। এভাবে ভালোবাসতে জানলে জীবনে আর কি কিছুর অভাব থাকে?

বিরক্তি নয় সহমর্মিতা : নাসাঈ শরিফে বর্ণিত আরেক হাদিসে এসেছে, সাফিয়া (রা.) এক সফরে নবীজির সফরসঙ্গী হলেন। সাফিয়া কিছুটা ধীরে পথ চলছিলেন। পিছিয়ে পড়ছিলেন বারবার। নবীজি তার দিকে এগিয়ে গেলেন। গিয়ে দেখলেন, সাফিয়া কাঁদছেন আর বলছেন, আপনি আমাকে একটি ধীরগামী গাধায় সওয়ার করিয়েছেন। নবীজি স্নেহভরে সাফিয়ার চোখের অশ্রু মুছে দিলেন। কাঁদতে বারণ করলেন। সুবহানাল্লাহ! আহা! জীবনটাকে এভাবেই তো উপভোগ করতে হয়। মনের মাধুর্য মিশিয়ে জীবনকে সোন্দর্যরূপে গড়ে তুলতে হয়। তিনি কতই প্রেমময় ছিলেন। কীভাবে স্ত্রীকে সান্ত¡না দিচ্ছেন? রাগের পরিবর্তে তার অশ্রু মুছে দিলেন। আমরা হলে দু’কথা না শুনিয়ে ছেড়ে দিতাম না!

ব্যবহারে অসম্মান না করা : বর্তমান সমাজের অবস্থা তো ভয়াবহ। তুচ্ছ বিষয় থেকে বিরাট ঝগড়ায় গড়ায়। সাময়িক মনোমালিন্য চরম আকার ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স। পরে আফসোস। অথচ নবী (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে মনোমালিন্য হলেও কাউকে খাটো করতেন না। কথাবার্তায় কোমল পন্থা অবলম্বন করতেন। কারও মনে আঘাত দিয়ে কথা বলতেন না। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ইফকের ঘটনা তিনি আমার প্রতি আগের মতো উচ্ছ্বাসিত ছিলেন না। আমি অভিযোগ করলে তিনি কোমল আচরণ করতেন। কিন্তু আমার কষ্ট লাগত। সে ঘটনার ভার সইতে না পেরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তিনি এসে আম্মার কাছে জানতে চাইতেন, সে কেমন আছে? আমার নাম নিতেন না। (বোখারি)। মনোমালিন্যের মাঝেও স্ত্রীর খোঁজখবর রাখতেন।

সাধ-আহ্লাদকে গুরুত্ব প্রদান : একটি মেয়ে ছোটকাল থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত মা-বাবার কাছেই বড় হয়। বিয়ের পরে সবচেয়ে আপন মা-বাবাকে ছেড়ে সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা পরিবেশে তাকে থাকতে হয়। এ মুহূর্ত তার জন্য অনেক কষ্টের। অনেক বেদনার। সুতরাং স্বামীর উচিত তার সাধ-আহ্লাদ, শখের প্রতিও সম্মান দেখানো। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বান্ধবীদের সঙ্গে পুতুল খেলতাম। তিনি ঘরে এলে বান্ধবীরা ভয় পেয়ে যেত। তারা লুকিয়ে পড়ত। কিন্তু নবীজি নিজেই সরে গিয়ে তাদের খেলার সুযোগ করে দিতেন। নিষেধ করতেন না। (আদাবুল মুফরাদ)।

নির্মল বিনোদন : নবীজি (সা.) তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন! কী আশ্চর্য? খেলাধুলা করতেন! পৃথিবীর আর কোনো ধর্মে এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে? হ্যাঁ, এটা শুধু ইসলাম ধর্মেই পাওয়া যাবে। স্ত্রীর সঙ্গে কখন কোথায় কীভাবে আচরণ করতে হবে, কখন শাসন আর আদর করতে হবে তা নবীজির জীবনীতেই পাওয়া সম্ভব। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা আছে, একবার নবী (সা.) আমাকে বললেন, চলো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আমরা দৌড়ালাম। আমি তার চেয়ে এগিয়ে থেকে দৌড় শেষ করলাম। কিছুদিন পর আমার স্বাস্থ্য একটু ভালো হলে, তিনি আবার প্রতিযোগিতা দিতে বললেন। এবার তিনি জয়ী হলেন। মুচকি হেসে বললেন, এটা সেটার বদলা। শোধবোধ! (আবু দাউদ)।

আদর করে নাম বদল : স্ত্রীকে আদর করে অন্য নামেও সম্বোধন করা সুন্নত। নবীজি তার বিবিদের আদর করে অন্য নামে সম্বোধন করতেন। অবশ্য তা স্ত্রীর ভালো লাগতে হবে। অন্যথায় তা জায়েজ হবে না। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.) কে বললাম, আমি ছাড়া আপনার আর সব স্ত্রীদের একটি করে কুনিয়াত (উপনাম) আছে। তখন নবীজি আমার কুনিয়াত দিলেন, উম্মে আবদুল্লাহ। (আহমাদ)।
শারীরিক আঘাত না করা : এবার হাত উঠানোর কথা বলি। নবীজি (সা.) কি তাঁর কোনো বিবির উপর হাত তুলেছেন? নবীজির পরে কি সাহাবায়ে কেরাম বা আমাদের বড়রা কখনও স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছেন? তোলেননি। তারা তো আসমান থেকে নেমে আসা কোনো ফেরেশতা ছিলেন না। মতের অমিল হয়েছে। ঝগড়াও হয়েছে। মনোমালিন্য চলেছে
অনেক দিন। কিন্তু হাত তোলেননি। আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) সারা জীবনে একবারের জন্যও কোনো স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেননি। বরং ঘরে প্রবেশকালে তার পবিত্র চেহারার মুচকি হাসির স্নিগ্ধতা লেগেই থাকত। (নাসাঈ)।
পুরুষদের একটু সতর্ক হয়েই চলতে হবে। স্ত্রীর সঙ্গে বুঝেশুনে আচরণ করতে হবে। কারণ স্বামী ভালো নাকি মন্দ এর সার্টিফিকেট স্ত্রীর কাছ থেকে নেয়া হবে। স্ত্রী যদি বলেন, তার স্বামী ভালো (স্ত্রীকেও নেককার হতে হবে।) তবে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, সে ভালো আর মন্দ বললে তাই লেখা হবে। তোমাদের মাঝে সে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম বলে বিবেচিত। (তিরমিজি)।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়