সাদিয়া নাসরিন : সাত নভেম্বর। মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস। তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবের নামে ১৯৭৫ সালের এদিনে শুরু হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। জেলখানার ভেতরে ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকা-ের দায়ে তৎকালীন আর্মি চিফ জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করেন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তারা। জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার জন্য তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবের নামে এদিন প্রথমে হত্যা করা হয় বীর সেনা অফিসার মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, কে এন হুদা বীরউত্তম এবংএ এটি এম হায়দার বীর বিক্রমকে।
এই তথাকথিত ‘সিপাহী বিপ্লবে’র কথা আসলেই চলে আসে ইতিহাসের মহাঘোর থেকে খনন করা অমীমাংসিত চরিত্র, এক ভুল শুদ্ধের রক্তপাত মেলানো নায়ক কর্নেল তাহেরের কথা, যিনি সাপকে বিশ্বাস করে বুকে টেনে নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ‘বন্ধু’ জিয়াকে মুক্ত করার এক প্রশ্নবিদ্ধ অভ্যুত্থানের। কিন্তু ঐতিহাসিক গোখরা জিয়ার বিষাক্ত ছোবলে এই আবেগী বিপ্লবী, একজন ক্রাচের কর্নেলকে দিতে হয়েছিলো বন্ধুকে বিশ্বাস করার সর্বোচ্চ দাম। জীবন বাঁচানোর প্রতিদানে জিয়া গোপন সামরিক আদালত বসিয়ে প্রহসনের বিচার সাজিয়ে ফাঁসি দিয়েছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম বীর সেনানায়ক কর্নেল আবু তাহের, বীর উত্তমকে (২১ জুলাই ১৯৭৬, ভোর চারটা)।৭ নভেম্বর তাই এক আবেগতাড়িত বিপ্লবীর মানবিক খুন হওয়ার দিনও। বিপ্লবীকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর আজকের বাংলাদেশ খুঁজছে।
তবু ইতিহাস মনে রেখেছে উচ্চারণ সেই অমোঘ বাণী ‘নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর কোনো বড় সম্পদ নেই। আমি তার অধিকারী। আমি আমার জাতিকে তা অর্জন করতে ডাক দিয়ে যাই।’ ‘বিপ্লব’ কখনো পেছন ফিরে দেখে না তাই এই মাটিকেই মুক্ত করতে জীবনবাজি রাখা সম্মুখ সমরের অকুতোভয় সুর্য সন্তানদের রক্তে লাল হয়ে যাওয়া এই মাটি সে বিপ্লবের সেদিন বিরোধীতা করেনি বরং আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছে যে প্রতিটি সফল বা অসফল বিপ্লবের একদল ‘বেনিফিশীয়ারি’ থাকে। সেই বেনিফিশিয়ারিরা জিয়ার হাত ধরে দেশকে কোথায় টেনে নামিয়েছে ইতিহাস তার সাক্ষী। যতোদিন ৭ নভেম্বরের নাম ইতিহাসে উচ্চারিত হবে ততোদিন জিয়াকে নিয়ে কর্নেল তাহেরের শেষ উক্তিটিও মনে রাখবে বাংলার মানুষ, ‘জিয়া শুধু আমার সঙ্গেই নয়, বিপ্লবী সেনাদের সঙ্গে, সাত নভেম্বরের অঙ্গীকারের সঙ্গে, এককথায় গোটা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমাদের পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। আমাদের জাতির ইতিহাসে আর একটাই মাত্র এ রকম বিশ্বাসঘাতকতার নজির রয়েছে, তা হচ্ছে মীর জাফরের।’ ৭ নভেম্বর মানে জিয়ার অন্য নাম মীরজাফর। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :