শাহীন খন্দকার : রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষকেই এখন ঘর গৃহস্থালির বর্জ্য নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। বাসাবাড়ি থেকে সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বর্জ্য পদ্ধতিও নিরাপদ নয়। এসব বর্জ্য সড়কের অলিগলিতে যেখানে- সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। এতে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে । সেই লক্ষ্যে ঘর গৃহস্থালির বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন । এই বিদ্যুৎ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পর দ্বারা পরিচালিত হবে ।
এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তাদের।
এদিকে সম্প্রতি সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বলা হয়, বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগই নের্তৃত্ব দেবে। বিশ্বের উন্নত দেশের মডেলের অনুসরণে এ প্রকল্পে ইনসিনারেশন ( ক্ষতিকর বর্জ্য ধ্বংস করা ) পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ হলে রাজধানীর নির্ধারিত যে কোনো স্থানে স্থাপন করা হবে ইনসিনারেশন প্লান্ট। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এ উদ্যোগে বিনিয়োগ করলে তারাও উৎপাদিত জ্বালানি বিক্রির মুনাফার অংশীদার হবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে এই জ্বালানি কিনতে হবে। এ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এর কার্যক্রম শুরু হবে ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে। এরপর রাজধানীর নিকটবর্তী পৌরসভা এবং পর্যায়ক্রমে সারাদেশের আওতায় আসবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, 'গৃহস্থালির ক্ষতিকর সব বর্জ্য ইনসিনারেশন পদ্ধতিতে ধ্বংস করা হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা বর্জ্য ধ্বংসে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন। সিটি ও পৌর কর্তৃপক্ষ বর্জ্য পৌঁছে দিয়ে তাদের এ কাজে সহায়তা করবেন।'
মন্ত্রী বলেন, এ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় শুধু সিটি করপোরেশনে নয়, গ্রামেও বর্জ্য বেড়েছে। গোটা দেশে যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলে নদ-নদী ও খালবিল ভরাটের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এগুলো দুর্গন্ধ ও রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তাই এখন সারাদেশের গৃস্থালির বর্জ্যের দৈনিক নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা জরুরি।
ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। বর্জ্য ধ্বংসের প্লান্ট এবং সিটি ও পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি নিয়ে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। বিনিয়োগকারীদের কীভাবে বর্জ্য দিয়ে সহায়তা করা যাবে, তা নিয়েও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব গেছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়।
সিটি ও পৌর কর্তৃপক্ষ জমির পাশাপাশি বর্জ্যগুলো প্লান্টে পৌঁছে দিবে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করলেও এ-সংক্রান্ত একটি পথনকশাও তৈরি করা হচ্ছে। কারণ জায়গা সরকারের হলেও নিজ উদ্যোগে বিনিয়োগ করবে তারা। থাকবে বিদ্যুৎ বিভাগ মুখ্য ভূমিকায়। কারণ বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও উৎপাদিত বিদ্যুৎতের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :