সানমুন নিশাত: রজনীকান্তের নাম শিবাজি রাও গায়কোয়াড়। তবে তিনি জনপ্রিয় রজনীকান্ত নামেই। তামিল ছবির এই সুপারস্টার এক সময় খাবার জোগাড়ের জন্য নানা ছোটখাটো কাজ করেছেন। - আনন্দবাজার
উপার্জনের জন্য একসময় অনেক কিছুই করতে হয়েছে তাকে। কখনো কুলি হয়ে জিনিসপত্র বয়ে দিয়েছেন, কখনো বাসের টিকিট কেটেছেন কন্ডাক্টর হয়ে। আর আজ তিনি অন্তত ৪০০ কোটি রুপির মালিক।
থালাইভা রজনীকান্তের জন্ম ১৯৫০ সালে বেঙ্গালুরুর এক মরাঠি পরিবারে। মা সারাদিন সংসারের কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। আর বাবা রামোজি রাও ছিলেন পুলিশের কনস্টেবল।
চার ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন রজনীকান্ত। ১৯৫৬ সালে রজনীকান্ত যখন সবে ছয় বছরের তার বাবা চাকরি থেকে অবসর নেন। ছয়জনের সংসারে পেনশনের টাকা দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে বাবা রামোজির।
সপরিবারে বেঙ্গালুরু শহর ছেড়ে কাছেই হনুমন্থনগর বস্তিতে ঘর বেঁধে থাকতে শুরু করেন তারা। খুব কম বয়সে মাকে হারিয়েছিলেন রজনীকান্ত। মায়ের মৃত্যুর পর তাদের সংসার দেখার মতো কেউ ছিল না। পরিবারটা প্রায় ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল।
বেঙ্গালুরুর একটা সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন রজনীকান্ত। তারপর তার দাদা তাকে রামকৃষ্ণ মঠে ভর্তি করে দেন। ছোট থেকে ক্রিকেট, বাস্কেটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল, কিন্তু অভিনয়কে সে ভাবে ভালোবাসতেন না। রামকৃষ্ণ মঠেই তার অভিনয়ে হাতেখড়ি।
সংসারের টানাপড়নে স্কুল পাশ করেই রজনীকান্ত চাকরির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কখনো কুলিগিরি কখনো কাঠের মিস্ত্রি হয়ে কাজ করেন। তারপর বেঙ্গালুরু ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের বাস কনডাক্টরের কাজ পান।
এ সব কাজ করা কালীন মাঝে মধ্যে বিভিন্ন পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয় করতেন রজনীকান্ত। তবে অভিনয়ে জনপ্রিয় হওয়ার আগে বাস কন্ডাক্টর হিসাবে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
রজনীকান্ত যে রুটের বাসের কন্ডাক্টর ছিলেন, সে বাসটা ধরার জন্য অনেক সময় মানুষ অপেক্ষা করতেন। কারণ, রজনীকান্ত বাসের মধ্যে টিকিট সংগ্রহের সময় নিজের ইউনিক স্টাইল দেখিয়ে যাত্রীদের বিনোদন দিতেন।
বাস কন্ডাক্টরের চাকরি করার সময় রজনীকান্ত কবি ও লেখক টপি মুনিয়াপ্পার পৌরাণিক কাহিনিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। সে সময় তিনি অভিনয়টা আরো ভালো করে শেখার জন্য মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।
কাজ ছেড়ে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্তে বাড়ির লোকদের একেবারেই সায় ছিল না। সে সময় তার আর এক কন্ডাক্টর বন্ধু তাকে ভরসা জুগিয়েছিলেন। তাকে আর্থিক সাহায্যও করেছিলেন।
ফিল্ম ইনস্টিটিউটেই তামিল ফিল্ম পরিচালক বালাচন্দ্রের নজরে পড়ে যান তিনি। তার পরামর্শেই তামিল ভাষা শেখেন রজনীকান্ত। ১৯৭৫ সালে বালাচন্দ্রের ফিল্ম অপূর্বা রাগাঙ্গাল -এ প্রথম অভিনয় তার।
তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। একটার পর একটা ফিল্মের অফার পেতে শুরু করেন তিনি। ২০০৭ সালে শিবাজি ছবিতে ২৬ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে এশিয়ার দ্বিতীয় পারিশ্রমিক নেয়া অভিনেতা হন তিনি। সে বছর পারিশ্রমিকে প্রথম ছিলেন জ্যাকি চ্যান।
আপনার মতামত লিখুন :