নবনীতা চৌধুরী : ২০১৭ সালের জুন মাসের শেষদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যার পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাত্তার একরকম জোর করেই নাকি তার ওপর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ৯ বছর জেনারেল এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করে যাওয়া আওয়ামী লীগ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা কেউ সেদিন সংসদে এর প্রতিবাদ করেননি। কাজেই সংসদের কার্যবিবরণীতে কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই নতুন এক ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।
জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলে বসার পুরস্কার হিসেবেই সম্ভবত সংসদে দাঁড়িয়ে কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই এরশাদ অনুযোগ করেন, জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ক্ষমতা গ্রহনের পরেও নাকি শুধু শুধুই তাকে স্বৈরাচার বলা হয়। এই নতুন ইতিহাস যে মিথ্যাচার, সাম্প্রতিক সময়ের এমন মিথ্যা ইতিহাস যে সংসদে লিপিবদ্ধ হওয়া উচিত নয়, এই কথাগুলো আমার টক শো রাজকাহনে বলবার জন্যে এরপর দুই সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত আমাদের, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে প্রথম সারিতে থাকা আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ, বামপন্থী দলগুলোর নেতাদের ফোনের পর ফোন করে যেতে হয়। নানা হিসাব-নিকাশ শেষে কেউ এই নিয়ে টিভিতে কথা বলতে রাজি না। কারও এরশাদ নতুন মিত্র, কারও সমস্যা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বলাতেই, কেউ আবার এরশাদকে কথা বলার যোগ্যবিষয়ই মনে করেননা। কিন্তু যে রাজনীতিকরা তাকে স্বৈরাচার বলতেন, তার অবৈধ ক্ষমতাগ্রহণের অবসান চাইতেন তাদের কাউকে ছাড়া এই আলোচনা কী করে করি! তখনো আমাদের প্রিয় মঈন উদ্দীন খান বাদল ভাইয়ের শরীরটা ভালো থাকে না। বাদল ভাই শুধু ভীষণ খুশি হয়ে গেলেন এই বিষয়টা কথা বলা উচিত ভেবেছি জেনেই।
এরপর তিনি সে দফায় সেরে ওঠার পর, এরশাদের ইতিহাস রচনার প্রায় দুই সপ্তাহ পরে তবেই আমরা রাজকাহনে এই নিয়ে কথা বলতে পেরেছিলাম। বাংলাদেশের মানুষ সাংবাদিকের কাছে সত্য জানতে চান, ঠিক ইতিহাস শুনতে চান। কিন্তু ৮২ সালের এরশাদের ক্ষমতাগ্রহণ তো দূরের কথা, আমরা সাংবাদিকরা জানি, সাম্প্রতিক সময়ের ১/১১ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন কোন বিষয়েই যুক্তি, বুদ্ধি, নিজের দেখা এবং দর্শন থেকে সত্য বলা এবং বিশ্লেষনের সাহস রাখা মানুষের সংখ্যা কী ভীষণ কম আমাদের সমাজে! এমন সমাজে সত্যের চাষ হয় না। আমার মতো আরও অনেক মানুষ ঘাড়ত্যাঁড়া একরোখা আপনাকে মিস করবে বাদল ভাই। টক শোয়ের টেবিলের বাইরে আপনাকে চিনতাম না। কিন্তু আমার মনে হয় নিজের বিশ্বাস, কর্ম, ভুল, আদর্শ সবকিছুর স্বচ্ছ ব্যাখ্যা নিয়ে একরকম আনএপোলজেটিক জীবন কাটিয়ে ঘাড়টা সোজা রেখে মরে যেতে পারার জন্য আপনি একটা লাল সালাম পেতেই পারেন কমরেড।
আপনার মতামত লিখুন :